X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামও ভালো

রাজশাহী প্রতিনিধি
২০ এপ্রিল ২০২১, ১২:১৬আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২১, ১২:১৬

রাজশাহী অঞ্চলে বছরে দুইবার ভুট্টার চাষ হয়। একবার শীতকালে ও অন্যবার গ্রীষ্মকালে। তবে শীতকালীন ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমির ভুট্টা উত্তোলন করা হয়েছে। ভুট্টার ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। রাজশাহীর চরাঞ্চলগুলোয় ভুট্টার ফলন অন্য এলাকার চেয়ে বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহীর অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী অঞ্চলে (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ) শীতকালীন ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৪৮০ হেক্টর।
রাজশাহীর পবা উপজেলার তকিপুর এলাকার কৃষক গৌতম দাস বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এ বছর পোকার আক্রমণ কম। তাই গাছগুলো অনেক তথ্য ও সতেজ দেখাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি হবে।’

ভুট্টা ক্ষেত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে ভুট্টা রোদে শুকাচ্ছিলেন কয়েকজন নারী। তারা জানালেন, জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। এটা একদিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর বিক্রি করা হয়। তাদের ভুট্টা শুকাতে দেখে এখানেই ফড়িয়ারা কিনতে আসছেন। কেনার জন্য দাম বলছেন। কিন্তু বাড়ির পুরুষকে ছাড়া তারা বিক্রি করতে পারছেন না।

গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর, বিদিরপুর, কৃষ্ণবাঢি, কাদিপুর, হরিশংকরপুর, বোগদামারী, মাছমারা, সোনাদীঘিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা চলছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলা, মেশিনে ভুট্টা আলাদা করা, ভুট্টা সংগ্রহের পর গাছ কেটে পরিষ্কার করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। ভুট্টা ক্ষেত

ভুট্টাচাষি পলাশ হোসেন বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ভালো। বাজারে দামও ভালো। এখন প্রতিমণ ভুট্টা ৭২৫-৭৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। ভুট্টা বিক্রি করে তার লাভ হবে। সকালেই তিনি বিক্রি করবেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলায় এবার গতবছরের চেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। এবছর জেলার ৯ উপজেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি ৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে হেক্টরপ্রতি ভুট্টার উৎপাদন ৮ হেক্টরের নিচে নামে না। আর বরেন্দ্র এলাকার বিল এবং পদ্মা নদীর ওপারে চরের জমিতে উৎপাদন ১২ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গোদাগাড়ীর কাদিপুর এলাকায় শ্রমিকদের নিয়ে জমি থেকে ভুট্টা তুলছিলেন রাসেল আহমেদ (৪০)। তিনি জানান, নিজের আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। শুরুতে তিন কেজি বীজ লেগেছিল। বীজের দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। জমিতে তিনবার সেচ দিতে হয়েছে, চারবার দিতে হয়েছে সেচ। এখন ভুট্টা তোলার সময় আট জন শ্রমিককে ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক দিতে হবে। সবমিলিয়ে তার খরচ প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তারপরও ভুট্টা বিক্রি করে তার ভালো লাভ থাকবে।

ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামও ভালো

ভুট্টা চাষি রাসেল আরও জানান, তার এই জমিতে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৩০-৩৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে। নিজের জমি না হলে খরচ আরেকটু বাড়তো। আড়াই বিঘা জমিতে একটা ফসল করতে জন্য ইজারা নিলে ১৩ হাজার টাকার মতো লাগতো। এই খরচ না হওয়ায় তার লাভের পরিমাণ বেশি থাকবে। এবার তাদেরও ক্ষতি হবে না। ফলন বেশি হওয়ায় সবাই লাভ করবেন।

দামপুকুর গ্রামে ভুট্টা ওজন করে বিক্রি করছিলেন রায়হান আলী (৩০)। তিনি জানালেন, ১০ কাঠা জমিতেই তার ১৫ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। জমি থেকে ভুট্টা তোলার পর থ্যাসাড় মেশিনে বীজগুলো আলাদা করা হয়েছে। তখন প্রতিমণ ভুট্টার জন্য থ্যাসাড় মালিককে দুই কেজি করে ভুট্টা দিতে হয়েছে। তারপরও সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ কাঠা জমিতেই তার ছয় হাজার টাকা লাভ থাকছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের ভুট্টাচাষি সারোয়ার শেখ জানান, চরে ৪৫-৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হচ্ছে এক বিঘা জমিতে। তবে পদ্মা পার করে ফড়িয়ারা ভুট্টা নিয়ে যান বলে তাদের এলাকায় দাম একটু কম। তারপরও ফলন বেশি হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে না।

ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামও ভালো

সারোয়ার বলেন, ‘যে লাভ হচ্ছে তাতেই খুশি। তবে আরেকটু দাম বেশি হলে আরও ভাল হতো। আমরা আরও বেশি লাভ করতে পারতাম।’
গোদাগাড়ীর পিরিজপুর গ্রামে মেসার্স জুবাইদা জামান শস্য ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুক হাসান তিতু জানালেন, চরাঞ্চল থেকে ফড়িয়ারা ভুট্টা কিনে এনে তার আড়তে বিক্রি করছেন। আর এ পারের চাষিরা নিজেরাই বিক্রি করে যাচ্ছে। এ পারের ভুট্টাও কোনও কোনও ফড়িয়া বিক্রি করছেন। এসব ভুট্টা কিনে গুদামে রাখছেন। তারপরই দেশের নানাপ্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে ভুট্টা কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। গতবছরের চেয়ে এবার ভুট্টার দাম ভালো। চাষিরা লাভ করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ও গবাদিপশু লালন-পালন বেড়েছে। আর মাছের ও গবাদিপশুর খাবার তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ছে ভুট্টার। তাই ভুট্টার চাহিদাও থাকছে সব সময়। এ কারণে দামটাও পড়ে যাচ্ছে না। চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে।

ভুট্টা ক্ষেত

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল জানান, রাজশাহীতে গেল কয়েকবছর ধরেই ভুট্টা চাষ বাড়ছে। তাই চাষিরা যেন ভালো বীজ পান, সেটা কৃষি বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়। আর ভাল বীজের কারণে ভাল উৎপাদন হয়।

তিনি আরও জানান, স্বল্প সময়ে ভালো লাভ দেখেই চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছরও ভুট্টার বাজার ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও হয়েছে ভালো। আশা করছি আগামী বছর ভুট্টা চাষ আরও বাড়বে।

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ