X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

নদীর গল্প

শামীম রফিক
০৩ মে ২০২১, ১৮:০০আপডেট : ০৩ মে ২০২১, ১৮:০০

নদীর গল্প

Stars
Are not what you see
Stars are what
You try to understand
-Collected

এক

আন্দারমানিক দুইবার দেখার সুযোগ হয়েছিলো
প্রথম বার : সকালবেলা চোখ মেলে
দ্বিতীয় বার : রাতে চোখ বন্ধ করবার পূর্বে
কোনো মিল ছিল না সকাল ও রাতের।
আন্দারমানিক আজও মনে পড়ে
কিন্তু সে তো আমার শৈশবের ব্রহ্মপুত্র নয়
বানার নদও নয়।

ব্রক্ষপুত্র যদি ষোড়শী রমণী হয়
আন্দারমানিক তবে পেশিবহুল অচেনা নাবিক
বানার যেন কৃতকর্মের মাশুল
গুনতে হয়েছে প্রতিটি ভুলে।

পেছনে তাকালে আজও বাজে জন্মের গন্ধ
তুমি কি ফিরবে লাঙলে মেখে কৃষকের ঘ্রাণ
ক্লান্ত নাবিকের মতো নিযুত অন্ধকার বুকে নিয়ে
আমিও হয়েছি ঋণী পৃথিবীর প্রতি।

ঘাটে কোলাহল, সকালের ব্যস্ততা
পতিতা রমণীরা নেমেছে গোসলে
হুইসল কাঁদছে নিথর জাহাজের বুকে—তখনও
সকলেই এসেছে নির্ধারিত রাতের স্টেশনে।

কবিরা, কবিত্ব হারালে বৃক্ষপ্রেমী হয়
বৃক্ষরা, পাতা হারালে হিসেবি হতে ক্ষতি নেই
ভালোবাসা মানে ভুল আর ভুল—বিশ্বাস নেই
ব্যর্থতা জীবনে থাকলে সম্পর্ক নদীর মতো মৃত
কেউ জানে না অবারিত নয়
এই পৃথিবীর ঋণ
নদী থেকে নদী হয়ে বিজয়ী মানুষেরা
পরাজয়ের কত গল্প লিখে
বিজয়ের অন্তরালে।

বরং এটাই সত্য হোক—আমিই একা
পদ ও পদবিতে সকলের নিচে : ক্লান্ত, ক্লান্ত এক...
তোমরাই ভাসিয়েছ বলে স্বপ্নেরা ভাসছে
এতটা কাছে। নতুবা কতটা চুপচাপ ভিতরে ভিতরে!
কিভাবে শুরু হয়
ঘুম
মানুষের?
অলিগলি গলিয়ে যায়
বেদনা দুর্দিন।

পিঠের নিচে টগবগে লাভা
চারিদিকে, চোখে-ঠোঁটে ও নিশ্বাসের সাথেও আগ্নেয়গিরি
বুকের আগুনেই মজবুত ঝিকিমিকি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড—
কিভাবে আমি শুরু করব
বিকালের ভ্রমণ, হেরেছি পূর্বাহ্নে
থালায় দোলে ওঠে বিপরীত চাঁদ
আর অদ্ভুত রঙের উৎসব
সেখানে ঘুমায় প্রতিটি ভুলের নিচে নদী
প্রতিটি দুঃস্বপ্নের নিচে নদী
মানুষ যেভাবে মুছে দেয় মানুষের চোখ
মানুষের জল
নস্টালজিক কলরব
যথোপযুক্ত প্রেম
উদাসীন ভুলের উৎসব।

যদি সীমানা নির্দিষ্ট করি আলপিনের সূচালুতায়
চিরন্তন দাঁড়পাল বলে কিছুই থাকে না
বাক্যালাপের ভেতর জলীয় ঘূর্ণি
থাকে ফলিত প্রার্থনা
নগণ্য প্রশ্নের নিচে গড়িয়ে পড়তেই থাকে
যেখানে জমেছে মেঘ
যেখান ছুঁয়ে যায় তোমার ভেজা পায়ের চারিপাশে
‘ম্যাজিক লণ্ঠন’—কি যে ভালো লাগে!
মনে হয় : এটা সত্যিই কবিতা
মনে হয় : কোনো প্রেমময় রমণী জমেছে
চায়ের কাপের অন্ধকারে,
তার তলদেশ মসৃণ
প্রশ্নের নিচে তর্ক
সংকটের সাথে জাগে শান্তির মিছিল
নিঃসঙ্গ মানুষের চোখগুলো গোলাকার হয়ে
ফিরোজা রঙের সাথে মিশে গেলে
এই আকাশ বা চাঁদের মতো সবগুলো নকশা
নদীর বুকে হামাগুড়ি দিয়ে সত্যিই ঘুমায়
সবগুলো নিঃসঙ্গ, আত্মকেন্দ্রিকতা ও আলোকিত বুক থেকে
বের হলে বিচ্ছুরিত রাস্তা গোপনেই নেমে যায় নদীর বুকে।

১৩.০৭.২০২০


দুই

Or calling me Paradise
And calling me incurious time

এলোমেলো বন্ধুর চেয়ে বধির যারা
পড়ে থাকে অন্ধকারে
তাদের সাথে তুলনা করলেই ভেসে ওঠে শৈশব
আমারও ছিল উৎসব
প্রশান্তির মেঘ
অনাগত স্বপ্নের স্বাদ বিভ্রমে আর বিদোষে
দেখাতো :
টুকটুকে লাল ডালিমের শান্ত সুবাস
আকাশের নৃত্যে বানার নদের শপথ
সে তো শুধু নদ নয়
ঘুমের আলপথ
চিত্রিত টেম্সের কাল্পিক শপথ।

দুপাশে লোভাতুর চোখের নানা আলপনা
কেন তবে বানায় দুপাড়ে একই তালে লোভের ফসিল
যেখানে বাঁচবার সৌরভ বাতাসে ভাসে
যেখানে ভাসে আর মরে পঞ্চভূতের দেবতারা
যেখানে দুই পাড় ভিজিয়ে রাখে মখমলে
মেনে নেয় অট্টালিকা ছেড়ে কঙ্কালের দাপট
যেখানে সরু ভোর শেষে শুরু হয় মানুষের প্রয়োজন
ভাঙেনি কিছুই,
যতটা খেয়েছে হায়েনার দল।

ওদের হৃৎপিণ্ড ভরে না মাতাল সৌরভে
ওরা খোঁজে না সঞ্জীবনী
পাঁজরের ক্ষতে জমেছে প্রত্যহ আঁধার
লিকলিকে সাঁকো পেরিয়ে ওপারে যায় এপারের স্বপ্ন
এপারে আসে ওপারের বিবর্ণতা
তারা মিলেমিশে বানায়; যা না বানালে আজও
ফুটতো রাঙা পলাশ, দোল খেত স্বর্ণলতা
লাল পায়ে এপার-ওপার হতো রাঙাপায়ের লাল-বধু
সাঁকো থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ত বালকেরা
তীরে বসে নিশ্চুপ বুকের খাঁচায় আঁকতাম
আফগান বালকের স্বপ্ন আর ভুলবশত গিলে নিতাম
নদীর ওপর জেগে থাকা কারুকার্যময় আকাশ।

কতকিছু বলবার ছিল
কতকিছু করবার ছিল
কিছুই হয়নি করা।

এখন আমার সলতে থেকে বের হয় ভুতুড়ে আলো
নিশ্বাসের মতো উড়ে যায় তাঁতানো স্বপ্নেরা অলক্ষ্যে
এখনো ক্রন্দন শুনি নদটার
এখন তাঁর বুকে পুকুর, বাড়ি, মসজিদ আর পাঠশালা
এখন তাঁর মৃত্যুর প্রতীক্ষা
তবুও যতটা সবুজ নুয়েছে—যতটা জলে
ওখানে জীবনের জন্য জীবন নেই ততটা
রেইনট্টির ডালে ঈশ্বর মৃত, জলহারা
খাঁ খাঁ মাঠ, মটরশুটি বা শর্ষেরা নেই
বুকে পোড়ানো আগুন সাঁই সাঁই করে উঠে যাচ্ছে
চিমনির মাথায়—
ওখানেই ছিল আমাদের স্বপ্নের আকাশ
সেও পুড়ে ছাই।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাই ব্যর্থ হয়েছে এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি: আব্দুল্লাহ তাহের
জুলাই ব্যর্থ হয়েছে এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি: আব্দুল্লাহ তাহের
ছেলের অনার্স-মাস্টার্স শেষ, এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা
ছেলের অনার্স-মাস্টার্স শেষ, এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা
৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ টন সার কেনার সিদ্ধান্ত
৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ টন সার কেনার সিদ্ধান্ত
তেলেঙ্গানায় ওষুধ কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৩৬
তেলেঙ্গানায় ওষুধ কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৩৬
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট