X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাপের মুখে এফবিআই

বিদেশ ডেস্ক
১৮ মার্চ ২০২১, ১৬:২০আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২১, ১৬:২০
image

আটলান্টার বন্দুক হামলার ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ান-আমেরিকান সম্প্রদায়। হামলায় নিহত ৮ জনের ৬ জনই এশীয় নারী। এশিয়ান আমেরিকান কমিউনিটি নেতারা বলছেন, তাদের জনগোষ্ঠীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে যে বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং তা অবহেলা করা হয়েছে। এই ধরণের ঘৃণাবাদী ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশের ব্যর্থতার জন্যও সমালোচিত হচ্ছে এফবিআই এবং অন্যান্য পুলিশি সংস্থাগুলো। তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে তিনটি বডি ম্যাসাজ পার্লারে বন্দুক হামলা চালানো হয়। এক বন্দুকধারীর ওই হামলায় ছয় এশীয় নারীসহ অন্তত আট জন নিহত হয়। আহত হয় আরও পাঁচ জন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গুলিবর্ষণের কয়েক ঘণ্টার মাথায় সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এশিয়ান আমেরিকান কমিউনিটি নেতারা বুধবার ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন দীর্ঘকাল ধরেই এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বৈষম্য এবং হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। ন্যাশনাল এশিয়ান প্যাসিফিক আমেরিকান উইমেন’স ফোরাম (এনএপিএডব্লিউএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক সাং ইয়োন চোমিরো বলেন, ‘এই বিষয়ে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এক দিনে ছয় জন এশীয় আমেরিকান নারীকে জীবন দিতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এশিয়ান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাবাদী অপরাধের রেকর্ড রাখার পরিমাণ কম কারণ আমাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং হয়রানির বিষয়গুলো স্বীকারই করা হয় না।’

২০১৯ সালে এফবিআই-এর ঘৃণাবাদী অপরাধের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মোট চার হাজার ৯৩০ জন  নিজেদের বর্ণ কিংবা নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের জন্য আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ এশীয় বিদ্বেষের শিকার, ৪৮.৫ শতাংশ কালো বর্ণ বিদ্বেষ আর ১৪.১ শতাংশ স্প্যানিশ বিদ্বেষের শিকার। তবে এই পরিসংখ্যানে আমেরিকায় ঘৃণাবাদী অপরাধের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি বলে মনে করেন অনেকেই।

১৯৯০ সাল থেকেই দেশটিতে একটি কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রয়েছে। যাতে ঘৃণাবাদী অপরাদের রেকর্ড রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। তবে ওই আইনে পুলিশ বাহিনীকে রেকর্ড রাখতে বাধ্য না করায় তা কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। ফলে ৯০ শতাংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০১৯ সালে ঘৃণাবাদী অপরাধের একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেনি। নাগরিক অধিকার কর্মীরা এই পরিস্থিতিকে অবিশ্বাস্য মনে করেন। এছাড়াও ফেব্রুয়ারিতে একটি কেন্দ্রীয় প্রতিবেদনে বলা হয় ৪০ শতাংশ ঘৃণাবাদী অপরাধের কথা কখনওই কর্তৃপক্ষের সামনে আসে না।

ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের কর্মকর্তা মাইকেল জার্মান বলেন, ‘আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে ঘৃণাবাদী অপরাধের প্রকৃত চিত্রও নেই। গত বছর কতগুলো ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে তা এফবিআই বলতে পারবে, কিন্তু তারা পক্ষপাতের অপরাধের সত্যিকার মূল্যায়ন জানাতে পারবে না।’ তিনি জানান, বিচার বিভাগের এক জরিপ অনুযায়ী ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুই লাখ ৩০ হাজার সহিংস ঘৃণাবাদী অপরাধ ঘটেছে। একই সময়ে ৫০টি ঘৃণাবাদী অপরাধের মামলার বিচার হয়েছে। জার্মান বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহের অভাব এবং কোন বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তার অগ্রাধিকার ঠিক করায় ঘাটতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’

সরকারি বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অভাবে এশিয়ান আমেরিকান গ্রুপগুলো নিজেদের সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে সেই শুন্যস্থান পূরণ করছেন। আটলান্টায় গুলিবর্ষণের দিনে এমন একটি গ্রুপ নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির সময়ে ৩ হাজার ৭৯৫টি মৌখিক হয়রানি, শারিরীক আক্রমণ, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য এবং অন্য ধরনের পক্ষপাতের ঘটনা ঘটেছে। গ্রুপটি বলছে, ঘৃণাবাদী যতো অপরাধ ঘটেছে তার খুবই ছোট একটি সংখ্যা এগুলো। তারপরেও এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় এশিয়ান আমেরিকানদের কত সহজে বৈষম্যের শিকার বানানো যায়।

এশিয়ান আমেরিকান অ্যাডভান্সিং জাস্টিস নামের আরেকটি গ্রুপও ঘৃণা ও হয়রানিতে আক্রান্তের ঘটনা প্রকাশ করতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। সংস্থাটির সিনিয়ার পরিচালক মারিতা এক্টাবানেজ বলেন, ঘৃণাবাদী অপরাধ প্রকাশ না করার বহু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে অনীহা এবং ভাষাগত জটিলতা। তিনি বলেন, বহু অভিবাসী সরকারের প্রতি বিশ্বাস রাখেন না আর তারা বিচার পাবেন এই আত্মবিশ্বাসও রাখেন না, আবার ঘটনা জানানোর পর প্রয়োজনে সাহায্য পাবেন এই আশাও রাখেন না।

এনএপিএডব্লিউএফ-এর নির্বাহী পরিচালক সাং ইয়োন চোমিরো বরেন মহামারির সময়ে ঘৃণবাদী ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে। তিনি নিজেও ব্যাক্তিগতভাবে এই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘শিকাগোয় নিজের বাড়ির আশেপাশে বেড়ানোর সময়ে আমিও বর্ণবাদের শিকার হয়েছি। এক ব্যক্তি আমাকে ও আমার মেয়েকে রাস্তায় ধাওয়া করে বলে, চীনে চলে যাও আর নিজেদের ভাইরাস সঙ্গে নিয়ে যাও!’

আটলান্টার বডি ম্যাসাজ সেন্টারে হামলাকারীর উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কয়েকটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃতি অনুযায়ী এটির সঙ্গে বর্ণবাদের চেয়ে যৌনতার সম্পর্ক হয়তো বেশি। গুলি বর্ষণের পর বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘উদ্দেশ্য যাই হোক, আমি জানি, এশিয়ান আমেরিকানরা খুবই উদ্বিগ্ন কারণ আমি এশিয়ান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া নৃশংসতা নিয়ে কথা বলেছি আর এটা সমস্যাজনক।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম সপ্তাহে জো বাইডেন এশিয়ান আমেরিকান এবং প্যাসিফিক দ্বীপবাসীর বিরুদ্ধে বর্ণবাদ এবং জেনোফোবিয়া মোকাবিলায় নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া ঘৃণাবাদী অপরাধের তথ্য সংগ্রহ আরও বাড়াতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেফতার
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
সর্বশেষ খবর
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
এলপিএলের ড্রাফটে চার বাংলাদেশি
এলপিএলের ড্রাফটে চার বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ