X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
রেজিস্ট্রেশন সাময়িক বন্ধ 

দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ

সাদ্দিফ অভি
০৫ মে ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ০৯:০০

দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে মঙ্গলবার (৪ মে) পর্যন্ত  ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩১ লাখ ৬ হাজার ৭০৯ জন। অর্থাৎ, দুই ডোজ মিলিয়ে মোট ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৬ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এরা সবাই ভারতের সেরাম ইনস্টিটউট থেকে আনা অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়েছেন। টিকার বর্তমান মজুতের সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে জানা যায়, ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ জনের দ্বিতীয় ডোজ-প্রাপ্তি এখনও অনিশ্চিত। অর্থাৎ, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এখন তাদেরকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, দুই কোম্পানির দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণে এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনও নির্দেশনা নেই। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়,  আপাতত টিকার নিবন্ধন বন্ধ রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত টিকাদান সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার (৪ মে) দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮৩ হাজার ৫৪০ জন এবং প্রথম ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৩৮ জন। গত ২৬ এপ্রিল থেকে টিকার সংকটের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রথম ডোজ। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি আছেন ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৪৮ জন। দেশে এখন মজুত টিকা আছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৪ জনের। এ কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ জন।

এদিকে গত রবিবার (২ মে) থেকে টিকার নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। টিকা নিবন্ধনের ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উল্লেখ করা আছে— ‘নিবন্ধকরণ অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে।’ তবে এটি সাময়িক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান।

নিবন্ধন বন্ধ আছে প্রসঙ্গত, বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল সরকার।  গত নভেম্বরে সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, সিরাম  থেকে বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল। এরপর জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চুক্তির পর সেরাম থেকে দু’টি চালানে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা  পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপর পাশপাশি আরও ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে এলেও চুক্তি অনুযায়ী, আর কোনও টিকা পায়নি বাংলাদেশ। ভারতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রফতানি বন্ধ করে রেখেছে সেদেশের সরকার। জুন-জুলাইয়ের আগে টিকা সরবরাহ অনিশ্চিত বলেও জানিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। যার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকেও টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এরপর চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ভ্যাকসিন আনার জন্য তৎপর হয় সরকার। চীন এবং রাশিয়া থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই টিকা প্রাপ্তির আশা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন,  ‘চীন আমাদের বলেছে যে, ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, তারা এটা আনার ব্যবস্থা করছে। হয়তো ১০ মে’র মধ্যে চীনের টিকা আসতে পারে। আর অন্য যে অংশটুকু আমরা কিনতে চাই, সেটা আসতে একটু সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘চীন থেকে আরও টিকা কেনার জন্য আমাদের তরফ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে ফিরতি প্রস্তাব পাঠালেই টিকা কেনার আলোচনা শুরু হবে। আমাদের অনেক টিকা লাগবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকার রাশিয়া ও চীন থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, মে মাসের মধ্যেই টিকা পাওয়া যাবে। প্রথম ডোজের জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু ভ্যাকসিন পাননি, প্রথম চালান আসলেই প্রথমে তাদের টিকা প্রদান শুরু হয়ে যাবে।

এদিকে টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দুই কোম্পানির দুই ডোজ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের নির্দিষ্ট করে কোনও পরামর্শ দেয়নি। অর্থাৎ, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির গ্রহণ করেছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেই কোম্পানির সেই টিকাই গ্রহণ করতে হবে। অন্য কোনও টিকা গ্রহণ করা যাবে কিনা, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি। তবে যখনই এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে,সেটা সবাইকে জানানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করবো। ভ্যাকসিন নিয়ে সারা বিশ্বে এক ধরনের ডিপ্লোম্যাসি আছে, এক ধরনের রাজনীতি আছে। তারপরও মানবতার চূড়ান্ত জয়গান যেন হয়। আমরা এ পর্যন্ত দেখেছি, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। যে কারণে আস্থা রাখতে চাই, আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। তাহলে আমরা দ্বিতীয় ডোজটিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে শেষ করতে পারবো।’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
করোনা শনাক্তের হার ৮ শতাংশ ছাড়ালো
দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ শনাক্ত
দ্রুত করোনার টিকা দেওয়ার নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ