X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি কি পারবে?

শান্তনু চৌধুরী
২৬ জুলাই ২০১৯, ১৫:৫০আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৯, ১৫:৫৯

 

শান্তনু চৌধুরী বিএনপি একের পর এক বিভাগীয় সমাবেশ করে যাচ্ছে। সবশেষ ২০ জুলাই করলো চট্টগ্রামে। ২৯ জুলাই রাজশাহীর রাজপথে বিভাগীয় সমাবেশ করার ঘোষণা আছে। এর আগে তাদের বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করতে হয়েছিল বলেই এই ঘোষণা। ১৮ জুলাই বিকেলে বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের ঈদগাহ ময়দানে বিএনপি যে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে, তাতে জনতার উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। চট্টগ্রামেও একই। মামলা, হামলা বা ভয়ের পরও উপস্থিতি ছিল অনেক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম বড় ধরনের সমাবেশের আয়োজন করলো জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। কিন্তু অনলাইন ও টেলিভিশন সংবাদমাধ্যম আর কিছু বিএনপি ঘরনার সংবাদমাধ্যম ছাড়া মূলধারার পত্রিকাগুলোতে সেভাবে প্রচার পায়নি দুটো সমাবেশই। সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে যতটা জেনেছে, এই সমাবেশে মূলত আঞ্চলিক নেতাকর্মীরা যেটা চেয়েছে সেটা হলো আগামীতে ‘কঠোর কর্মসূচি’। ১৮ মাস ধরে কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলেও বিএনপি কার্যত কতটা জনগণকে সংগঠিত করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় কিন্তু থেকেই যায়। কারণ, অতীতের চেয়ে বর্তমান বাস্তবতা অনেকটাই কঠিন। সময় পাল্টেছে, পাল্টেছে মানুষের চাহিদা বা আন্দোলনের ধরনও।  

ব্রাকেটে রেখে মির্জা ফখরুলের দুই সমাবেশে বলা কথাগুলো আরও একবার স্মরণ করতে চাই। ‘গ্রামে গ্রামে গিয়ে সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। এই সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একটা বাজেট দিয়েছে, ট্যাক্স, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানো। পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকা, প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বাড়ছে। খবরের কাগজ খুললে ধর্ষণ আর ধর্ষণ ছাড়া কোনও খবর নেই, শুধু হত্যা আর হত্যা। আদালতও হত্যা থেকে বাদ যাচ্ছে না। মেগা প্রজেক্টের নামে, মেগা উন্নয়নের নামে তারা নিজেদের পকেট বোঝাই করছে। মানুষের কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না।’

মির্জা ফখরুলের এই কথাগুলো যে একবর্ণও মিথ্যা নয় সেটি সবাই জানেন। কিন্তু টানা ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিএনপি নিজেদের পক্ষে জনগণকে মাঠে নামাতে পারেনি শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক চাওয়াগুলোর কারণে। এবারের সমাবেশের বিষয়ও কিন্তু তার বাইরে নয়। ‘দলীয় প্রধানের মুক্তি ও তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি’। বিএনপি এর আগে যতবার কথা বলেছে, সবসময় দলীয় প্রধান, উপ-প্রধানসহ নেতাকর্মীদের নানা বিষয় নিয়ে। সাধারণ মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনও বিষয়ে তাদের মুখে কথা কমই শোনা গেছে। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টে এখন ভাঙনের সুর। আন্দালিব রহমান পার্থর বিজেপি চলে গেছে, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নানা অভিযোগ চাপিয়ে দিয়ে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গ ত্যাগ করেছে। নির্বাচন পরবর্তী সাত মাসে ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্বই নেই। মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অসমাপ্ত বৈঠক ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়নি। সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি চরমভাবে বিপর্যস্ত। মাঠে হোক বা বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতি হোক, কোনোটাতেই তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। কারণ, বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও বিএনপি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সরকারের ওপর জনসাধারণ খুব বেশি সন্তুষ্ট সেটা বলা যাবে না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সন্তুষ্ট। মানুষের ক্ষোভ রয়েছে, অনেকে হয়তো সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার বদলও চান। কিন্তু বিএনপি সরকারের অজনপ্রিয়তার কোনও সুযোগও নিতে পারেনি। আগেরগুলো বাদ দিলে সম্প্রতি ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনার রিফাত হত্যা, কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়া, বাজেটসহ জাতীয় কোনও ইস্যুতে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দাঁড়ায়নি। আসলে অতীতেও দেখা গেছে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করার মতো কালচারই বিএনপির তৈরি হয়নি। এখন বিএনপি সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে হয়তো। ঐক্যফ্রন্ট যা আছে নামকাওয়াস্তে। তাই তাদের সমাবেশ এখন শুধুমাত্র ‘বিএনপির সমাবেশ’।

মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন। এরশাদ থেকে শুরু করে বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব দলেরই রাষ্ট্র পরিচালনা তারা দেখেছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার যা করছে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর চাইতে ভালো কী হবে তার কোনও সুস্পষ্ট রূপরেখা তারা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। তাই অনেক ক্ষুব্ধ জনগণের এমন মন্তব্যই স্বাভাবিক, ‘এখন আওয়ামী লীগ খাচ্ছে, বিএনপি এলে তারা খাবে। সাধারণ মানুষের যেই লাউ সেই কদু।’এই যেমন একটি উদাহরণ যদি দেই, বিএনপি বাজেট নিয়ে জনসভায় কথা বলছে। যেটি বলছে সেটি অনেকটাই গৎবাঁধা কথা। যেটি আমরা সবসময় শুনে থাকি। ‘এই বাজেট গরিব মারার বাজেট, এই বাজেট বাস্তবায়ন হবে না’ ইত্যাদি। কিন্তু বিএনপি তো একটা ছায়া বাজেট দিতে পারতো। জনগণের কাছে মন্দ দিকটা তুলে ধরার উদ্যোগ নিতে পারতো। তা তারা করেনি। মনে হয়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে এবং অনেকটা নেতৃত্বহীন থাকা দলটির মধ্যে পরস্পরের বাঁধন আলগা হয়ে গেছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সেটি অবশ্য স্বাভাবিকই। কারণ, ক্ষমতা হচ্ছে মোটিভেশন। সেটি প্রত্যাশিত ব্যক্তিকে যতটা সুবিধা দিতে পারবে ক্ষমতার বাইরে থেকে সেটা সম্ভব নয়। তাই বাড়াতে হবে জনসম্পৃক্ততা।

বিএনপি বলে থাকে, তাদের রাস্তায় নামতে দেয়া হয় না, সমাবেশের জায়গা পাওয়া যায় না। মাইক লাগাতে দেয় না, প্রশাসন অনুমতি দেয় না, দিলেও নানা শর্ত দেয়। সত্যিকার অর্থে এসব প্রতিবন্ধকতা আগেও যেমন ছিল এখনও আছে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরমধ্যে থেকেও কাজ করতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’ এই মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সবকিছু করতে হবে জনগণের স্বার্থ কতটুকু সেটা দেখে। জনগণ তাতে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে সেটা মাথায় রেখে। কারণ, ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনও আন্দোলন বা ব্যক্তিস্বার্থে আন্দোলন জমবে না। বিএনপিকে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। থাকতে হবে জনগণের জন্য আগামীতে ক্ষমতায় এলে কি থাকছে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক  

 

 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ