X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সংসদীয় পদ্ধতির স্থানীয় সরকার

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:১০আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:১৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাস্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলে আছে ইউনিয়ন পরিষদ। সেই নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবং পৌরসভার মতো দলীয় প্রতীকে। স্থানীয় পর্যায়ের ভোট উৎসবের সূচনা হয়েছে, চলছে প্রচার প্রচারণা। স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচন সফল করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ভোটারদের ভয়ভীতিহীন পরিবেশে ভোট দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সম্প্রতি সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে আমরা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো দেখিনি।
আগে রাজনৈতিক পরিচয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও রাজনীতি এখানে ছিল। আর এবারতো সরাসরি রাজনীতি নিয়ে আসা হলো। স্থানীয় নির্বাচনে রাজনীতির ভূমিকা এক সময় বড় ছিল না, ছিল গ্রহণযোগ্য মানুষের গুরুত্ব। কিন্তু দলীয় প্রতীকে হোক বা না হোক, অনেকদিন থেকেই রাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও। স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতির সম্পর্ক এখন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বাস্তবতা।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে, বিষয়টি এখন বিধিবদ্ধ। যেভাবে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা বা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতো, সেগুলোর সবই শুধু নাম ছাড়া বাস্তবে দলভিত্তিক প্রতিযোগিতাই ছিল। দলই মনোনয়ন ঠিক করে, দলই সাংগঠনিকভাবে দলীয় মনোনয়নধারীর পক্ষে প্রচারকাজে নামে, ভোটারদেরও একটি বড় অংশ দলীয় আনুগত্য অনুসারে ভোট দেন এবং নির্বাচিত ব্যক্তিরা দলীয় বিবেচনা ও স্বার্থে তাদের কাজ পরিচালনা করেন।
সরকারি দলের লোকজন বলছেন, এতে করে তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তৈরি করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বলছেন, সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পাননি তারা জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের একটি বড় সুবিধা হলো- দলীয়ভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছে না, ফলে দলে শৃঙ্খলা রক্ষা, দলের একাধিক নেতার স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমবে। দল থেকে একাধিক নেতা প্রার্থী হলে তা ভোটারদের সংশয়ে ফেলে কাকে তারা ভোট দেবেন। কিন্তু শুধু মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তিনিই হয়ে উঠছেন দলের একমাত্র প্রতিনিধি। বাকিদের তিনি মনে করতে পারেন দলের কেউ নন। দলীয় প্রতীক যখন বাস্তবতা, তখন বাকি পদগুলোতেও নির্বাচন সেভাবেই হওয়া প্রযোজন হয়ে পড়েছে।
আমরা আশা করতে চাই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। কিন্তু এদেশে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার রেকর্ড বিরল। বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলেও পরবর্তীতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে আবার বিতর্ক জন্ম নিয়েছে। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি যেমন বলছে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও বলছেন যে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সরকার থেকে আলাদা করা যায় না। তাই বিশ্বাস স্থাপনের কাজটি করতে হবে কমিশনকেই।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাজনীতির ধরণ কী হবে তা নিয়ে ভাবনা জরুরি। আগেও যা বলেছি, তা এখনও আবার বলতে হচ্ছে যে, শুধু চেয়ারম্যানকে বা মেয়রকে দলীয়ভাবে এনে তাকে স্থানীয় পর্যায়ে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এক নতুন সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আমাদের দেশে বরাবরই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কাঠামোয়। অর্থাৎ দলীয় হোক বা না হোক চেয়ারম্যান/মেয়রই সকাল ক্ষমতার উৎস। বর্তমান পদ্ধতি বিদ্যমান রেখে দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হলে বাস্তবে তৃণমূলের রাজনীতি যেমন খুব একটা বদলাবে না, তেমনি স্থানীয় জনগণও শুধু কিছু নতুন রাজনৈতিক মুখ ছাড়া কিছু দেখবে না। তাই সরকারকে আইন পরিবর্তন করে এ কাঠামো বদলে সংসদীয় কাঠামো করতে হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় পদ্ধতিতে চলছে প্রতিটি স্তরের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। যখন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করবে, তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
কোনও নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে হলে তা পুরোপুরি দলীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সংশোধিত যে আইনটি করেছে, তার অনেক সংশোধনী প্রয়োজন। মেয়র বা চেয়ারম্যানরা দলীয়, অথচ কাউন্সিলররা নির্দলীয়। এমন এক ব্যবস্থায় যিনি ক্ষমতাসীন দল থেকে মেয়র/চেয়ারম্যান হবেন, তিনি আসলে কাউকে ভূমিকা রাখার কোনও সুযোগ দেবেন কিনা, সেই সংশয় থেকে যাচ্ছে। দলীয়ভাবে কাউন্সিলর হলে কে কোন দলের তা বোঝা সহজ হতো জনগণের জন্য। যদি মেয়ের/চেয়ারম্যানের কোনও সিদ্ধান্ত পছন্দ না হয়, তাহলে তারা কি অনাস্থা আনতে পারবেন তার বিরুদ্ধে? না, তেমন প্রথা রাখা হয়নি। রাখা হলে সেটাই হতো ক্ষমতার ভারসাম্যের সবচেয়ে বড় সুযোগ। এখন পদ্ধতিটা এমন যে তাতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাজ পছন্দ না হলে তাকে কিছু করাও যাবে না। একই অবস্থা পৌরসভার ক্ষেত্রে, উপজেলার ক্ষেত্রে।
স্থানীয় নির্বাচন অনেক দেশে দলীয়ভাবে হচ্ছে এবং হয়তো এক সময় বাংলাদেশেও এর সুফল আসবে। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি পরিবর্তন না করা যায়, তাহলে কোনও নির্বাচনই উৎসবমুখর হবে না। স্থানীয় পর্যায়ের উপযুক্ত লোক যদি নির্বাচনে কোনও কারণে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে এসব নির্বাচনে শুধু দল করে, পেশী আর অর্থ শক্তি আছে এমন বাস্তবতায় দলেরও অনেক যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে না। দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি আশা করতে চাই অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই স্থানীয় সরকারের উপর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দাপটও কমবে অনেকখানি। অন্যথায় সুশাসনের চেয়ে পথ প্রশস্ত হবে অপশাসনের।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ