অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বমানের বোলারদের সামলানোর চ্যালেঞ্জ অবশ্যই ছিল। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলেও গিয়েছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের খুব বেশি চেষ্টা করতে হয়নি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছেন। উইকেট ছেড়ে আসার খেলায় নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৭ উইকেটে ১৩১ রান।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাজেভাবে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাটসম্যান। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার (৯ বলে ২) ও নাঈম শেখের (২৯ বলে ৩০) আউট ছিল দৃষ্টিকটু। নুরুল হাসান সোহানও (৪ বলে ৩) উঠবেন কাঠগড়ায়। ধৈর্যশীল ইনিংস খেলা সাকিব আল হাসানের (৩৩ বলে ৩৬) আউটেও কৃতিত্ব পাবেন না বোলার জশ হ্যাজেলউড। কেবল আফিফ হোসেন (১৬ বলে ২৩) ও শামীম হোসেনের (৩ বলে ৪) আউট দুটিতে ছিল মিচেল স্টার্কের প্রশংসা করার মতো বোলিং।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার হ্যাজেলউড। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। স্টার্ক ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই।
উইকেট বিলিয়ে এলেন সৌম্য
একটা উইকেটের মূল্য অনেক বেশি। সেখানে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হওয়ায় ব্যাটসম্যানের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অথচ সৌম্য সরকার নিজের উইকেট কিনা বিলিয়ে এলেন! জায়গা থেকে অনেকটা সরে গিয়ে বল টেনে লাগালেন স্টাম্পে। বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে অসাধারণ সময় কাটিয়েছেন সৌম্য। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে আউট হয়ে গেছেন এই ওপেনার। জশ হ্যাজেলউডের বলটি নিশ্চিতভাবে ওয়াইড হতো। কিন্তু সৌম্য জায়গা থেকে অনেকটা পিছিয়ে গিয়ে অফ সাইডে কাট করতে চাইলেন। বল ব্যাটে লাগলো ঠিকই, তবে ব্যাপারটা এমন হলো দাঁড়ালো যে- সৌম্য নিজেই ‘ইচ্ছাকরে’ বল নিয়ে লাগালেন স্টাম্পে।
হ্যাজেলউডের বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ২ রানে থামলেন সৌম্য। ৯ বলের ইনিংসে স্বাভাবিকভাবেই নেই কোনও বাউন্ডারি।
ভুল শটে ‘আত্মঘাতী’ নাঈম
সৌম্য সরকার উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। তার ওপেনিং পার্টনার নাঈম শেখেরও একই অবস্থা। ভুল শট খেলে ‘আত্মঘাতী’ হলেন এই ওপেনার। অপ্রয়োজনীয় রিভার্স সুইপে দলের চাপ আরও বাড়িয়ে এসেছেন নাঈম।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণ সামলানো এমনিতেই কঠিন। সেখানে উইকেট ছেড়ে আসা বাংলাদেশকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। সৌম্যর পর নাঈমও নিজের ভুলে আউট হয়েছেন। বাঁহাতি এই ওপেনার অ্যাডাম জাম্পার বলে বোল্ড হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারের লাইনে থাকা বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি। বল সরাসরি আঘাত করে স্টাম্পে।
প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে নাঈম ২৯ বলে ২ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় করেছেন ৩০ রান।
ছক্কা মেরেই আউট মাহমুদউল্লাহ
টপ অর্ডারে ব্যাট করতে হচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে। কারণ তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের অনুপস্থিতি। যদিও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সুবিধা করতে পারলেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২০ রানে আউট হয়েছেন তিনি।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম ম্যাচে চার নম্বরে নেমেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মন্থর শুরুর পর একটু যখন আগ্রাসী ভাব ফুটে উঠছিল তার, ঠিক সেই সময়ই জশ হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। আগের বলে ছক্কা হাঁকালেন অস্ট্রেলিয়ান পেসারকে, পরের বলেই আউট বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তার আউটে হ্যাজেলউডের অবদান যতটা, তার চেয়ে বেশি কৃতিত্ব মোয়েসেস হেনরিকসের। এই ফিল্ডার অনেকটা দৌড়ে গিয়ে পেছন দিক থেকে বল তালুবন্দি করেন। মাহমুদউল্লাহ তার ২০ বলের ইনিংসটি সাজান এক ছক্কায়।
তার বিদায়ের পর নুরুল হাসান সোহান নিজের উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। অ্যান্ডু টাইয়ের অনেকটা বাইরের বল, নিশ্চিতভাবে ওয়াইড হতো, সেই বল ব্যাটে লাগিয়ে মিচেল মার্শের হাতে ধরা পড়েন সোহান। আউট হওয়ার আগে ৪ বলে করেন ৩ রান।
সাকিবের ‘ধৈর্যশীল’ ইনিংসের ইতি
একপ্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া দেখছিলেন, তবে নিজে ঠাণ্ডা মাথায় বল বুঝে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। রান তোলায় গতি না থাকলেও অন্তত উইকেট বাঁচিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন। সাকিবের সেই লড়াই থেমেছে ৩৬ রানে।
জশ হ্যাজেলউডের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন সাকিব। স্টাম্প ছেড়ে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে বল ব্যাটে ঠিকমতো লাগেনি। ৩৩ বলের ইনিংসটি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজান ৩ বাউন্ডারিতে।
সাকিবের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে ভূমিকা রাখা শামীম হোসেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজেকে চেনানো যুব বিশ্বকাপজয়ী তরুণ পারলেন না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। মিচেল স্টার্কের বিষাক্ত ইয়র্কারে ৩ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন শামীম।