জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছে ভোলা জেলার মনপুরার বাসিন্দারা। শুক্রবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। ঢাকাস্থ মনপুরা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি মানববন্ধনের আয়োজন করে।
সংগঠনের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংগঠনের সদস্য সচিব মো. ইয়াছিন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়নে ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ বাংলাদেশের অনেক দুর্গম চরে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ভোলার মনপুরা উপজেলার আশপাশে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ বসবাসকারী একটি ওয়ার্ডযুক্ত চরেও বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। কিন্তু ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হওয়া সত্ত্বেও দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর এই উপজেলায় আজও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এতে করে মনপুরার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে অনলাইন ক্লাস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বিদ্যুতের অভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এভাবে মনপুরার বাসিন্দারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়; বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্প সম্প্রসারণে ব্যাঘাত ঘটছে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত সাগরকন্যা মনপুরায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এখানকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস মৎস্য আহরণ ও কৃষি চাষাবাদ। মৎস্য আহরণে জাতীয় জিডিপিতে মনপুরার মৎসজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু এই মৎসজীবীদের আহরিত রুপালি ইলিশ সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না শুধু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে।
মো. ইয়াছিন বলেন, ‘মনপুরায় ডিজেলচালিত একটি বিদ্যুৎ স্টেশন থাকলেও তা উপজেলা সদরের মাত্র দেড় হাজার বাসিন্দাদের রাতে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়, যা চাহিদার তুলনায় অত্যান্ত কম। শুধু বিদ্যুতের অভাবে মনপুরার মানুষ ইন্টারনেট জগতের বাইরে রয়েছে। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, মনপুরার ৩টি ইউনিয়নে ওয়েস্টার্ন রিনিউবল এনার্জি কোম্পানি সোলার প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই সোলার প্যানেল কোম্পানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ চার্জ নিচ্ছে ৩০ টাকা। মাসিক ভ্যাট ৭০ টাকা এবং এককালীন মিটার খরচ নিচ্ছে ৫-৮ হাজার টাকা, যা বিশ্বের কোথাও নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মনপুরাবাসীর জন্য ৩০ টাকা ইউনিটে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া অত্যান্ত কষ্টসাধ্য। কেননা এখানকার ৯৫ ভাগ মানুষ নিতান্ত দিনমজুর, জেলে, কৃষক। তাছাড়া উৎপাদন সীমাবদ্ধতার কারণে সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ মাত্র ৫ শতাংশ বাসিন্দা পাচ্ছেন। তাই আমাদের দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে মুজিববর্ষের অঙ্গিকার বাস্তবায়ন হিসেবে মনপুরায়ও যেন খুব শিগরিই জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়।’