X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কম্পিউটারে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হচ্ছে

হিটলার এ. হালিম
২৬ মে ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২৬ মে ২০২১, ১৫:৫২

কম্পিউটার ও খুচরা যন্ত্রাংশকে শুল্কমুক্ত করতে হবে— ১৯৯৬ সাল থেকে এমন দাবি করে আসছিলেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। দিনে দিনে বিভিন্ন পক্ষ থেকে এই দাবি জোরালো হতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে কম্পিউটার পণ্যের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।  আর তখন থেকে এখনও পর্যন্ত এ খাত আমদানিতে শুল্ক ও করমুক্ত রয়েছে।

দিন বদলেছে। এবারের বাজেটে আর সেই সুযোগ থাকছে না হয়তো।  দেশে কম্পিউটার উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে আমদানিতে শুল্ক ও কর আরোপের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের  (২০২১-২২) বাজেটে যদি এই প্রস্তাব পাস হয়, তাহলে দেশে কম্পিউটার উৎপাদন করলে স্বল্প কর দিতে হবে।  তবে কম্পিউটার পণ্য ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর হবে উচ্চ মাত্রার, যেখানে এখন শূন্য শতাংশ কর দিতে হয় আমদানিকারকদের। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নিরুৎসাহিত করে দেশে কম্পিউটার উৎপাদনে আগ্রহী করতে এমন উদ্যোগের কথা গত বছরদুয়েক ধরে শোনা যাচ্ছে।  এবারও সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।  প্রস্তাবনায় দেশে কম্পিউটার উৎপাদকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে আমদানির ওপরে সর্বোচ্চ করারোপের কথা বলা হয়েছে।  এই প্রস্তাব বাস্তবে রূপ পেলে দেশে উৎপাদিত কম্পিউটারের দাম কম হবে। অপরদিকে আমদানি করা কম্পিউটারে উচ্চ শুল্ক ধার্য করলে বেশি দামে কম্পিউটার কিনতে হবে প্রযুক্তিপ্রেমীদের। 

প্রসঙ্গত, দেশীয় উদ্যোক্তা ওয়ালটন কম্পিউটার তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। সেই কারখানায় তৈরি হচ্ছে পিসি, ল্যাপটপ ইত্যাদি। এসব পিসি ও ল্যাপটপ বিশ্বের অন্তত ৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাজার সূত্র বলছে, এখন দেশের মোবাইলফোন শিল্পের যে অবস্থা, ঠিক একই চিত্র হবে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া প্রস্তাবনা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হলে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মোবাইল কারখানার লাইসেন্স দেওয়ার পর দেশে এখন ৯-১০টি কারখানায় মোবাইল উৎপাদন হচ্ছে।  যদিও কারখানা চালুর জন্য সনদ পেয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান।  অন্তত আরও ২টি প্রতিষ্ঠান সনদ পাওয়ার অপেক্ষায়।  দেশে তৈরি মোবাইলফোন মোট চাহিদার ৮২ শতাংশের বেশি পূরণ করছে। কম্পিউটার (পারসোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ) ও খুচরা যন্ত্রাংশ নির্মাণ কারখানায় তৈরি পণ্যে শুল্ক ও ‘কর স্বল্প আকারে’ ধার্য করা হলে, তা দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।   

কম্প্টিউটার আমদানিতে কর ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ!

দেশে কম্পিউটার উৎপাদন সহায়ক নীতিমালা তৈরির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র)। কী আছে ডিও লেটারে? জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের যা যা প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। দেশে কম্পিউটার উৎপাদনের জন্য নীতিমালা করা হলে দেশের উৎপাদিত কম্পিউটার একদিন মোবাইলের মতো বড় শিল্পে রূপ নেবে।’

জানা গেছে, দেশীয় কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের জন্য বাজেটের আগে একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে।  তাতে দেশে কম্পিউটার উৎপাদনের জন্য তিনটি ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  প্রথম ক্যাটাগরিকে বলা হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারার বা উৎপাদক।  যারা কম্প্টিউটার ও খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদন করবে, তাদের সর্বোচ্চ বেনিফিট (সুবিধা) দেওয়া হবে শুল্ক ও করে।  দ্বিতীয়ত, যারা কম্পিউটার অ্যাসেমব্লার বা সংযোজনকারী তারাও শুল্ক ও কর ছাড় পাবে, তবে কম।  ৪-৫ শতাংশ কর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবনায়।  আর আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আমদানিতে বড় অঙ্কের শুল্ক  আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।  এ হার ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ। এই কর আরোপ করা হলে আমদানিকৃত পিসি ও ল্যাপটপের দাম অনেক বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘১৯৯৬ সালে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার যৌক্তিক ছিল।  তখন তো দেশের মানুষজন কম্পিউটারই চিনে উঠতে পারেনি।  আর  এখন দেশে রোবট তৈরি হয়, দামি দামি মোবাইল তৈরি হয়।  যার ফলে দেশে কম্প্টিউটার উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে এর বিকল্প আমি দেখি না।’

টার্গেট ছিল ৫টি ব্র্যান্ড

২০১৮ সালে কয়েকটি ল্যাপটপ ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তাদের কারখানা নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করে। ওই ব্র্যান্ডগুলোর মাদার কোম্পানিকে এ দেশে কারখানা স্থাপন, প্রযুক্তিপণ্য সংযোজন, বিপণন, রফতানিসহ আরও কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা তৈরির কাজও শুরু হয়েছিল সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর।  কিন্তু পরবর্তীতে তা আর এগোয়নি।  ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ছিল— স্যামসাং, হুয়াওয়ে, ডেল, এইচপি ও লেনেভো।  এই পাঁচটি কোম্পানিকে টার্গেট করে প্রস্তাবনা পাঠানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কী এক অদৃশ্য কারণে ওই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

স্যামসাং তখন থেকেই বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে ল্যাপটপ ছাড়া মোবাইল ফোন, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজসহ অনেক কিছুই তৈরি করে আসছে। জানা গেছে, তাদের কারখানায় ল্যাপটপ তৈরির অবকাঠামোও রয়েছে। তবে এ দেশে স্যামসাং ল্যাপটপের বিশেষ চাহিদা না থাকায় তারা উৎপাদনে যাচ্ছে না। নিজেরা উৎপাদনে না গেলেও অন্য দুটি ব্র্যান্ডকে প্রস্তাব দিয়েছিল তাদের কারখানায় ল্যাপটপ উৎপাদনের জন্য, কিন্তু ওই ব্র্যান্ড দুটিও সে সময় আগ্রহী হয়নি।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
চূড়ান্ত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস
জিডিপির অনুপাতে বাজেটের আকার অনেক ছোট: মির্জ্জা আজিজ
সর্বশেষ খবর
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা