হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের নায়ক যদি হন সাকিব আল হাসান। তাহলে পার্শ্বনায়ক অবশ্যই সাইফউদ্দিন। দলের ভয়ঙ্কর বিপদের সময়ে অষ্টম উইকেটে দুজনে মিলে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ এই জুটিতেই ৫ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের পর জানা গেলো, সাকিবের সঙ্গে এমন জুটি গড়ার স্বপ্নটা ছোটবেলা থেকেই মনে লালন করছিলেন সাইফউদ্দিন। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় দারুণ উচ্ছ্বসিত এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
রবিবারের কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘অনেক চাপের মাঝে ছিলাম। তবে এই সময়টার জন্য আমি প্রস্তুতও ছিলাম। হবে কি হবে না, পরের ব্যাপার। চেষ্টা ছিল নিজের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক রাখা। তখন ৭০ রানের মতো দরকার ছিল। সত্যি বলতে ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে জেতাবো। আগেও হয়ত কয়েকবার বলেছি। সুযোগটা কাল (রবিবার) এসেছে। স্মরণীয় করে রাখতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
সাধারণত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতেই অভ্যস্ত সাইফউদ্দিন। কিন্তু হারারেতে স্বভাববিরুদ্ধ হয়েই খেলেছেন অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস। নিজের পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে এই অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘অনেক সময় লুজ বল পেয়েছি কিন্তু দলের প্রয়োজনে ডট দিতে হয়েছে, বড় শট খেলিনি। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেছি। সাকিব ভাই যথেষ্ট ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। এজন্য আমার কাজ সহজ হয়েছে। যেহেতু সাকিব ভাই ক্রিজে ছিল, আত্মবিশ্বাস ছিল যে বেশি ডট না খেলে সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ ছোট করতে পারলে ফলাফল পক্ষে আসবে।’
অবশ্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই এমন চাপে খেলার অভিজ্ঞতা সাইফউদ্দিনের ছিল। তাই রবিবার ম্যাচের সময় পুরনো অভিজ্ঞতাগুলো থেকে প্রেরণা নিচ্ছিলেন ফেনী থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার, ‘আমি ব্যাটসম্যান হিসেবেই ক্যারিয়ার শুরু করি। এর চেয়েও অনেক চাপের মুখে ব্যাট করেছি। ফেনীর হয়ে বয়সভিত্তিকে খেলার সময় দেখা যেত ৪০ রানের মধ্যে ৫-৬ উইকেট পড়ে গেছে, এরপর এক প্রান্ত থেকে এক এক করে খেলে ২০০ রান করতাম। চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে বয়সভিত্তিকে ক্রিকেট খেলার সময় চাপের মুহূর্ত সামলেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ অবশ্যই ভিন্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম আমার সামনে এমন পরিস্থিতি ছিল। আগের অভিজ্ঞতা বারবার মনে করছিলাম।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজের আগে সাইফউদ্দিন একবার বলেছিলেন, দল চাইলে তিনি ওপরেও ব্যাটিং করবেন। কিন্তু টিম কম্বিনেশনের কারণে আপাতত সেই সুযোগ নেই। তাই দলের বিপদের মুহূর্তেও গতকাল নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পেরে দারুণ খুশি তরুণ এই ক্রিকেটার, ‘সুযোগ সবসময় আসে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারিনি, সেই চেষ্টা ছিল গতকাল। অবশ্যই চাইবো না সবাই আউট হয়ে যাক-আর আমার সুযোগ আসুক। তবে কাল (রবিবার) নিজের সামর্থ্য কিছুটা হলেও দেখাতে পেরেছি। দল আমার ছোট্ট অবদানে জিতেছে, এতেই আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত।’