নাটোরের গুরুদাসপুরে পাটক্ষেত থেকে উদ্ধার নারীর লাশের পরিচয় মিলেছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। ‘বেশি টাকা খরচ’ করায় তাকে হত্যা করে পাটক্ষেতে লাশ ফেলে যান স্বামী। এ ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত রাখি খাতুন (৩০) গোদাগাড়ী উপজেলার তালধারি গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে। গ্রেফতার মিলন ইকবাল (৩৫) রাজশাহীর তানোরের চান্দুরিয়া এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে। রবিবার (০৬ জুন) বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা। এর আগে শনিবার (০৫ জুন) রাতে গোদাগাড়ীর পাকড়ি গ্রাম থেকে মিলনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ১ জুন গুরুদাসপুরের মশিন্দা ইউনিয়নের বিলবিয়াসপুর এলাকার একটি পাটক্ষেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে রাজশাহী সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে। সেই সঙ্গে মিলনকে গ্রেফতারের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। ‘বেশি টাকা খরচ’ করায় রাখিকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন মিলন।
এসপি লিটন কুমার সাহা বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মিলন জানিয়েছেন তিন বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে মামলায় জড়ান। এরপর রাখিকে বিয়ে করে ঢাকায় থাকতেন। পরে গোদাগাড়ীতে তাহমিনা আক্তার নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন। তাহমিনা সেখানে থাকেন।
মিলন ঢাকায় পোশাক কারখানায় ১৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। এর মধ্যে মাসে ১০ হাজার টাকা রাখিকে দিতেন। কিন্তু মাসের মাঝামাঝিতে রাখি আবার টাকার জন্য চাপ দিতেন। রাখি বেশি টাকা খরচ করায় তাহমিনাকে ঠিকমতো খরচ দিতে পারতেন না মিলন। একপর্যায়ে রাখিকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্সের পর মামলার জড়িয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা ভেবে রাখিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ মে সাভারের একটি দোকান থেকে হাতুড়ি কেনেন মিলন। ৩১ মে সন্ধ্যার পর অফিস শেষে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রাখিকে নিয়ে বাসযোগে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ১টার দিকে মশিন্দা ইউনিয়নের বিলবিয়াসপুর এলাকার কাছিকাটার ১০ নম্বর সেতুতে নামেন। এ সময় রাখিকে বলেন সামনের মাঠ পার হলেই আত্মীয়ের বাড়ি। মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতুড়ি দিয়ে রাখির মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে রাখির মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে রাখিকে পাটক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি পাটক্ষেতে ফেলে দিয়ে তৃতীয় স্ত্রী তাহমিনার বাড়ি চলে যান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আকতার, গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহার আলী।