করোনা মহামারি ও কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দেশের আশাজাগানিয়া খাত এখন শেয়ারবাজার। ১০ বছর আগের হারানো পুঁজির সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা এরইমধ্যে ফিরে পেয়েছেন এই খাতের বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে গত তিন মাসে (এপ্রিল, মে ও জুন)। এছাড়া নতুন অর্থবছরের প্রথম ১৫ দিন কেটেছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
অর্থাৎ প্রায় এক বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকা শেয়ারবাজারে ঈদের আগের শেষ সপ্তাহেও বেশ চাঙ্গা ভাব দেখা যায়। এতে নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে শেয়ারবাজার।
তথ্য বলছে, প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ৬ হাজার চার শ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। সেই সঙ্গে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। বাজার মূলধনও এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ঈদের আগে শেয়ারবাজার এমন উচ্চতায় পৌঁছানোয় স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রত্যাশা করছেন, শেয়ারবাজারে এই ইতিবাচক ধারা পরেও অব্যাহত থাকবে।
মূলত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। সর্বশেষ তিন মাসের উত্থানে দেশের পুঁজিবাজার এখন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ( ডিএসই) বাজার মূলধন এখন সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরণের ধস নামে। যা চলে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত। এই ধসে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় গত এক বছরে ডিএসইর প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) দুই হাজার ৩৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৪০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের সঙ্গে বেড়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। তাতে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, এই বাজার অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ আছে। বাজারে যে ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে তা ধরে রাখতে হবে। তার মতে, কেউ বাজারে কারসাজি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাজারমুখী হওয়ার পরামর্শ দেন।
ডিএসইর তথ্য বলছে, গত বছরের ২০ জুলাই ৩৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছিল। ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।
গত বছরের ২০ জুলাই ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
এদিকে গেল সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে মাত্র দুই কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এই দু’দিনে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি মাসের তিন সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক।
গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায়। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ কোটি ৯১৪ কোটি টাকা।
আগের দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ১০ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি মাসে ইতোমধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন ২০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বেড়েছে। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। শুধু তাই নয়, তিন সপ্তাহের এই টানা উত্থানের কারণে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থাতে পৌঁছে গেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া ৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হওয়া ডিএসইএক্স সূচকটি এই প্রথম ৬ হাজার চার শ পয়েন্ট স্পর্শ করেছে। বর্তমানে এই সূচকটি ৬ হাজার ৪০৫ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
প্রধান মূল্যসূচক রেকর্ড অবস্থানে উঠে আসার পাশাপাশি গেল সপ্তাহে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। গেল সপ্তাহে এই সূচকটি বাড়ে ৪৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ২৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট এবং তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৩৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট।
অপরদিকে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪০ পয়েন্ট । আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
তথ্য বলছে, সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ছয় হাজার ৭০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
এদিকে ঈদের ছুটি শেষে আগামী রবিবার (২৫ জুলাই) থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হবে। তবে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে সীমিত পরিসরে। ব্যাংকের লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় করে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।