X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শীর শরীর

জব্বার আল নাঈম
০৪ মে ২০২১, ১৭:৩০আপডেট : ০৪ মে ২০২১, ১৭:৩০

মেয়েটি ষোলোজন পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। কামড়ে ছিঁড়েফেঁড়ে দিয়েছে স্তনদুটি, ছিঁড়ে ফেলেছে যৌনাঙ্গ। ঠোঁটে রক্ত, বুকে রক্ত, যোনিতেও বইছে রক্তের ধারা। এতে ভরাট হয়েছে খাল, নদী ও সাগর। নোনা রক্তের ধারায় শ্বাস নিতে পারছে না সামুদ্রিক প্রাণীরাও। চাইলেই মেলে না মুক্তির সন্ধান। কারণ, চারপাশ ঘিরে আছে ধর্ষক। ধর্ষিতার রক্ত ছিটিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এরা দক্ষ। ধর্ষিতার নাম দেশাই। পরিচিতরা দেশা নামে ডাকে। একটা সময় নিজেকে নিয়ে অহংকার ছিল তার। সেটা এখন আর নেই। ফুল ফোটার আগেই ঝড়ের কবলে নষ্ট হয়েছে সকল সৌন্দর্য, নষ্ট হয়েছে রূপ-যৌবনের দ্রাক্ষারস। চাইলেই মুক্তমনে হাসতে পারে না দেশা, বলতে পারে না মনে লুকানো কথা। স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা করে নিজেকে এগিয়ে নেবে, পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, দায়িত্ব নেবে শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার।

কিন্তু, বাস্তবে তা হয়ে ওঠে না। জীবনে তৈরি হয় নতুন একবাঁক। একটু একটু করে শেষ হতে থাকে তার স্বপ্ন। প্রতিদিন নতুন পুরুষদের কাছে বিক্রি হতে থাকে দেশা। বিনিময়ে এক ফোঁটা পানিতে শান্ত থাকতে হয় তাকে। ধীরে ধীরে সেই পানি পরিণত হয় রক্তপিণ্ডে। বদলে যেতে থাকে তার চেনা জগৎ, বদলে যেতে থাকে সাধ-আহ্লাদ।

দেশা এখন গর্ভবতী। কিন্তু, সে জানে না কে এর জন্মদাতা। কি হবে তার পরিচয়? কোথায় হবে আশ্রয়? কে মুখে তুলে দেবে খাবার?


কবুল আলী কমিশনার হওয়ার পর মুগদার শরীর থেকে খুলে নেয় ওড়না। মুগদাকে ওড়না ছাড়াই দেখতে ভালো লাগে। সামনে উঁচু-নিচু ঢেউ। নৃত্য করে মোহ ও মুগ্ধতার। এমন সুন্দরে কেউ কেউ আনন্দের জোয়ারে ভাসে। আর ভাসবে নাই-বা কেন? কারণ, নারীর সুডৌল বুকে ওড়না যে বড়ই অসুন্দর! কিন্তু ওড়নার মার্জিত ও রুচিশীল ব্যবহার আগে থেকেই প্রচলিত ছিল মুগদায়। হতে পারে, ধর্মীয় ও সামাজিক রেওয়াজ। বখাটের উৎপাত থেকে আত্মরক্ষারও অন্যতম উপায়। মুগদা ষোলো বছরের যুবতী। এ বয়সে যে কারো রূপ-জৌলুস উপচে পড়ে। তার চোখে রয়েছে দারুণ রকমের মাদকতা, ঠোঁটজুড়ে গোলাপি প্রলেপ। বুকের দিকে তাকালে জুড়িয়ে আসে মন-প্রাণ। এমন রূপ-যৌবন ঢেকে রাখা যায় না। সুন্দর দেখাতে হয়। এটা কবুল আলীর অঘোষিত নিয়ম।

মুগদার চুলের ফ্রেঞ্চ বেণি খুলে নেয় কবুল আলী। কারণ, বেণিতে ছিল ফুল। ফুলের নিজস্ব ঘ্রাণ থাকলেও তা চুলের নেই। শ্যাম্পুর ধার করা ঘ্রাণে চুলে আসে মাতাল মুগ্ধতা। এতে মাতোয়ারা হয় প্রবঞ্চক পুরুষ। যুবক বয়সের কথা স্মরণে আসে কবুলের। বাঁ-হাতে আলতো করে কাছে টানে যুবতীকে। প্রাণভরে নাক-মুখ ও চোখের ঘ্রাণ নেয় কবুল। সব ইন্দ্রিয় উস্কানি দেয় এক সমারোহে। জেগে ওঠে কবুল আলীর পৌরষ। মুগদাকে আরো কাছে পেতে মরিয়া তিনি। একবার মুগদাকে সঙ্গে নিয়ে দারস্থ হন মান্ডার। ক্রয় করেন জমি, গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। মুগদা-মান্ডা পাশাপাশি শুয়ে থাকা যেন জমজ বোন। একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। চোখ দিয়ে পানি ছাড়ে। দুজনই কবুলের সরল স্বীকার।


বাঁচা-মরার লড়াই। এই দলের প্রধান কবুল আলী। দলের স্লোগান—হুংকার দিলে ছাড়ুম না। প্রথমবার একাধিক আসনে লড়াই করলেও জয়শূন্য থাকেন কবুল। ধারণা ছিল, নির্বাচনে জয়ী হতে, জনগণের ভোট লাগে না। লাগে টাকা আর কয়েকজন তাগড়া যুবক। প্রতিপক্ষ কথা বলতে চাইলে, ঠান্ডা করে দেবে তাদের দফা। সবচেয়ে বেশি লাগে নারী। নারীর শরীরের ঘ্রাণ পৃথিবীর সব সুগন্ধিকে হার মানায়। কর্মীরা হয় মানসিকভাবে চাঙ্গা, শারীরিকভাবে হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কবুল আলীর বয়স হয়েছে। এই বয়সেও বাঘের মতো হুংকার ছাড়েন তিনি। পছন্দও করেন সুন্দর বনের বাঘ। বাঘ পালতে মান্ডায় বাড়ি করেন কবুল। সামনে উঁচু বিল্ডিং, পেছনে খোলামেলা জায়গা। সেখানে খাচাবন্দি দুটি বাঘ। বিপরীত পাশে দুটি কুমির। মাঝখানে হরিণ। একদিকে বাঘ অন্যদিকে কুমির এই ভয়ে সব সময় আতংকিত থাকে সুন্দরী হরিণজোড়া। হরিণ জানে, দুর্বলের ওপর সবলের আক্রমণ সবসময় ভয়ংকর হয়! তাই লড়াইয়ে নামে না বাঘ আর কুমির।

কবুল জানে রাজনীতির ভেতরে থাকে রাজনীতি, যে জিততে পারে, সে-ই পায় কর্তৃত্ব। কবুল আলীকে মুগদার কমিশনার হওয়ার প্রস্তাব দেয় ক্ষমতাসীন দল। শেষ সুযোগটি কাজে লাগান তিনি। তার কাছে এই মুগদা একটি দেশ, একজন ষোড়শী। যার সর্বেসর্বা কমিশনার কবুল আলী।


গ্রিন মডেল টাউনের রাস্তাটি মান্ডার দিকে তরতর করে বেয়ে গেছে। ঠেকেছে গিয়ে মুগদা বিশ্বরোড। বিশ্বরোডের দিকে মাথা হলেও মুগদা সায়েদাবাদমুখী। এটি বাংলাদেশের বড় আন্তঃবাস টার্মিনাল। মাঝেমধ্যে কবুলের নির্দেশে সেদিকে চোখ মারে মুগদা। পাগলপ্রায় হয়ে ছোটে আসে কামার্ত পুরুষ। চোখে চুমু দেয়। ভ্রুতে আঁকে আল্পনা। হাত বোলায় কোমল কালো চুলে। কাছাকাছি থাকে সাজানো ফুলের মওসুম। যত দেখে ততই মুগ্ধ হয়। চুলের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে বক্ষদেশের মতো কোমলতা, যা দেখার অপেক্ষায় থাকা পুরুষটিও এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে সুযোগ খোঁজে। সাঁতার দিয়ে পার হতে চায় নাভি-নদী। অথচ মূল নদীর কাছে ভিড়তে লাগে তিনদিন সময়। সংযম না রেখে তবু সাঁতারে নামে কামনায় কাতর পুরুষ। তাদের কাছে সাঁতার রোলার কোস্টারের মতোই ফ্যান্টাসি। দেয় দুঃখ ও সুখের অন্যরকম অনুভূতি। সাধারণ মানুষের অনুভূতি নিয়ে সুফল বাণিজ্য করে প্রতিষ্ঠিতরা। কবুলের ভাবনায় এমন বাণিজ্য মন্দ কিছু নয়।

একজন চোখের পরশ নেয় মুগদার। একজন নিশ্বাসের সঙ্গে নিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটায়। এতে নারীর ভেতরের সরল অলিগলি বেরিয়ে আসে সহজে। তৃতীয় জন ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁটের সংযোগ দিয়ে হাজার ওয়াটের বাতির পৌরুষ-জ্বালায়। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কবুল আলী উড়িয়ে দেয় একজোড়া সাদা কবুতর ও দলীয় পতাকা। সুশীল সমাজের প্রাজ্ঞজনরা খুশি হয় এমন দেশপ্রেমে। মিডিয়ায় আওয়াজ হয় তার পক্ষে। দুই চারজনে কবুলের পক্ষের রাজনৈতিক উদারতা ও ত্যাগের তবলা বাজায়। কবুল সেই খুশিতে শুভেচ্ছা এসএমএস পাঠান, পাঠান সম্মানীও। আরো বলেন, আমার কাছে সুশ্রী মুগদা আছে। যে আমার অনিন্দ্য সুন্দরী প্রিয়তমা। যে কেউ একবার তাকালে তার পক্ষে চোখ ফেরানো কঠিন। দাওয়াত গ্রহণ করলে অন্তত হতাশ হতে হবে না। মুগদা তাকে খুশি করাবে। জানেন তো, গভীরতায় হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ অন্যরকম। যার ঘনকালো কেশ আফ্রিকার গভীর অরণ্যকেও হার মানায়। যতই ভেতরে প্রবেশ করা যায়, দেখা মেলে সুন্দরের পসরা। আছে মরুভূমির মতো বিস্তীর্ণ বুক। উজ্জ্বল দুটি ঝরনা। পিপাসার্ত মানুষের তৃষ্ণা মেটায়। প্রিয় বন্ধু, যদি কামার্ত হও এক সন্ধ্যায় চলে এসো, আটলান্ট্রিকে ডুবে ফিরে আসার উন্মাদনায় মুগ্ধ হতে পারবে।


মুগদার বাঁ-দিকে মার্কিন স্থপতি ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম এবং বব বুইয়ের সেরা কাজ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। যা কখনই ঘুমায় না। সর্বক্ষণ থাকে সাজ সাজ রব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরেক রকমের মানুষ আসে, মানুষ যায়। এখানে প্রতিদিন বাণিজ্য হয় হাজার কোটি টাকা। মুগদাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যায় কবুল আলী। কাজ হয়ে যায় ষোড়শী মুগদার লাজুক হাসিতে। কবুলের আয়ের বড় একটা খাত এই কমলাপুর।

ছড়ানো ছিটানো চুলের মাথায় বাণিজ্যিক মতিঝিল। এটি এই অঞ্চলের অর্থনীতির পাওয়ার ভোল্টেজ। মুগদার বগলে হাত রেখে ঘুরলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া বড়ই সহজ। কবুল আলীকে কখনই হতাশ করে না মতিঝিল। বরং দুহাত ভরে দিয়েছে ধন-সম্পদ। এখানে এসে শাপলা বাগানের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন তিনি। ফিরে যান শৈশবের গ্রামে। যেখানে ছিল বিস্তীর্ণ বিল। বিলের পানিতে ভাসতে থাকা শাপলাফুল। যৌবনে একবার শাপলাফুল হাতে প্রেমের প্রস্তাব করেছিলেন প্রতিবেশী ফাতিমাকে। প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। এরপর গ্রাম ভুলে পা রাখেন শহরের সীমানায়। ফাতিমার পরিবর্তে পাখি, পান্না, আঁখি, অনন্যা ও সুন্দরী মুগদাকে পেয়েছেন। এরা সঙ্গে থাকলে ষাটোর্ধ্ব কবুলের বয়স কমে যায় অন্তত বিশ বছর। মনে ফিরে আসে তেত্রিশের যৌবন। যদিও কবুলের বহুমুখী আনন্দের উৎস একমাত্র মুগদা। যে রোদ-পানির সঙ্গে সন্ধান দেয় অর্থেরও। 

কবুল আলী তিনবেলা দেশের শরীর কেটে মাংস খায়, রক্ত দিয়ে পিপাসা মেটায়। বিনোদনের জন্য উলঙ্গ করে নান্দনিকতা। নিজ হাতে আলাদা শেপ দেয় বাঁকা চাঁদে, বুক-পাহাড়ের ঢেউয়ে ছুরি চালিয়ে আরো মসৃণ করে পথ। পাপড়িতে মাসকারার প্রলেপ বসিয়ে বাড়িয়ে তোলে চোখের সৌন্দর্য। মাকড়ির শব্দে মাতালের মতো মুগ্ধ হয় কবুল। দুলছে কানের দুল, যার মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় মহাকালের রেখায়। এমন দৃষ্টিনন্দন সুন্দর থাকলে কবুল আলীর খুশির সীমা থাকে না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেকে আরো প্রকাশ করতে পারে। 

মুখের ঠিক নিচে উঁচু দুটি টিলা। বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে বিচ্ছিন্ন সৌন্দর্য বিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। জয় করতে চায় কামুক পুরুষরা। বড় মসজিদের দুইপাশের রাস্তার ধরে বেড়ে ওঠেছে টিলা দুটি। প্রতিদিন আশপাশের দোকানিরা টিলা ছুঁয়ে দোয়া নেয়। বিনিময়ে হাজার হাজার টাকার উপঢৌকন পাঠায়। খুশিতে মুগদাকে জড়িয়ে ধরতে চান কবুল। একবার আনন্দে জড়িয়ে মা বলে চিৎকার করেছিলেন। আরেকবার প্রিয়তমা সম্বোধন করেছিলেন। একবার মুগদাকে স্ত্রী ভেবে বলেন, তোমার সঙ্গমে সন্তান পাই, শান্তি পাই। তোমার চেয়ে আপন আর কেউ নেই। তুমি আমার সোনালি ব্যাংক। দুধেল গাই। তোমার দুধে হৃষ্টপুষ্ট হয় শরীর। মুগ্ধ হয় মন। তাই তো এবাদতের মতো দিনরাত পান করি তোমাকে। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হলেও এর স্বাদে আছে দারুণ ভিন্নতা। পরিকল্পনা বসেন কবুল। দুধের ব্যবসা করবেন। প্রতিদিন এর বিক্রি থেকে নগদ অর্থ উপার্জন হবে। বাড়বে নতুন আয়ের খাত। পরক্ষণেই পরিকল্পনা আরো বাড়ে। ভাবেন দুধ দিয়ে আর কী তৈরি করা যায়? স্মরণে আসে দুধের বহুমুখী ব্যবহারের কথা। তৈরি করা যাবে, ঘি, টকদই, ক্রিমদই, ছানা, মাখন, মাওয়া, মালাই, ক্ষির, বোরহানি, চালকুমড়ার মোরব্বা ও ছানা থেকে তৈরি রসালো গুটি মিষ্টি।

মানুষ স্বাদের ভিন্নতার জন্য পোলাও এবং বিরিয়ানিতে ঘিয়ের মজাদার ব্যবহার করে থাকে। হালুয়া, মিষ্টান্ন, ভর্তা-ভাজি এমনকি মুড়িঘণ্টতেও ঘিয়ের বহুমুখি ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। এর সংরক্ষণেও নেই আলাদা ঝামেলা। ফ্রিজ ছাড়াও বায়ুরোধক পাত্রে ভালো থাকে দীর্ঘদিন। দইয়ের কথা সবাই কম-বেশি জানে। ক্রিম দই সরাসরি খাওয়া যায়, আবার মাখনও তৈরি করা যায়। টকদই দিয়ে বোরহানি বানালে ভালো কাজ করে হজমের। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মাওয়া। ব্যবহার করা হয় মাংসের লোভনীয় স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য। বিয়ে বাড়ি কিংবা বড় ধরনের উৎসব-অনুষ্ঠানে মাংস রান্নায় মাওয়া বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ। প্রতি কেজি উত্তম ঘিয়ের দাম আটশ থেকে এক হাজার টাকা। মাখন ও ক্ষিরের দাম হাজার টাকার কম না। দুধ থেকে এত ব্যবসা! মুগদার স্তন বেশ বড়। প্রতিদিন পাওয়া যাবে শত শত লিটার দুধ। এত ব্যবসা দেখে মাথা ঘোরে কমিশনার কবুলের। টকদই আর বোরহানি খেয়ে মাথাঠান্ডা করেন তিনি।


রিকশা ও ভ্যানের জটলা লেগে থাকে বাশার টাওয়ারের মোড়। বড় মসজিদ থেকে বাশার টাওয়ার পর্যন্ত নিশ্বাস ফেলার মতো জায়গা থাকে না। নদীর মোহনায় তৈরি স্রোতের মতো ঘুরতে থাকে রিকশাওয়ালারা। মহাজগতের হিসেবে এরা শ্যাওলার চেয়েও ছোট। সবমিলিয়ে এখানে ছোটখাটো কাল্পনিক ঘূর্ণন আকৃতির গর্তও রয়েছে। এ খবর জানেন কবুল। গর্তটি মুগদার নাভির মতো হুবহু আনন্দের বৈতরণী তোলে। সঙ্গেই যুক্ত উঁচু টিলা, নিচু খাল। কাটাখাল নাভির থেকে নিচের দিকে নেমে আলাদা করেছে মান্ডা ও মুগদাকে। লম্বালম্বি শুয়ে আছে মানিকনগর ও বাসাবোর ওপর। এখানে ভালো-খারাপ সব ধরনের পানি ফেলে এলাকাবাসী। অবৈধ পানির উত্তাপ-উত্তেজনায় চিৎকার ও চেঁচামেচি করে মুগদা। লাভ হয়নি, বরং যুবকদের পীড়াপীড়িতে খুলে দিতে হয় গোপন দরজা। যেদিক দিয়ে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে যৌনইচ্ছা। খোলা দরজায় নজর রাখলে স্পষ্ট হয় গেট। কবুল নজর রাখে, সেদিকে দিয়ে কে আসে কে যায়।

পাষাণের মতোই ধ্বংস রোলার চালায় পুরুষ। তাদের রসায়নে নারী ভুলে যায় বীজগণিত ও পাটিগণিত। রসায়ন গুরুত্ব না দিলে জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন। এমন সম্ভাবনার কথা কানে রেখে যারা নির্ভাবনায় রাখতে চায় মাথা, তারা অন্য ধাতুতে গড়া। ছাড়তে চায় না পদার্থবিজ্ঞান, আবার ধরতেও চায় না। নারীর মুখের দিকে একবারও তাকায় না নির্দয় পুরুষ। ভাবেও না, সে কতটুকু পারবে, কতটুকু পারবে না। মুগদার এমন সুশ্রী যৌবন দেখলে নব্বইয়ের কোটা পার করা বৃদ্ধও একনজর তাকায়, কামনার লোভে। এরপর ঘটে মহামিলন।

প্রতিযোগিতার মঞ্চে নামে তরল প্রাণ। পানিরও প্রাণ আছে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে মল্লযুদ্ধে নামে, জয়ী দলের ঠাঁই হয় যোনি-খালে। দিন-রাত, সপ্তাহ ও মাস গড়িয়ে বড় হতে থাকে রক্তপিণ্ড। যদিও অপুষ্টি ও দুর্গন্ধে বেঁচে থাকা দায়। তবুও বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ণ হতে থাকে শরীর। এত বিষ নিয়ে জয়ের বন্দরে একজনও ঠিকঠাক পৌঁছতে পারেনি এতদিন। একদিন নির্জীব স্রোতে ভেসে ওঠে এক নবজাতক।

রাস্তার দুধারে মানুষের ভিড়। দেখছে পানিতে ভেসে যাওয়া শিশু। যার চোখ তখনো ফোটেনি। অনুভব করতে পারেনি দুনিয়ার বিশুদ্ধ-অশুদ্ধ বাতাস। অথচ জীবিত। কান্না করছে। এত মানুষ থাকতে কেউ এগিয়ে আসেনি। হাঁটুপানিতে নেমে তুলে আনেনি শিশুকে। উলটো কেউ কেউ ওয়াক্ থু, ওয়াক্ থু করছে। কেউ-বা মুখে হাত চাপে, মহিলারা কাপড় চেপে ধরে নাকে ও মুখে। দুইজন বৃদ্ধ উচ্চস্বরে বলেন, দুনিয়াটা শেষ হইয় গ্যালো। পোলাপান নাপাক কাজ করে, খাল-বিলের পানিও নাপাক করছে অবৈধ সন্তান জন্ম দিয়ে! লজ্জা-শরম সব মুইছ্যা গ্যাছে। এইরকম চলতে থাকলে রাস্তায়ও নামন যাইব না। দেশ থেইক্কা নির্বাসনে যাইতে হইব আমাগ।

 

 

০৭

 

কেউ এগিয়ে আসেনি—আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় নবজাতক। পানি নাপাক হলেও শিশুটির রয়েছে একটি বিশুদ্ধ আকৃতি। মানুষের চেয়ে বড় শিল্প দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই। মানুষের আগমন মানেই আনন্দ। আবার আনন্দের বিপরীত দুঃখও রয়েছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। এক মুহূর্তের উত্তেজনা ছিটিয়ে দিলে পরক্ষণেই আবার দুঃখের মহড়ায় পতিত হতে হয়, এটাই জাগতিক নিয়ম। পৃথিবীতে কেউই পরিপূর্ণ স্বাধীন না।

হঠাৎ ভিড় ঠেলে দৌড়ে আসে মেহেদি, চিৎকার করে বলেন, আপনারা নবজাতককে কেন তুলে আনছেন না? ওকে বাঁচতে দিন। ওরও আছে বেঁচে থাকার অধিকার। ওর ভুলজন্ম হতে পারে, কিন্তু ভুল মানুষ না। পরিণত দুজন মানুষের বিনোদনের বিনিময়ে ও-কেন কষ্ট উপহার পাবে? বলেই, লাফিয়ে পানিতে নেমে গেল মেহেদি। তুলে আনে পলিথিনে প্যাঁচানো নবজাতককে। কজন এগিয়ে এসে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে সমর্থন দেন।

রাগে কবুল আলীর চোখে জমতে থাকে রক্ত। একমুহূর্ত বিলম্ব না করে ড্রাইভারকে বলেন, গাড়ি সামনে টানো। মেহেদি ছেলেটা আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে শত্রুর চাদরে আবৃত হচ্ছে একটু একটু করে। জানে না এর পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে! শরীরে কাঁটা বিঁধলে তুলে ফেলতে হয়।  

কবুল আলীর কান পর্যন্ত পৌঁছে মেহেদির উচ্চস্বর, আমি মুগদার সন্তান। মুগদা আমার দুঃখিনী মা। যাকে ষোড়শী ভেবে কেড়ে নিচ্ছে চোখ, ঠোঁট, স্তন ও যোনি। ধ্বংসাত্মকভাবে চালানো হচ্ছে নির্যাতন। ব্যথায় পারছে না দাঁড়াতে। নুয়ে পড়ছে ঋণের ভারে। সুযোগসন্ধানী মানুষের ভিড়ে আটকে পড়ছে প্রকল্প। এরপরও মুগদার স্তন চুষে ভারী করছে পকেট। প্রতিবাদ করতে গেলে চেপে ধরছে মুখ। তাই দুঃখিনী মুগদা আজ বধির। ময়লা খালে যে নবজাতককে দেখছেন সেও এই মুগদার সন্তান। দায়িত্বশীল কোনো মানুষ তাকে তুলে পরিষ্কার পানিতে গোসল দিলে পেত মানুষের আকৃতি। গায়ে পোশাক পরিধান করালে প্রকাশ পেত আসল সৌন্দর্য। রাজনীতি ফিরে পেত মহৎ প্রাণ। শুধু দায়িত্বশীল মানুষের অভাবে রাজনীতি ভাসছে ময়লাযুক্ত খালে।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া