X
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
২১ আষাঢ় ১৪৩২

ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন নিয়ে ভাবছে সরকার

বাহাউদ্দিন ইমরান
১৭ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১৮আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ২০:২০

দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ না থাকা এবং আইনি কাঠামোর অভাবে ধূমপায়ীদের কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই ধূমপানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি থেকে বাঁচতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সেটার কঠোর প্রয়োগের কথা ভাবছে সরকার।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ' শীর্ষক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৩০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে তামাক ব্যবহারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। ১৫ বছর বা তার কম বয়সী ৪ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তামাকজনিত রোগে ভুগছে। এদের ৬১ হাজারেরও বেশি (১৪ শতাংশ) শিশু বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭১৮ জন। যা জাতীয় পর্যায়ে সকল মৃত্যুর প্রায় ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিং-এর চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণের বিদ্যমান আইনটি সর্বশেষ সংশোধন হয়েছে ২০১৫ সালে। এতোদিনে বদলে গেছে দৃশ্যপট। অনেকেই পাবলিক প্লেসে ধূমপান শুরু করেছে। এটা কমাতে করের হারও বাড়ানো প্রয়োজন। তাই আইন সংশোধন জরুরি। আমরা সংসদের প্রায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে তামাকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলেই মনে করছি।’

ক্যান্সার সোসাইটি ও ঢাবির গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বছরে ব্যয় বাড়ে ৪ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যক্তিগত ও সরকারি ব্যয়, অক্ষমতা/অসুস্থতার কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতি এবং অকালমৃত্যুর কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতিও অন্তর্ভুক্ত।

শিশুদের ক্ষতি বেশি

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে পরোক্ষ ধূমপানে শিশুরাই যে বেশি ক্ষতির শিকার হয়, তার প্রমাণ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকী। ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার: ঢাকা, বাংলাদেশে একটি জরিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকাতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৯৫ শতাংশ শিশু। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৭৯ শিশুর মধ্যে ৪৫৩টি শিশুর লালায় নিকোটিন পাওয়া গেছে।

বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) জানায়, আইনের মাধ্যমে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাও জরুরি। এতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি প্রতিটি বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি তথা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টের (এইচটিপি) মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন।

সামাজিক সংগঠন ভয়েস ফর ইন্টারএক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) এর প্রোগ্রাম অফিসার গুলশান আরা ঝুমুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতি বছরই শ্রেষ্ঠ করদাতা হিসেবে একাধিক পুরষ্কার পেয়ে থাকেন তামাক ব্যবসায় জড়িত সংস্থা বা ব্যক্তিরা। সেই করের কতখানি প্রত্যক্ষ কর আর কতখানি ভোক্তাদের থেকে আদায়কৃত কর তা নিয়ে ভাবনার সুযোগ থাকলেও, এই অর্জনকে পুঁজি করেই তামাক ব্যবসায়ীরা করের ক্ষেত্রে নানান সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেন। শুধু তাই না, বাজেটকে সামনে রেখে নানা ধরনের বেঠিক তথ্য ছড়িয়ে নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করে থাকেন এসব ব্যবসায়ীরা। তাই শুধু আইন সংশোধন করলেই চলবে না, তার সঙ্গে কর হার বৃদ্ধি করাটাও জরুরি।

আইনের দুর্বলতা স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটি যুগোপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আইনের দুর্বলতার সুযোগে জনসম্মুখে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এতে অধূমপায়ীরাও ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতাও বাড়ছে।

/বিআই/এফএ/
সম্পর্কিত
ঢাবির এ এফ রহমান হলে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে জরিমানা
তামাক চাষে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা, বিপন্ন টেকসই কৃষি
তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার না বাড়ানোয় জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত: বিএনটিটিপি
সর্বশেষ খবর
জয়ের পর মনিকা চাকমা বললেন, ‘আজ অনেক ভালো লাগছে’
জয়ের পর মনিকা চাকমা বললেন, ‘আজ অনেক ভালো লাগছে’
ঢাকায় উদযাপিত হলো উল্টো রথযাত্রার শোভাযাত্রা
ঢাকায় উদযাপিত হলো উল্টো রথযাত্রার শোভাযাত্রা
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে এই ৪ খাবার
বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে এই ৪ খাবার
সর্বাধিক পঠিত
জামায়াতের অনুষ্ঠানে ‘সৎ’ লোককে ভোট দিতে বলা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা
জামায়াতের অনুষ্ঠানে ‘সৎ’ লোককে ভোট দিতে বলা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড: মাহফুজ আলম
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড: মাহফুজ আলম
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আ.লীগ নেতা বাবাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আ.লীগ নেতা বাবাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ