X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়োস্কোপের নেশা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৯ মার্চ ২০১৭, ১২:০৮আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১২:১৩

কিন্তু এতসব কিছুর পরও কেউ কেউ শুধু নাটকই দেখেন দেশজুড়ে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান কোথায় গিয়ে নামলে এমন ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে কোনও দল বলতে পারে যে, এসব হলো সরকারের সাজানো নাটক। সাংস্কৃতিক মানসম্পন্ন সভ্য-ভব্য মানবিক রাজনীতি কোথায় হারিয়ে গেলো?

জঙ্গিদের সঙ্গে যাদের আদর্শের মিল রয়েছে এবং জঙ্গিদের প্রতি যাদের রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে তাদের অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সামরিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই একে যুক্তিগ্রাহ্য করার জন্য জঙ্গি সংকট দেখানোর আয়োজন করেছে সরকার’। দেখা যাক এই অভিযোগের যৌক্তিকতা কোথায়। একটা সমঝোতা স্মারকের জন্য জঙ্গি ইস্যু তৈরির প্রয়োজন আছে কি? বাংলাদেশ তো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতা করেছে। তখনতো এসব নিয়ে এসব নিয়ে কথা ওঠেনি। ক’দিন আগেই বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে এবং দুটিই এসেছে চীন থেকে। বিএনপি নেতারা এ নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। কারণ, সেই রাজনীতি, ভারত বিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যা জঙ্গিবাদকেই প্রকারান্তরে উসকে দেয়। জঙ্গিবাদ উসকে দিয়ে সরকারের লাভ নেই, বরং ক্ষতি আছে। উল্টো দিক দিয়ে সরকারকে অস্থির করে তুলতে জঙ্গি তৎপরতার রাজনৈতিক ফায়দা কারা পাবে, তার অংক নিশ্চয়ই কোন কঠিন কাজ নয়।

হলি আর্টিজানে মর্মান্তিক হামলার সময় যে সংকট সৃষ্টি হলো, তখন দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য না দিয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য বেশি দিয়েছে যা এখনও অব্যাহত আছে। কেন জঙ্গিদের মারা হচ্ছে, কেন অভিযানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মারা যায়নি এমন প্রশ্ন তুলেছে দলটি। দলীয় রাজনীতি ভালো জিনিস, দলীয় স্বার্থরক্ষাও ভালো, কিন্তু কূপমণ্ডুকতা ও প্রতিক্রিয়াশীর রাজনীতি উত্তরণের দিশা নয়। ভ্রষ্ট রাজনীতির চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে দেশ ও মানুষের জন্য রাজনীতিতে ফিরে না এলে, ক্ষমতায় বসেও স্বস্তিতে থাকবে না কোনও দল। পাকিস্তানে যারা তালেবানি রাজনীতিকে সমর্থন করেছে, জঙ্গিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে, তারাই পরবর্তীতে তাদের জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে। 

সিলেট শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকার আতিয়া মহলে জঙ্গিগোষ্ঠীর শক্ত অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে তাদের ভিত অনেক গভীরে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে এই অভিযানে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে হয়েছে এবং তাদের পাঁচদিন লেগেছে এদের খতম করতে। জঙ্গিদের শক্তি সম্পর্কে যে ধারণা নিয়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সে তুলনায় তাদের শক্তি অনেক বেশি। কাছাকাছি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযানের সময়ে জঙ্গিদের পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা ও আত্মঘাতী বোমা হামলার পথ বেছে নেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে তারা নিজেদের শক্তি–সামর্থ্য ও অবস্থানের জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

যারা বায়োস্কোপ দেখে বা যারা নাটক বলে তারা তা দেখবে এবং বলবেই। কিন্তু সরকারের কাজ সরকারকে করতে হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানের কোনও বিকল্প নেই। এদের শক্তি–সামর্থ্যকে কোনও অবস্থাতেই  হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আবার একথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু শুধু অভিযান চালিয়ে দেশের মধ্যে গেড়ে বসা জঙ্গিবাদকে নির্মূল করা যাবে না। মানুষকে, বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গি ভাবাদর্শ থেকে ফিরিয়ে আনার যে কথা প্রধানমন্ত্রী স্বাধিনতা দিবসে বলেছেন সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডির‌্যাডিকালাইজেশনের বড় উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক শক্তির জাগরণই পারে জঙ্গি নির্মূল করতে এবং এদের সহযোগীদের বায়োস্কোপের নেশা ছাড়াতে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ