করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে ‘লেখালেখির অপরাধে’ ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আর ২০২০ সালে তথ্য প্রকাশে হয়রানি, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন ২৪৭ জন সাংবাদিক। ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। মঙ্গলবার (৮ জুন) এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে লেখালেখির অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক একজন লেখকের কারাগারে মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করা এক সাংবাদিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় নির্যাতনের শিকার ও আটক হন। তার বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-এ মামলা দায়ের ও তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘তদন্ত ও বিচারে ধীরগতি’ লক্ষ্য করা গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে বিগত এক বছরেও সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে শৈথিল্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মামলা দায়ের ও কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের রদবদলের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল। দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা। নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।
আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা থেকে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়া সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কৌশলগত ঘাটতি, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করার কারণে চলমান টিকা কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে।
টিকাদান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ‘সমন্বয়ের ঘাটতির’ কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে পরিপূর্ণভাবে টিকার আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগের ঘাটতি ও সম প্রবেশগম্য টিকা কার্যক্রম নিশ্চিত না করার ফলে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক জনগোষ্ঠী টিকার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। টিকার নিবন্ধন ব্যবস্থা সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অনুকূলে হওয়ার কারণে এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির অর্জনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে। সর্বোপরি করোনা মোকাবিলা ও টিকা কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি করোনাভাইরাস নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘায়িত করছে।