X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘৭ মার্চ ভাষণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ মার্চ ২০২১, ২১:১১আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২১, ২১:৩৬

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পাকিস্তানিদের দালালি, তোষামোদি ও চাটুকারিতা ভুলতে পারেনি বলে অনেকে এখনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা বা নির্দেশনা খুঁজে পান না। বাংলাদেশের মানুষ যা বোঝে এরা তা বোঝে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাষণের পর তখন এরা বঙ্গবন্ধুকে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।’

সোমবার (৮ মার্চ) ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এর তাৎপর্য বুঝেছিল

সরকার প্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। যেদিন এ ভাষণ দেওয়া হয় সেদিন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাষণটি জায়গা করে নেয়। ব্রিটিশ সাংবাদিক জ্যাকব আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক ভাষণের ওপরে যে গবেষণা করেন সেখানেও এটি স্থান পেয়েছে। কিন্তু এ দেশে ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিল অনেক দিন। আমাদের দেশের নির্বোধরা এর তাৎপর্য না বুঝলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এর তাৎপর্য ‍ও গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল।’

অনেকে এ ভাষণকে ছোট করতে চায়

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘অনেকে এ ভাষণকে ছোট করতে চায়। এই ভাষণটাকে নিয়ে... আমি শুনলাম আমাদের বিএনপির কয়েকজন নেতা এর মধ্যে, কয়েকজন আছে যারা হয়তো একসময় ছাত্রলীগ করেছিল, পরে আবার ছেড়ে চলেও গিয়েছিল, বহু কিছু আছে এবং মানে...যাই হোক। তারা নাকি এই ভাষণে স্বাধীনতার কোনও ঘোষণাই পায় নাই। আমার মনে হলো একটা কথা, আমি আমার নেতাকর্মীদের এটা বলতে চাই। এরা পাবে না। কারণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও পায়নি। তারা অনেক খুঁজেছে। আমার মনে হচ্ছে এরা যেন সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদেরই পদলেহনকারী, খোশামোদি, তোষামোদির দল। কাজেই তারা (পাকিস্তানি জান্তারা) যা বোঝে এরা তা-ই বোঝে। কিন্তু বাঙালি যা বোঝে এরা তা বোঝে না। বাংলাদেশের মানুষ যা বোঝে এরা তা বোঝে না।’

বোম্বিং করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল

জাতির পিতার দেওয়া ৭ মার্চের ভাষণের সময়ের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি শাসকরা, তাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। তারা খুব সাজসাজ রব নিয়ে সাঁজোয়া বাহিনীসহ বসে ছিল। সেখানে হেলিকপ্টার, প্লেন রেডি ছিল যে বঙ্গবন্ধু কী ভাষণটা দেন এবং তার ওপর তারা আক্রমণ করে এই মাঠে যারা আছে সবাইকেই ওপর থেকে বোম্বিং করে হত্যা করবে। এটা একটা প্রস্তুতি নিয়েছিল। এটা পাকিস্তানি এখানে যারা তখন অপারেশন চালাচ্ছিল তাদের লেখা বইতেও কিন্তু এটা প্রকাশ পায়। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তিনি তো ‘পোয়েট অফ পলিটিক্স’। তিনি আসলে রাজনীতির কবিই ছিলেন। তিনি জানতেন যে মানুষের কাছে কথাটা কী ভাষায় বললে সাধারণ মানুষ কথাটা বুঝে নেবে। কিন্তু শত্রুদের বুঝতে সময় লাগবে। যেকোনও একটা যুদ্ধে রণকৌশলটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই রণকৌশলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনা, এটাই হচ্ছে সেই যুদ্ধে যিনি নেতৃত্ব দেন তার সব থেকে বড় কৃতিত্ব। আর সেটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করেছিলেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণের কথা দেশের মানুষ বুঝে নিয়েছিল এবং তার প্রতিটি অক্ষর মেনে চলেছিল। আর একজন বোঝেননি, যিনি সিরাজুল আলম খান। একসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, “৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর দেশের মানুষ খুশি হয়ে আনন্দে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান দিতে দিতে বাড়ি ফিরছিল। আমরা ভাষণ শুনে বাড়ি ফেরার পথে ফুলার রোডে উৎফুল্ল জনতা আমাদের থামিয়ে তাদের সঙ্গে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান দিতে বাধ্য করেছিল।’

লিডার আপনি কী বললেন?

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘দেশের মানুষের সঙ্গে স্লোগান দিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে সেখানে কয়েকজন ছাত্রনেতাকে দেখি। সেখানে সিরাজুল আলম খান তখন বঙ্গবন্ধুকে বলছেন, লিডার আপনি কী বললেন? সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের আব্দুর রাজ্জাক সাহেব থেকে শুরু করে অনেকেই ছিলেন। ঠিক তখনই আমি বাড়িতে ঢুকেছি। সেই সময় শুনি এই কথা বলছে। বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, আপনারা এরকম মিথ্যা কথা বলছেন কেন? আমি তাকে নিজেই বললাম, আপনি এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? আপনারা তো মাঠ থেকে অনেক আগেই চলে এসেছেন। আপনারা তো মাঠের অবস্থা তাহলে জানেন না।‘ তিনি বঙ্গবন্ধুকে তাদের কথা বিশ্বাস করতে নিষেধ করেন বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং সেদিনের তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এরা আসলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালি নিয়েই ছিল। এখনও তারা দালালি, তোষামোদি, চাটুকারিতা ভুলতে পারেনি। সে কারণে তারা ভাষণ বুঝতে পারেনি। কিন্তু বাংলার মানুষ ঠিকই বুঝেছিল। তারা আনন্দে খইয়ের মতো ফুটছিল।’

জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চে হত্যাকাণ্ড চালায়

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষণের দিন সারাদেশে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। যারা এ ব্যারিকেড বিশেষ করে চট্টগ্রামে ব্যারিকেড যারা দিচ্ছিল তাদের অনেককেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান গুলি করেছিল। শুধু তা-ই নয়, জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চেও এমন হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৬ মার্চ রাতে জিয়া সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে যাচ্ছিল। সেদিন যাতে অস্ত্র জাহাজ থেকে নামাতে না পারে সেজন্য সংগ্রাম পরিষদ, ছাত্র-জনতা বাধা দিয়েছিল। যে বাঙালির ওপরে গুলি চালানোর অস্ত্র নামাতে যাচ্ছিল, জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেছে, সেই দলের এরা ৭ মার্চের ভাষণ বুঝবে না তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৬ তারিখ দুপুর থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান সাহেব বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রচার করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণায় যুদ্ধ প্রস্তুতি, কৌশল বলেছিলেন। আর সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কীভাবে কী করতে হবে, কীভাবে রসদ সংগ্রহ করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা বারবার প্রচার করছিলেন। সেটা আরও ব্যাপ্তির জন্য সে সময় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী কোনও সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে এ ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। মেজর রফিকুল ইসলামকে আহ্বান জানানো হলেও তখন তিনি যুদ্ধের অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। তার জায়গায় জিয়া এসে ঘোষণা দেয়।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তখন জিয়া একজন মেজর ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এসে তাকে মেজর জেনারেল বানান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলেই তাকে এ সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু তার চরিত্র বদলায়নি। কারণ, তার জন্ম পাকিস্তানে, পড়াশুনাও পাকিস্তানে। চাকরি সূত্রে এ দেশে এসে বিয়ে করে থেকে যায়। বেইমানি-মোনাফেকি করেছে। সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মূল হোতা। যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, তাদের কাছে এ দেশের মানুষ কী আশা করতে পারে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় এনেছি। মানুষ খাবার পাচ্ছে, শিক্ষাসহ অন্যান্য সুযোগ বাড়ছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। কিন্তু এসব তাদের পছন্দ নয়। কারণ, তাদের কাছে ক্ষমতা ছিল ভোগের বস্তু। টাকা ও সম্পদ বানিয়েছে। বিলাস-ব্যাসনে জীবনযাপন করেছে। ইতিহাস বিকৃত করেছে। কাজেই ওরা কী বললো সেটা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই।’

বিএনপির সব নেতা টিকা নিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতারা টিকা নিয়ে কত কথা বলেছে, অপপ্রচার করেছে। অথচ তারা সবাই টিকা নিয়েছে। কাজেই তারা তো কত কথাই বলবে।’

জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে উঠতো বলে আক্ষেপ করেন তার মেয়ে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাকে সময় দেওয়া হয়নি। এরপর দেশ ছিল অন্ধকারে। এখন আওয়ামী লীগ এসেই দেশের কাজ করছে। জাতি হিসেবে আমাদের উন্নত মর্যাদা ফিরে আনার চেষ্টা করছি। বঙ্গবন্ধু যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার সরকার সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।’

এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্ত থেকে এ সময় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তব্য দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশেষ অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে তার স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।

 

/এমএইচবি/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা