X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যাদের ঘরে ফেরা হয় না

উদিসা ইসলাম
১৪ মে ২০২১, ১০:৪৭আপডেট : ১৪ মে ২০২১, ১০:৪৭

সেই ত্রিশ বছর আগে ঘর ছেড়েছিলাম। তখন আমার বয়স ১৬। ধীরে ধীরে শরীর মনে পরিবর্তন লক্ষ করে বুঝেছিলাম এই সমাজ আমাকে বেমানান ভাবছে। নিজের পরিবারের সদস্যরা অচেনা হতে শুরু করে। সেই ছেড়ে আসার পর আর ফেরা হয়নি। ত্রিশ বছর ঈদে অন্যদের ঘরে ফিরতে দেখে নিজের পরিবারকে মনে পড়ে, মন খারাপ হয়, কিন্তু ফেরা হয় না।

ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ট্রান্সজেন্ডার জয়া শিকদার। তিনি বলেন, ‘ঈদে আমি এখন ঢাকাতেই থাকি। ভালো রান্না করি, ঘুরি। কিন্তু কোথায় যেন কী নেই—এই অনুভূতি নিয়ে কাটে। এ সমাজ ট্রান্সজেন্ডারদের জায়গা দিতে চায় না, পরিবার পরিচয় দিতে চায় না।’

জয়া শিকদার জানান, ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টির সঙ্গেই ওরিয়েন্টেশন ঘটেনি—এই জটিল বাস্তবতায় বেড়ে উঠতে গিয়ে যখন দেখেন সমাজের চোখে তারা ‘ন্যাচারাল’ নন, তখন নেমে আসে খড়গ। ছেলে হিসেবে জন্মে শৈশব পার না করতেই যখন সে মেয়ে সত্তায় বাঁচতে শুরু করে প্রথমে মারধর, অপমান আর তারপরে সমাজচ্যুতি ঘটে।

ট্রান্সজেন্ডারের একজন ১৬ বছরে বেরিয়ে আর কখনোই বাড়ি ফিরেছেন কিনা জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘ফিরেছি তো। মা যেদিন মারা গেলেন। গেলাম শেষবার দেখতে। ছদ্মবেশ নিতে হলো, যাতে কেউ আমাকে চিনে না নেয়। যেটুকু সময় ছিলাম দূরে দূরে থাকতে হলো, যাতে আমার জন্য পরিবারের অন্যরা ছোট না হয়। বাবা সরাসরি বলে দিলেন, ‘আমি চাই না তোমাকে কেউ চিনুক আর আমাকে দুকথা শুনিয়ে যাক। এই তো ঘরে ফেরা।’

কেবল ট্রান্সজেন্ডার জয়ার নয়, বাকি যারা ঢাকায় বেঁচে থাকার লড়াই করছেন তাদের সবারই একই কাহিনী। হিজড়ারা এই ঈদের দিনে কী করে? তাদের কী ফেরা হয় না। কেউ কেউ ফেরেন শত অপমান নিয়েও। ঈদের দিন কীভাবে কাটে বলতে গিয়ে শিল্পা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘নাম বললে অনেক ঝামেলা। আমরা এই দিনে সকালে গুরুর (কমিউনিটি লিডার) কাছে যাই। সেখানে সবাই মিলে সময় কাটাই। বিকালে পরিচিত বন্ধুদের সময় দিই যদি তাদের সময়ে টান না পড়ে।’

তাদের কথাতে বোঝা যায়, পরিবার, সমাজ থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা নিজেদের সমাজ তৈরি করেছে। এই লকডাউন পরিস্থিতিতে ট্রান্সজেন্ডার/ হিজড়া/যৌনকর্মীরা অর্থ, দ্রব্য যোগাড় করতে জীবনের কঠিন লড়াই করেছেন। এবারের ঈদের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে এই তিনি গোষ্ঠীকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। জয়া লেখেন, আপনারা যে অর্থ দিয়েছেন এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন তা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করতে পেরেছি এবং যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি অসহায় ব্যক্তির হাতে সঠিকভাবে সাহায্য তুলে দেওয়ার জন্য। আপনারা অর্থ এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন, এ জন্য আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। যে সমাজ আমাদের গ্রহণ করেনি সেই সমাজের অনেককেই আমরা বন্ধু তালিকায় পেয়েছি।

উল্লেখ্য, হিজড়া একটি সংস্কৃতি। রূপান্তরিত নারী ও রূপান্তরিত পুরুষরা এই সংস্কৃতির মধ্যে থাকেন। ট্রান্সজেন্ডার হলো জেন্ডার আইডেন্টিটি, লৈঙ্গীক পরিচয়। অনেকে ছেলের শরীর নিয়ে জন্মে কিন্তু মনে মনে নারী সত্তায় অবস্থান করেন এবং এক সময় তাদের শরীরটাকেও নারীর দিকেই নিয়ে যায়। একইভাবে নারীর শরীর নিয়ে জন্মে মনে মনে পুরুষের সত্তায় বেঁচে থাকতে নিজেকে পরিবর্তন করে পুরুষ হিসেবে।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী