X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সেমিস্টারের পক্ষে ছয় যুক্তি

স্যার ফজলে হাসান আবেদ
০৪ মে ২০১৭, ২৩:১৭আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১২:৪১
image

স্যার ফজলে হাসান আবেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক স্তরে বিদ্যমান তিন সেমিস্টার ব্যবস্থার বদলে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে মতামত চেয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত কারণে স্নাতক পর্যায়ে তিন সেমিস্টার ব্যবস্থা সুবিধাজনক:
০১. যথাসময়ে স্নাতক সম্পন্ন করা
বছরে তিন সেমিস্টার ব্যবস্থার পক্ষে প্রাথমিক কারণ হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি সম্পন্ন করার আবশ্যিক শর্ত পূরণের সুযোগ করে দেওয়া এবং যথাসময়ে তাদের স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করা।
বাড়তি সেমিস্টারের ব্যয় বহন করা কষ্টকর, শুধু এমন শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়; বরং এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়ার ক্ষেত্রেও একটি মৌলিক উপাদান। এটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হওয়া এবং ভর্তি হওয়া সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
০২. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন-চালিত
দ্বিতীয়ত, আয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বছরজুড়ে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন-চালিত। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন পর্যায়ে না পৌঁছায়, যেখানে টিউশন ফি’র ওপর নির্ভরতা অতিক্রমের জন্য আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ যথেষ্ট বড় হয়; ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে।
বছরে দুই সেমিস্টার ব্যবস্থায় আনুমানিক ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সুযোগ-সুবিধা অব্যবহৃত থেকে যাবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে। দুই সেমিস্টার ব্যবস্থায় শুধু সপ্তাহের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রকৃতপক্ষে, একক কোর্সের জন্য সপ্তাহ বৃদ্ধির নির্দেশনার সঙ্গে গুণগুত মান নিশ্চিতকরণ এবং কর্মক্ষমতার মতো বিষয়গুলো যুক্ত আছে।
০৩. বেতন কাঠামো
তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা যেন স্থানচ্যুত না হন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্টাফ ও ফ্যাকাল্টি যেন চুক্তিভিত্তিক বা মৌসুমিকর্মীতে পরিণত না হন, সেজন্য বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে। বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটবে। এতে তার দৈনন্দিন মৌলিক ও আনুষঙ্গিক চাহিদার ব্যয় মেটানো দুঃস্বপ্নের মতো একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এটা কোনও সন্তোষজনক বেতন কাঠামো হবে না।
কিছু ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টিকে তাদের নিয়মিত দায়িত্বের (ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা ও ভাইবা, সেমিস্টার গ্রেডের তথ্য যুক্ত করা) বাইরে নানা কাজ সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের মাত্রাতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে।
০৪. সময়সূচি নির্ধারণে বিশৃঙ্খলা
চতুর্থত, বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হলে এর ফলে সময়সূচি নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হবে। একজন শিক্ষার্থী এক সেমিস্টারে সাধারণভাবে সহজে যে পরিমাণ কোর্স নিতে পারে, এক সেমিস্টারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যতগুলো কোর্স পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক যে পরিমাণ কোর্স পাঠদান করতে পারেন এবং একটি কোর্সের জন্য সপ্তাহের যে পরিমাণ সময় বরাদ্দ থাকে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন বছরে দুই সেমিস্টার চালু করা হলে, তা সবার জন্যই চরম হতাশাজনক অবস্থা তৈরি করবে।
দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীকে চার বছরে ১৩০-১৫০ ক্রেডিটের মধ্যে তার স্নাতক সম্পন্ন করতে হবে। তাকে প্রতি সেমিস্টারে ছয় থেকে সাতটি তিন-ক্রেডিট আওয়ার কোর্স নিতে হবে। এতে গড়পড়তা শিক্ষার্থীদের একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে। এর ফলে নৈপুণ্য বা কৃতিত্বে ভাটা পড়বে। ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা প্রতি সেমিস্টারে আরও অধিক সংখ্যক কোর্স পড়াবেন এবং মানের অবনতি হবে। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় একটি সংকট ব্যবস্থাপনাকালীন অবস্থায় থাকবে। যেসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যম্ভাবীভাবে একটি বা একাধিক কোর্সের পুনরাবৃত্তি করতে হয়; এখানে তাকে হিসেবে নেওয়া হয়নি। অধিকতর ভালো ফলের জন্য আকাঙ্ক্ষা বা খারাপ ফলের কারণে অনেকে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি করে থাকেন।

০৫. সময়ের অপচয়
পরিশেষে, বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সময়ের অপচয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সপ্তাহের যে দিনগুলোতে ক্লাস থাকে না সে দিনগুলোতে পার্ট-টাইম কর্মসংস্থানের কোনও সুযোগ নেই। দুই সেমিস্টার ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে ফলপ্রসূ বা সৃজনশীল কাজের সুবিধার অভাবের কারণে তারা অপ্রত্যাশিত বা সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়তে পারে।
০৬. বিশ্রামের জন্য ইতোমধ্যেই যথেষ্ট সময় আছে
২১ দিনের বাধ্যতামূলক সরকারি ছুটি, শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত অবসর সময় পায় (বছরে ১২৫ দিন)। উপরন্তু, দুটি সেমিস্টারের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকে। তিন সেমিস্টার ব্যবস্থায় দুই শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি সময়ে দুই সপ্তাহ (১৫ দিন) বিশ্রামের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। অতএব, শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি বা স্টাফদের বিশ্রাম/অবকাশের জন্য দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা ন্যায়সঙ্গত নয়।
সামগ্রিকভাবে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিকোণ থেকে দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হওয়া যৌক্তিক নয়।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, ব্র্যাক।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ