দেবিকা রানি তখন ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিশাল তারকা। একদিন তার চোখ আটকে যায় শুটিংয়ের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুদর্শনের দিকে! নাম তার ইউসুফ খান।
ইউসুফ খান প্রায়ই বোম্বে যেতেন সিনেমার শুটিং দেখতে এবং সেখানেই দেবিকা রানির চোখে পড়েন।
দেবিকা তার কাছে জানতে চান যে তিনি উর্দু পারেন কিনা? যখনই বললেন যে হ্যাঁ পারেন; তারপরের প্রশ্নই ছিল, তুমি অভিনেতা হতে চাও কিনা? এটার জবাবেও হ্যাঁ বললেন তরুণ ইউসুফ।
ব্যস, এ দুটি উত্তরই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ইউসুফ খানের।
ইউসুফ খানের জন্ম ১৯২২ সালে, তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পেশওয়ারে (বর্তমানে পাকিস্তান)।
জন্মটা মুসলিম পরিবারেই। নামটি ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ খান। ১২ ভাইবোনের মধ্যে ইউসুফ চতুর্থ। অভাবের সংসারে বাবা মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার খান বিক্রি করতেন ফল।
কিন্তু ইউসুফের স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার বা ফুটবলার হয়ে ওঠা। অর্থনৈতিক টানাপড়েনে সে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়।
আর এরপরই অভিনেত্রী দেবিকা রানির সঙ্গে দেখা।
তিনি মনে করতেন, ইউসুফ খান নামটি একজন রোমান্টিক নায়কের জন্য মানানসই নয়। সুপরিচিত হিন্দি কবি নরেন্দ্র শর্মা ওই সময় বোম্বে টকিজের জন্য কাজ করতেন। তিনি তিনটি নাম প্রস্তাব করেন- জাহাঙ্গীর, ভাসুদেব ও দিলীপ কুমার।
তবে নিজের নামটি নিজেই পছন্দ করেন ইউসুফ। বেছে নেন ‘দিলীপ কুমার’। বিষয়টি যে একেবারেই দেবিকা রানির চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে হয়েছে তা নয়।
মুসলিম পরিবারের সন্তান সিনেমা করবে- এটা রক্ষণশীল সারওয়ার খান মেনে নিতেন না। সিনেমার শিল্পীদের তিনি ব্যঙ্গও করতেন। বাবার বিষয়টি বেশ ভালো করেই জানতেন ইউসুফ। তাই দিলীপকেই বরণ করেন ইউসুফ। হয়ে ওঠেন এক অদম্য সুপারস্টার।
ছয় দশকে মাত্র ৬৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। মজার বিষয় হলো, এতে মাত্র একবার মুসলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সেটি হলো ‘মুঘল-ই আযম’। হয়েছেন শাহজাদা সেলিম।
দিলীপ কুমার কেমন অভিনেতা- তা বোঝাতে একটি উদাহরণ টানা হয়।
‘কোহিনূর’ ছবিতে সেতার বাজাতে হবে। বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখলেন দিলীপ। গেলেন ওস্তাদ আব্দুল হালিম জাফর খানের কাছে। শিখলেন সেতার বাজানো। তাও কয়েক দিন নয়, টানা কয়েক বছর।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে দিলীপ বলেছিলেন, ‘শুধু কীভাবে সেতার ধরতে হয় তা জানতে আমি কয়েক বছর ধরে সেতার বাজানো শিখেছি। এমনকি সেতারের তারে আমার আঙুল আঘাত পেয়েছিল’।
এভাবেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন দিলীপ কুমার। তাকে বলা হয় বলিউডের প্রথম স্ব-প্রতিষ্ঠিত সুপারস্টার। উপহার দিয়েছেন ‘জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল-ই আযম’, ‘গঙ্গা-যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’র মতো আলোচিত সব ছবি।
আটবার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারেও তাকে সম্মানিত করা হয়। পেয়েছেন দেশের দ্বিতীয় বড় সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ও।
সূত্র: জিও নিউজ ও বিবিসি