X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবারই জয় হয়েছে কুমিল্লায়

মোস্তফা হোসেইন
০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১২:১০আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১২:২৯

মোস্তফা হোসেইন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বহুল আলোচিত নির্বাচন হয়ে গেলো।  মনিরুল হক সাক্কু ধানের শীষ মার্কা নিয়ে লড়াই করে বিজয়ী হলেন।  তার বিজয় বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিল নতুন করে।  আগেরবারও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।  অবশ্য বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে।  এবার বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষকেই সাক্কুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।  ফলে কেউ মনে করতেই পারে, এই বিজয় ধানের শীষের।  ভঙ্গুর সাংগঠনিক শক্তির যে খুটা দেওয়া হত বিএনপিকে সেই অভিযোগটা কি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? কুমিল্লার বিজয় দেখে এমন প্রশ্নটা স্বাভাবিক।  বিএনপি মোটেও সেদিকে যাচ্ছে না।  তাদের কথা- বিএনপি দলীয়ভাবেই বিজয়ের ভাগিদার।  সেখানে ধানের শীষই বিজয়ী।  যেমন নারায়ণগঞ্জে নৌকার।
কুমিল্লার হিসাবটা একটু অন্যরকম।  আওয়ামী শিবিরে দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব বারবার আওয়ামী বিরোধীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।  এটা পৌরসভা কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই নয়, জাতীয় নির্বাচন এমনকি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনেও স্পষ্ট।  বহুবছর আগে অধ্যাপক খোরশেদ আলমের মৃত্যুর পর কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে তা দড়ির প্যাঁচ এর মতো শুধু পেঁচিয়েই যাচ্ছে।  দুই ক্ষমতাধর ব্যক্তি আফজাল খান ও বর্তমান এমপি বাহার সাহেবের সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক।  দলীয় কিংবা জাতীয় স্বার্থ তাদের কাছে কোনও সময়ই গুরুত্বপূর্ণ নয়।  এর খেসারতও দিতে হচ্ছে দলকে।  কর্নেল আকবর হোসেন জীবিত থাকাকালে যতবার তিনি এমপি হয়েছেন সবসময়ই তিনি আওয়ামী লীগের চেয়ে কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।  আর বেশি ভোট পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি কুমিল্লায়।  সেটা ভোট ভাগাভাগির কারণে।  কুমিল্লা পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনেও সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেটাও আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের কারণে।  এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেছে এমন বলার সুযোগ নেই।
নির্বাচনি আচরণ বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।  সেই সুযোগটি নিয়েছেন স্থানীয় এমপি বাহার সাহেব।  দলীয় সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দেওয়ার পরও তাই এমপি সাহেবের কর্মীদের কমই মাঠে দেখা গেছে।  এর মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হওয়ায় তরুণ আওয়ামী লীগারদের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি হয়েছে।  যার পরিণতি শুভ হয়নি।

কুমিল্লার নির্বাচন দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে।  তাই এটা বলার সুযোগ নেই দ্রুত নির্বাচন হওয়ার কারণে কোনও দল সময় পায়নি।  নির্বাচন সিডিউল ঘোষণার পরও আওয়ামী লীগের এই ‘কাইজ্জা-ফ্যাসাদ’ মিটিয়ে এককাতারে আসার নির্দেশনা ওইভাবে আমাদের চোখে পড়েনি।  শুধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেবের একটা ধমক ছাড়া।  কিন্তু নেতার এই ধমক কতটা আন্তরিক এমন প্রশ্নও কিন্তু আছে।  কারণ আগেও কেন্দ্র থেকে এমন দুচারটা বাক্য ব্যয় করা হয়েছে কুমিল্লার দুই শক্তিধর নেতার প্রতি।  কিন্তু তাতে তাদের পরিবর্তন হয়নি কখনও।  আর ফলগুলোও তেমনি হয়েছে।

এবার কুমিল্লা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়কে কি বিশ্লেষণ করা হবে? যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে- দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি প্রার্থীর পারিবারিক পরিচিতিও নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।  যদিও বর্ষিয়ান নেতা আফজাল খান মেয়ের সাফল্যের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েছেন নিজের শারীরিক সমস্যা থাকার পরও।

আওয়ামী লীগের এই পরাজয়ই যে শেষ নয় এমন আলামতও দেখা যাচ্ছে।  এতদিন কুমিল্লার মানুষ কুমিল্লায় আওয়ামী লীগকে এবি লীগ নামে আখ্যায়িত করতো (এ= আফজাল, বি- বাহার) ।  কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষে কর্মীদের মধ্যে বহুধা বিভাজনের মানসিকতা দেখা যায়।  বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্ত্রী লোটাস কামাল ও হুইপ মুজিবুল হককেও দোষারোপ করার প্রমাণ পাওয়া যায়।  তার মানে এতদিন আওয়ামী লীগের পরিচিতি ছিল এবি লীগ হিসেবে এখন তা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।  এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ যে কুমিল্লাতে দুর্বলতর অবস্থানে চলে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।  দুই শক্তিধরের কারণে যেখানে কুমিল্লায় বিজয়  সেখানে আরও ভাগ যদি হয়ে যায় তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে।

অন্যদিকে বিএনপি পল্টন অফিসে বসে টিভি ক্যামেরার সামনে গলাবাজি করে দল পরিচালনা করার যে কৌশল চালাচ্ছেন তা আর সম্ভব হবে না।  এক্ষেত্রে কুমিল্লায় তাদের বিজয়কে উদাহরণ হিসেবে দেখার সুযোগ কম।  সাক্কুর বিজয় যে ধানের শীষেরই বিজয় নয়, আশা করি সেই বিষয়টি তাদের ভাবতে হবে।  আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব সেখানে চোখে পড়ে দুটি ভাগের নেতাই সেখানে প্রভাবশালী এবং নিজেদের গ্রুপে দলীয় কর্মীদের আধিক্যের কারণে।  কিন্তু বিএনপি সেখানে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।  তাদেরও দলীয় কোন্দল স্পষ্ট।  একদিকে নেতাদের পরিচিতি স্বল্পতা অন্যদিকে তাদের বহুধা বিভক্তি বিএনপিকেও এখানে বিপাকে ফেলে রেখেছে।  সুতরাং আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কারণে তাদের খুব বেশি উল্লসিত হওয়ার সুযোগও নেই।

তবু সত্য হচ্ছে- কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।  যে কারণেই হোক না কেন- জনগণই ভোট দিয়েছে।  তারা যে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিতে পেরেছে সেই বিজয়টাতো তাদেরই।  নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার সময় থেকেই বলে আসছিল, তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে।  কোনও চাপেই তারা মাথা নত করবে না।  জাতীয়তাবাদী দলের অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা এবং শাসকদলের কর্মীকে গ্রেফতার করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারাও প্রমান করেছে তারা দায়িত্ব পালনে ছিল সৎ ও আন্তরিক।

প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন প্রশ্নবিদ্ধ কোনও নির্বাচন তিনি চান না।  সরকারের প্রভাব না খাটিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ায় সরকারও জয়ের ভাগিদারতো অবশ্যই।  এক্ষেত্রে বিএনপি’র অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় সরকারি দলেরও বিজয় হলো বলা যায়।  ফলে আমরা বলতে পারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কেউ হারেনি।  বিজয় হয়েছে কুমিল্লাবাসীর প্রকারান্তরে গণতন্ত্রেরও।

লেখক- সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ