অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যারা গেলেন, তাদের সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা যখন তাদের আবাসনের জন্য গেলো, তখন আপনারা তাদের উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। তিনি বলেন, আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটি আমরা জানি না। আপনাদের আমরা সমর্থন করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আপনারা রয়েছেন। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?
তিনি বলেন, পুরো দেশ অশান্তিতে ভরে উঠেছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আপনারা সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মতো দেশ চালাবেন? কিন্তু ওই যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়ে পালিয়ে গেছে, তাদের মদত দেওয়ার অনেক শক্তি রয়েছে এবং তারা দিচ্ছে। সুতরাং, ডানে বামে সবদিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। না হলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনও আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদের কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।
রিজভী বলেন, আজ ৫ আগস্টের পর এক পরিবর্তিত পরিস্থিতি। আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক- ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি, তরুণ ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসের মধ্যে চলছে, রক্ত ঝরছে। এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, সব বিরোধীদলীয়, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা সমর্থন করেছেন। তাহলে এখন কেন লাশ পড়বে? গত পরশু দিন রাত ১২টায় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। কী অন্যায় করেছিল সাম্য? আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে তাহলে সাম্যকে কেন হত্যা করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সংগীতের পক্ষে—তাদের জীবন চলে যায়। আমি এ জন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক কারণ আছে।
পুলিশকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদের গ্রেফতার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিতো—যদি সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন- আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, তেমনি আরও ঘটনায়ও নেননি। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জানুয়ারি মাসেও তফাজ্জল নামে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তি, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা ড. আওয়ালসহ উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের নেতারা।