X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচন

আনিস আলমগীর
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:১০

আনিস আলমগীর আগামীকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশন করে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। তার গেজেট নোটিফিকেশনও প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশন মেনে নিয়েছে। বিএনপি অন্য চারজন কমিশনারকে মেনে নিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়টি নিয়ে মহাত্মা গান্ধী স্টাইলে ‘না গ্রহণ না বর্জন’ নীতি অবলম্বন করেছে। সরাসরি প্রত্যাখান করেনি।
সন্দেহ নেই তারা হুদা কমিশনের অধীনেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কারণ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ না করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। তখন তারা তাদের প্রতীক ‘ধানের শীষ’ও হারাতে পারে।
নির্বাচনের এখনও দু’বছর বাকি আছে। এরমধ্যে অনেক সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন হবে। মাঝে মাঝে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনও হতে পারে। এসব চলমান নির্বাচনে হুদা কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা দক্ষতা প্রমাণের সুযোগও পাবে। আশা করি নির্বাচন কমিশন দৃঢ়ভাবে নিজের সত্য ও সততার কাছে সৎ ও সত্যবান থাকবেন। হুদা কমিশনকে মনে রাখতে হবে তারা যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন সেই শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটি খুবই স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার কাজ করে। এটি রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আবার তাতে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষও রয়েছে। অভিযোগ উত্থাপনের ব্যাপারে সবাই এক ধর্মাবলম্বী। সুতরাং গুনে গুনে পদক্ষেপ দিতে হবে,  যেন কোনও কাজে বিতর্ক সৃষ্টি না হয়।
আগামী কয়েকদিনের মাঝে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরপুর কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন হবে। জাতীয় পার্টি তার মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তারা উপযুক্ত লোককে প্রার্থী করেছে। আওয়ামী লীগও যথা সময়ে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। বিএনপি বলেছে, তারা এ সরকারের অধীনে কোনও জাতীয় নির্বাচন করবে না।
বিএনপি অনুরূপ বাড়াবাড়িতে না যাওয়াই উত্তম হতো। বিএনপি বিপ্লবী পার্টি নয়, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনই তার শেষ ভরসা। একটা জাতি বিধি-বিধান নিয়ম-শৃঙ্খলার মাঝে চলে সে নিয়ম শৃঙ্খলাকে চর্চার মধ্য দিয়ে ত্রুটিহীন করা হয় আর মজবুত ভিত্তিও প্রদান করা হয় চর্চার মধ্য দিয়ে। নিজের খেয়াল খুশি মতো গ্রহণ বর্জন স্বেচ্ছাচারিতা। যাক, তারা যেহেতু মূল নির্বাচনে অংশ নেয়নি উপ-নির্বাচন বর্জনের খোঁড়া যুক্তি থাকতেই পারে।
জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের কারণে সুন্দরপুরের উপ-নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যদি বয়সের ক্লান্তি এড়িয়ে মনযোগী হন তবে তার প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনা খুব কঠিন হবে না।
এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হতো। তখন শেখ হাসিনা বা বেগম জিয়া ক্ষমতায় যাননি। এখন তিন জনকেই দেশের মানুষ ক্ষমতায় দেখেছে। সুতরাং তিনজনকে তুলনা করা দেশের মানুষের জন্য সুবিধা হয়েছে। ‘স্বৈরাচার’ শব্দটা মনে হয় এখন অর্থ হারিয়ে ফেলছে। গড়পত্তা হয়ে গেছে।

পুরনো লোকদের মুখে শুনেছি শেরে বাংলার মুখই নাকি ছিল তার বড় দুশমন। এরশাদেরও তাই। আন্দাজে না বুঝে সব কথা বলে বেড়ান। এরশাদ স্থির চিত্ত হলে গত নির্বাচনেই তিনি একটা অবস্থান সৃষ্টি করতে পারতেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি যদি নমিনেশন দিয়ে যথাযথ নির্বাচন করতেন তবে আজকে তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি মজবুত অবস্থানে থাকতো এবং তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃত হত।

২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদ খালেদার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারতেন যদি তিনি নির্ভয় ও দৃঢ়চিত্তের নেতা হতেন। নির্বাচন নিয়ে এতো বিতর্কও সৃষ্টি হতো না। তিনি আগামী নির্বাচনে তিন শ’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে একটা শক্তিশালী ভিত্তি প্রদানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবেন-  দেশের মানুষ এখন তাই কামনা করে।

বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার কথা বলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সুপ্রিম কোর্টই অসাংবিধানিক বলে নাকচ করে দিয়েছেন। দুনিয়ার বহুদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রচলিত রয়েছে। সে রীতিনীতিকে অনুসরণ করে আমাদের শাসনতন্ত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবস্থার বিধান সংযোজিত হয়েছে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হবে।

আবার শুনলাম বিএনপি বলছে তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তারা নাকি অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন প্রধানমন্ত্রী চায়। এখন এসব বিষয় তো আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করবে- তারা প্রধানমন্ত্রী বদলাবে কিনা। অবশ্য আওয়ামী লীগ সুস্পষ্টভাবে বলেছে যে তারা শাসনতন্ত্রকে অনুসরণ করেই সব কিছু করবে। শাসনতন্ত্রের বাইরে তারা যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থার মধ্যে যদি বিএনপি নির্বাচন করতে সম্মত হয় তবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী মানতে আপত্তি উত্থাপন করাটা ব্যক্তিগত রেষারেষির পর্যায় গিয়ে পড়ে। এটাকে সন্দেহ পরায়নতা বলে গণ্য করা যায় না।

২০০৪ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আর বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী তখন শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। তখন ২৪ জন লোক ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছিলো। আর জর্জ মিঞাকে প্রধান আসামী করে পুলিশি তদন্তের চার্জশিটও প্রদান করা হয়েছিলো। সম-মর্যাদার একজন লোকের সঙ্গে উপহাস রসিকতা মনে হয় বেশি হয়ে যাচ্ছে- এখন বিএনপির সে রসিকতা বন্ধ করা উচিত।

বিএনপিকে যদি আগামীতে ক্ষমতায় আসতে হয় এই বিশ্বাসও জাতিকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে দিতে হবে যে তারা ক্ষমতায় আসলে দেশে ২০০১ সালের মতো হিন্দু নির্যাতন করবে না, আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাড়িঘর পোড়াবে না। তাদের সহযোগী জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধে রামদা নিয়ে বেরুবে না, রগ কাটবে না। আস্থা ও বিশ্বাসের এই পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারে যেই বসুক, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হবে। ক্ষমতার পালা বদলও অসম্ভব।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বহু নরবলি জাতি দেখেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও ‘ছড়িয়ে আগুন দাবানলসম তার সঙ্গে কোলাহল’- বিএনপির সৃষ্ট এমন কোনও পরিস্থিতি, কোনও নিষ্ঠুরতাই জাতি সহ্য করবে বলে মনে হয় না। জন জীবনের নিরাপত্তাকে সিঁড়ি বানিয়ে আর কেউ যেন ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা না করেন,  কেউ যেন ক্ষমতায় না থাকেন- জনগণ সেটাই চায়।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ