X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

সাড়ে ৮৮ লাখ মানুষের মুঠোফোনে পৌঁছে গেছে ভাতা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ মে ২০২১, ১৯:৫৯আপডেট : ১২ মে ২০২১, ০০:০৬

মহামারি করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করেই সাড়ে ৮৮ লাখ মানুষের মুঠোফোনে ভাতা পৌঁছে দিয়েছে সমাজসেবা অধিদফতর। সরকারের জিটুপি পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে ভাতার এ পরিমাণ অর্থ বিতরণ করে এ অধিদফতর।

জানা গেছে, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভায় সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির ভাতাগ্রহীতাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখন থেকে ভাতার টাকা হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করে সমাজসেবা অধিদফতর।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফিন্যান্সিয়াল মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশের সঙ্গে চুক্তি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এরপর শুরু হয় ভাতাভোগীদের মোবাইল হিসাব খোলার কাজ। হিসাব খোলার কাজে ভাতাভোগীদের দুর্ভোগ কমাতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী নগদ ও বিকাশের প্রতিনিধিরা ভাতাভোগীদের অবস্থানের নিকটতম দূরত্বে পৌঁছে যায়। তবে কাজটি মোটেও সহজ ছিল না বলে জানান অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

তারা জানিয়েছেন, কাজের শুরুতেই নানামুখী প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারণ অধিদফতরের জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ৫০ শতাংশ পদই শূন্য। তবে কোনও বাধাই থামাতে পারেনি তাদের কাজের গতি।

এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর কাছে প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ কর্মসূচির আওতায় ৮৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে ভাতা প্রদান করার কথা।

ভাতাভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ৪৯ লাখ বয়স্ক, ২০ দশমিক ৫০ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা এবং ১৮ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। পাশাপাশি এক লাখ প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়াও ভাতা, প্রশিক্ষণ ও উপবৃত্তির মাধ্যমে ৫২ হাজার হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ২৫ হাজার যুবা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হবে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবে প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৩০ হাজার দরিদ্র মানুষ পাবে আর্থিক সহায়তা। ৫০ হাজার অতি দরিদ্র চা-শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

সমাজসেবা অধিদফতর জানিয়েছে, এতদিন সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় ভাতার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। ফলে ভাতাগ্রহীতাদের ব্যাংকে যেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে টাকা গ্রহণ করতে হতো। এতে ভাতাভোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো।

তারা আরও জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদান কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ে। সরকারঘোষিত লকডাউন ও চলাচলে বিধিনিষেধের ফলে সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা ও ভাতা বিতরণ কার্যক্রমকে জরুরি সেবার আওতাভুক্ত ঘোষণা করে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের কার্যালয় শুক্র ও শনিবার খোলা রাখার আদেশ জারি করে। সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, তারা ভাতাভোগীর হাতে ভাতার অর্থ পৌঁছে দিতে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমাজসেবা অধিদফতর বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অতিদারিদ্র প্রবণতা রোধ, ক্ষেত্রবিশেষে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক মর্যাদা উন্নীতকরণে সরকারের ভাতা কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অধিদফতর জানিয়েছে, গত বছরের ২৬ মার্চ লকডাউন ঘোষণার পর নিয়মিতভাবে সমাজসেবা অধিদফতরের কাজ চলেছে। একদিনের জন্যও অফিস বন্ধ থাকেনি। ত্রাণ বিতরণের জন্য শুক্র-শনিবারও অফিস খোলা থেকেছে। সমাজসেবা অধিদফতরের অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের আগেই গত অর্থবছরের সমাজসেবা অধিদফতর ৭৯ লাখ মানুষের মাঝে ভাতা পৌঁছে দিয়েছে। পাশাপাশি সমাজসেবা ত্রাণসহায়তা নিয়ে দুস্থ-অসহায় কর্মহীন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নগদ ও খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষের হাতে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদফতর এতদিন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদান করে আসছিল। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতার অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ১২ লাখ এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর ৩৫ লাখ ভাতাভোগীর অর্থ ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যেই সব ভাতাভোগীর টাক হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কোনোপ্রকার প্রণোদনা ছাড়াই সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা দুর্যোগের মধ্যেও রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’

 

/এসএস/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ
যারা দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত
যারা দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত: আদালত
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
দোয়া চেয়ে আইপিএল খেলতে গেলেন মোস্তাফিজ
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
‘চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরতে হয়’
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই