X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শখের বসে গরু পালন করে কোটিপতি শাহ নেওয়াজ 

হিলি প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২১, ১৩:৫২আপডেট : ১৫ জুন ২০২১, ১৩:৫২

শখের বসে ভাইদের সঙ্গে মিলে ২০১৩ সালে দুই লাখ টাকায় দুটি বিদেশি গরু কিনেছিলেন, সেই থেকে শুরু। গরু পালনের মধ্য দিয়ে আট বছরে ঘুরে গেছে ঘোড়াঘাট উপজেলার যুবক শাহ নেওয়াজের ভাগ্যের চাকা। এখন তিনি গড়ে তুলেছেন বৃহৎ দুগ্ধজাত গরুর খামার, বনে গেছেন কোটিপতি। তার এই গরুর খামারে যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবকদের, তেমনি শত শত যুবককে দেখাচ্ছে আগামীকে জয় করার স্বপ্ন।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বড়গলি (মেলার বাগান) গ্রামে শাহ নেওয়াজের নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্মের অবস্থান। গরুর খামার ঘুরে দেখা যায়, তিনটি পৃথক শেডে সর্বমোট গরু রয়েছে ৭০টি। এসব গরুর লালন পালন এবং যত্নে কাজ করছেন ১০ জন শ্রমিক। খামারে ঢুকেই প্রথম শেডে রয়েছে ১৬টি বকনা বাছুর। দ্বিতীয় শেডে রাখা হয়েছে বাচ্চা প্রসবে অপেক্ষমান গাভী। সেই শেডে বর্তমানে রয়েছে তিনটি গাভী। গাভী তিনটি আগামী দুই এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব করবে। আর তৃতীয় এবং বৃহত্তম শেডে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র দুগ্ধজাত গাভী। এসব গাভী প্রতিদিন প্রায় দুইশ’ লিটার দুধ দিচ্ছে।

খামারে কাজ করা শ্রমিক সাইদুল ইসলাম ও লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিদেশি জাতের গরু লালন-পালনে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করতে তুরস্ক থেকে অর্ধ লাখ টাকা মূল্যে কিনে আনা হয়েছে আধুনিক ‘মিলকিং’যন্ত্র। ফলে এসব গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করতে বাড়তি কোনও ঝামেলা নেই। এছাড়াও গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে খামারের নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে নেপিয়ার এবং সুইট লেমন জাতের ঘাস। প্রতিদিন জমি থেকে এসব ঘাস কেটে নিয়ে আসার পর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সাইজে কেটে গরুদের খাওয়ানো হয়। ঘাসের পাশাপাশি বাজার থেকে উন্নত মানের ফিড খাদ্য কিনেও খাওয়ানো হয় বলে জানান তারা।

শাহ নেওয়াজের গরুর খামার শ্রমিকরা আরও জানান, খামারের কাজের মাধ্যমে স্থানীয় ১০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজ করে পাওয়া বেতনে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানোসহ ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছেন তারা। তাদের মতে, এমন আরও খামার গড়ে উঠলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শাহ নেওয়াজের খামার ঘোড়াঘাটসহ আশপাশের এলাকার যুবকদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে শাহ নেওয়াজের ভাই সাজ্জাদ আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আশপাশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তি আমাদের এই গরুর ফার্ম দেখতে আসে। এছাড়াও গরুর ফার্মের নামে খোলা ফেসবুক আইডিতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন ব্যক্তি গরু লালন পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি জানতে চেয়ে বার্তা দেন। খামার পরিদর্শনে এসে অনেকে দুগ্ধজাত গরুর খামার করার ইচ্ছার কথা জানান। ইতোমধ্যে চার থেকে পাঁচ জন স্থানীয় বেকার যুবক আমাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদেশি জাতের গরুর লালন পালন শুরু করেছেন।

খামার বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও নেচার ফ্রেশ ডেইরি ফার্মের মালিক শাহ নেওয়াজ বলেন, মাত্র দুই লাখ টাকা দিয়ে দুটি বিদেশি জাতের গরু কিনে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের গরু আছে। আর পুরো প্রকল্পটি প্রায় তিন কোটি টাকার। শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল যেন খামারে একশ’ গরু থাকে। তবে খুব অল্প দিনেই আমি সফল হয়েছি। বিদেশি জাতের এসব গরু লালন পালনে শুরু থেকেই উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় আমাকে সার্বিক সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়েছে।

তবে খামার ব্যবস্থাপনা ও দুধ বিক্রিতে নানা ধরনের সমস্যার কথা জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, গরুর খুরা রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে আমি খুবই ভোগান্তিতে আছি। সরকারিভাবে এখনও এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়নি। আবার বিভিন্ন কোম্পানি এই রোগের ভ্যাকসিন বিক্রি করলেও তা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এ অবস্থায় ঢাকায় আসা যাওয়া করতেই ভ্যাকসিনের দামের চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়।

দুধ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের উপজেলায় গরুর দুধ সংগ্রহের জন্য সিলিম সেন্টার নেই। ফলে আমিসহ উপজেলার ১১৪টি খামারের মালিককে গরুর দুধ বাজারজাত করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়াও আমার খামারে আসার রাস্তাটিও চলাচলের অনুপোযোগী। এই রাস্তা দিয়ে আমাদের গ্রামের ৪০টি পরিবারের প্রায় দুইশ’ ব্যক্তি নিয়মিত যাতায়াত করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে এসব সমাস্যার সমাধান সম্ভব।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিড খাদ্যের দাম কেজি প্রতি চার থেকে সাত টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা এবং ছোট ছোট খামারের মালিকদের।

শাহ নেওয়াজের গরুর খামার বিদেশি জাতের গরুর খামারের বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. রাকিবা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এই উপজেলার সব খামারিকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা খামারিদেরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে করে তারা দুগ্ধজাত গাভী পালনে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারেন। শাহ নেওয়াজ একজন সফল খামারি। তবে ঘোড়াঘাটে সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) না থাকায় গাভীর দুধ বিপণনে খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। সিলিম সেন্টার নির্মাণে আমরা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উপজেলার আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সিলিম সেন্টার (দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র) আছে। তবে আমাদের ঘোড়াঘাট উপজেলায় সিলিম সেন্টার নেই। সিলিম সেন্টার নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও’র সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
মোবাইল দেখা নিয়ে কথা-কাটাকাটি, মা-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা
একদিনে হিলি দিয়ে ১১৯৮ টন আলু আমদানি
হিলিতে বিজিবির কাছ থেকে পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা