X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০

হটস্পট মোকাবিলায় যতো কৌশল

শফিকুল ইসলাম
০৮ মে ২০২১, ১৬:৪১আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ১৭:৪৩

নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা প্ল্যানের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’কে দেখা হচ্ছে দেশের উন্নয়নের ‘চাবিকাঠি’ হিসেবে। তথাপি পরিকল্পনায় চিহ্নিত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হটস্পটে রয়েছে নানান সমস্যা। এগুলো দূর করার কৌশল নেওয়া হয়েছে এ মহাপরিকল্পনায়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেলো, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা সারাদেশের ভূখণ্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে ছয়টি হটস্পটে। এগুলোর সাধারণ সমস্যা মূলত পানি ও জলবায়ুকে ঘিরেই। প্রতিটি জেলাই কোনও না কোনও হটস্পটে রয়েছে। কোনও কোনও জেলা আবার একাধিক হটস্পটে রয়েছে।

কোন জেলা কোন হটস্পটে?

উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন ২৭ হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের আওতাভুক্ত জেলা ১৯টি-বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, গোপালগঞ্জ, যশোর, ঝালকাঠি, খুলনা, লক্ষীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও শরীয়তপুর।

বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকার আয়তন ২২ হাজার ৮৪৮ বর্গ কিলোমিটার। এর আওতায় ১৮টি জেলা-বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নওগাঁ নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, পাবনা, পঞ্চগড়, রাজশাহী, রংপুর, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও।

হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের আয়তন ১৬ হাজার ৫৭৪ বর্গ কিলোমিটার। আওতাভুক্ত জেলা ৭টি- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।

পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। আওতাভুক্ত জেলা ৩টি-বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি।

নদী অঞ্চল এবং মোহনার আয়তন ৩৫ হাজার ২০৪ বর্গ কিলোমিটার। আওতাভুক্ত জেলা ২৯টি। এগুলো হচ্ছে- বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, বগুড়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ফেনী, গাইবান্ধা, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লক্ষীপুর, লালমনিরহাট, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, পাবনা, পটুয়াখালী, রাজশাহী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও খুলনা।

নগরাঞ্চলের আয়তন ১৯ হাজার ৮২৩ বর্গ কিলোমিটারসহ মোট এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। নগরের জেলা ৭টি-বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট।

হটস্পট মোকাবিলায় যতো কৌশল

অপেক্ষাকৃত দুর্যোগমুক্ত জেলা

৬টি জেলাকে মোটামুটিভাবে দুর্যোগমুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যানে। এগুলো হচ্ছে- গাজীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ময়মনসিংহ, নীলফামারী ও শেরপুর।

হটস্পটের চ্যালেঞ্জ

হটস্পট ভিত্তিক চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে-

উপকূলীয় অঞ্চল : ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, নদী ও উপকূলী এলাকায় ভাঙন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া।

বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকা : স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পরিবেশের অবনমন।

হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল: স্বাদু পানির প্রাপ্যতা, আকস্মিক বা মৌসুমী বন্যা, জলাবদ্ধতা ও অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন, অপর্যাপ্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল : স্বাদু পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ও ক্রমহ্রাসমান জীববৈচিত্র্য।

নদী অঞ্চল ও মোহনা : বন্যা, পরিবেশের অবনমন, পানি দূষণ, পলিব্যবস্থাপনা ও নৌ-পরিবহন, নদীগর্ভের পরিবর্তন, ভাঙন ও নতুন চর। এর মধ্যে যমুনায় ভাঙন ১৭৭০ হেক্টর, পদ্মায় ভাঙন ১২৯৮ হেক্টর, মেঘনার অববাহিকায় ভাঙন ২৯০০ হেক্টর।

১৯৭৩ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ নতুন চর জেগে উঠেছে মোট ৫২ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমি।

নগরাঞ্চলের সমস্যা : অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, স্বাদু পানির পর্যাপ্ততা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

মহাপরিকল্পনায় প্রত্যেকটি হটস্পটেই পরিবেশের অবনমনকে সাধারণ সমস্যা ধরা হয়েছে।

হটস্পট মোকাবিলায় যতো কৌশল

সমাধানের যতো কৌশল

কৌশল-১: বিদ্যমান বাঁধের (পোল্ডার) কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝড়বৃষ্টি/জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় আঞ্চলিক নদী এবং চ্যানেলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

কৌশল-২: পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্যার ঝুঁকি হ্রাসে গ্রামীণ নদী ও খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে উপকূলবর্তী জেলাগুলোর জনগণের জীবিকার উন্নয়ন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ নদী ও খালগুলোর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। উপকূলের ৭টি বাঁধে জোয়ার-ভাটা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং উপযুক্ত সমীক্ষা করে প্রয়োজনে অন্যান্য বাঁধেও জোয়ার-ভাটা ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম নিতে হবে।

পদ্মা ও মেঘনা নদীর মাথাভাঙ্গা থেকে জলঙ্গী পর্যন্ত নদীর ডান তীরে বহুমাত্রিক বন্যা বাঁধ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র থেকে জমি পুনরুদ্ধারের জন্য নোয়াখালীর উড়িরচরে ক্রস ডেম নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দর এবং অর্থনৈতিক এলাকাগুলোকে (এসইজেড) বন্যামুক্ত এবং ঘূর্ণিঝড়-সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে হবে।

হটস্পট মোকাবিলায় যতো কৌশল

কৌশল-৩ : টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পানির যোগান এবং চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতে জোয়ারভাটা আছে এমন আঞ্চলিক নদীগুলো কার্যকর রাখা এবং স্থানীয় পর্যায়ে লবণাক্ততা বিষয়ে পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

কৌশল-৪ : উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন জমি উদ্ধার করতে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা নতুন জমির সমস্যা ও সম্ভাবনা নিরূপণের জন্য মেঘনার মোহনায় গবেষণা চালাতে হবে। মোহনায় জেগে ওঠা চরের জমি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও জোনিং করতে হবে।

কৌশল-৫ : সুন্দরবন অঞ্চলে ঘসিয়াখালী চ্যানেলসহ অন্যান্য চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। কৃত্রিম ম্যানগোভ সৃষ্টি, সবুজ বেষ্টনী করে দ্বীপগুলোর অবকাঠামোগত উন্নতি করতে হবে।

বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল

কৌশল-১ : টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য রক্ষা করতে পদ্মা ও আঞ্চলিক নদীগুলোর ভূ-পরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সম্প্রসারণ করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সরক্ষণে এর যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

বরেন্দ্র ও আত্রাই অববাহিকার জন্য বিস্তারিত বেসিন ম্যানজেমেন্ট প্ল্যান তৈরি করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধারে পানি সংরক্ষণ করতে হবে (রাবার ড্যাম, মজাপুকুর, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ইত্যাদি)।

চলনবিলে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ পুনরুদ্ধার এবং এর সংরক্ষণ (বড়াল নদী খনন) করতে হবে। নদীর তীর, খাসপুকুর এবং অন্যান্য জলাশয় দখলমুক্ত করা এবং পানীয়জল সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ জোরদার করার প্রকল্প নিতে হবে।

কৌশল-২ : বন্যা ও জলাবদ্ধতাজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে বন্যার জন্য সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বন্যা ও খরা ব্যবস্থা কেন্দ্র স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক নদী ও মজাখাল পুনঃখনন করতে হবে।

কৌশল-৩ : পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন। এই কৌশল বাস্তবায়নে প্রতিটি জেলাশহরে পয়ঃব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বাণিজ্যিক শিল্পবর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় যথেচ্ছভাবে পানি ওঠানো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল

কৌশল-১ : বন্যা থেকে কৃষি ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীগুলোকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রবাহমান নদীগুলোর দুই তীরে বাঁধ সুদৃঢ় করতে হবে। সাবমারসিবল বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। নদীখননে প্রাপ্ত পলি ব্যবহার করে গ্রামাঞ্চলের ভিটা উঁচু করতে হবে। কৃষি ব্যবস্থা যান্ত্রীকীকরণে উৎসাহিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনঘাত সহিষ্ণু, কৃষি, বনায়ন, এবং টেকসই চাষাবাদ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করতে হবে।

 

কৌশল-২ : সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পানির দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাটির ওপরের পানি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণে নজর দিতে হবে। বন্যা ব্যবস্থাপনা ও সেচ অবকাঠামোগুলোর নকশা করতে হবে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

 

কৌশল-৩ : পানিসম্পদ ও নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় নদীর তীরগুলো দৃঢ় ও স্থিতিশীল করতে হবে। খরস্রোতা নদীগুলোকে নিয়মিত খনন করতে হবে। কার্যকর পলি ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা জোরদার করতে হবে।

কৌশল-৪ : টেকসই হাওর প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের প্রাকৃতিক জলাভূমি সংরক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলো সংরক্ষণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিটি শিল্পে ইটিপি এবং ডব্লিউটিপি স্থাপনে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে হবে। বন্যা ব্যবস্থাপনা, নিষ্কাশন ও সেচ স্থাপনা এবং সেতু বা কালভার্টগুলোতে মাছের অবাধ চলাচল ও বর্ষায় নৌ-চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ধানচাষ ছাড়াও মৎস্য চাষ বা উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে।

কৌশল-৫ : সমন্বিত পানি এবং ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল বাস্তবায়নে সঠিক পলি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নৌ-পরিবহন বজায় রাখতে হবে। হাওর এলাকায় নদীপ্রবাহ উন্নত করা, সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টিতে পার্শ্ববর্তী জলাধার এবং বন্যার পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।

হটস্পট মোকাবিলায় যতো কৌশল

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল

কৌশল-১ : বন্যা ও ঝড়বৃষ্টি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শহর রক্ষায় বহুমুখী ডাইকি নির্মাণ। ধসপ্রবণ পাহাড়ি এলাকা ও প্লাবনভূমিতে গ্রোয়েন ডাইকি ব্যবহার করে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করা। চেঙ্গী, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরি, বাঁকখালী ইত্যাদি পাহাড়ি নদীতে বাঁধও বন্যা প্রতিরোধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে নিকটবর্তী প্লাবনভূমি ও শহর রক্ষা করা।

কৌশল-২ : পানি নিরাপত্তা এবং টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করা। এর জন্য জলাধার থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, সুষ্ঠু পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানি ব্যবস্থাপনার বিনিয়োগকৃত অর্থ উপকারভোগীদের কাছ থেকে আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে।

কৌশল-৩ : সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সমন্বিত জলাভূমির ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

কৌশল- ৪ : পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে আদিবাসী কৃষি ব্যবস্থা টেকসই করা, স্থানীয় প্রজাতির মাধ্যমে বনায়ন, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেচ সম্প্রসারণ এবং নতুন জলাধার নির্মাণ করতে হবে। পাহাড়ি ছড়াগুলোর প্রবহমানতা এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যও সংরক্ষণ করতে হবে।

কৌশল-৫ : কাপ্তাই লেকের পলি অপসারণ এবং মৎস্য সম্পদের জরিপ, প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা, পাহাড়ের প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যক্তিখাতে ইকোট্যুরিজম প্রতিষ্ঠায় প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

নদী অঞ্চল এবং মোহনা অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল

কৌশল-১ : নদীর ভাঙাগড়া এবং সময়ের আবর্তনে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নিয়ে নদী ও বন্যা ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম গ্রহণ করতে বন্যাপ্রবণ এলাকার স্থাপনা ও সম্পদ বন্যা প্রতিরোধী করতে হবে। প্লাবনভূমি এবং নিচু এলাকার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, জেগে ওঠা নতুন চরগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে উন্নয়ন এবং বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। উজানের নদী এবং প্লাবনভূমিতে পানি সংরক্ষণের জন্য আন্তঃদেশীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কৌশলগত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী, উপনদী, ও শাখানদীর ডিসচার্জ এবং প্রবহমানতা বজায় রাখা, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য স্থান সংকুলান রেখে ডিসচার্জ এবং পানি সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

কৌশল-২ : পানি প্রবাহের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখতে নদীপ্রবাহ সুসংহত করার জন্য একইসঙ্গে নদীশাসন ও নদীর তীর সুরক্ষায় কাজ করা, দ্রুত জেগে ওঠা চর স্থিতিশীলকরণ এবং সমুদ্র থেকে জমি উদ্ধার, ভূমিদখল প্রতিরোধের মাধ্যমে নদীর ডিসচার্জ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো, কার্যকর পলি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নদী এবং মোহনার প্রবহমানতা রক্ষা, বাঁধ সুরক্ষায় নদীখনন অন্তর্ভুক্ত রেখে কৌশলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী-উপনদী শাখানদীর ডিসচার্জ এবং নিষ্কাশন ক্ষমতা বজায় রাখতে হবে।

কৌশল-৩ : পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাদু পানির সরবরাহ করতে প্রধান নদী থেকে শাখা নদী ও প্লাবনভূমিতে পানির প্রবাহ বজায় রাখার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সংরক্ষণ এবং প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাদু পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।

কৌশল-৪ : নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারসহ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন, প্রাকৃতিক জলাভূমি ও জলাধার সংরক্ষণের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং দূষণ না ঘটিয়ে টেকসই ইকোট্যুরিজম গড়ে তুলতে হবে।

কৌশল-৫ : নদীগুলোতে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বজায় রাখা, নদী শাসন, ড্রেজিং এবং পলি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নাব্যতা বাড়ানো, পণ্য ওঠানামার সুবিধা বাড়ানো এবং নৌপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান এবং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

কৌশল-৬ : যথাযথ পলি ব্যবস্থাপনার জন্য অববাহিকাভিত্তিক পলি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নীতি এবং ড্রেজিং কার্যক্রম গ্রহণ করে নদীর তীর এবং উপকূলীয় জমিকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বিস্তারিত মরফোলজিক্যাল এবং সেডিমেন্টোলজিক্যাল সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ড্রেজিং করে পলি অপসারণ করতে হবে।

কৌশল-৭ : জেগে ওঠা চর এলাকায় নদী ও মোহনা ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে মেঘনাসহ অন্য সব নদী এবং উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা নতুন চর উন্নয়ন এবং ভূমি উদ্ধারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়াও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, আড়িয়াল খা, কুশিয়ারা, গড়াই, মনুনদীসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ক্যাপিটাল ও ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম গ্রহণ. দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীগুলোয় শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার আধিক্য ব্যবস্থাপনার জন্য ফলপ্রসূ কৌশল নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

নগরাঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল

কৌশল-১ : পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নগর এলাকার জলাবদ্ধতার ঝুঁকি হ্রাসে জলাবদ্ধতা দুরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা, বিদ্যমান পয়ঃনিষ্কাশন কাঠামোর উন্নয়ন রক্ষণাবেক্ষণ এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার, প্রাকৃতিক জলাধারকে সম্পৃক্ত করে পানি নিষ্কাশন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নদীগুলোকে পয়ো এবং অন্য বর্জে্যর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক খাল ও জলাধারগুলো পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ, পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণের জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভূগর্ভস্থ জলাশয়ে সংরক্ষণ এবং বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে ধোয়ামোছার কাজে ব্যবহার এবং পানির গুণগতমান নিশ্চিতকরণ করতে হবে।

কৌশল-২ : নগরাঞ্চলে পানি নিরাপত্তা এবং পানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি বাড়াতে স্থানীয় ভূগর্ভস্থ পানির মান ও পরিমাণ নিশ্চিত হতে গবেষণা জোরদার করতে হবে। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো সংরক্ষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা করা এবং নগরে কৌশলগতভাবে বনায়ন ও জলাধারা তৈরি করতে হবে।

কৌশল-৩ : নগরে কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং সুশাসন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নগরভিত্তিক রাজস্ব আয় বাড়াতেও উদ্যোগ নিতে হবে।

/এফএ/
সম্পর্কিত
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০‘কৌশলগুলোর বাস্তবায়ন কঠিন হবে না’
ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে অর্থের যোগান নিশ্চিত নয়
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!