X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার

১০ প্রশ্নের উত্তর পেতে তদন্ত কমিশন জরুরি: আ. লীগ

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২১ আগস্ট ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৬:২৭

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যায় সরাসরি জড়িত খুনিদের বিচার হলেও নীলনকশা যাদের তৈরি তাদের কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। তাদের বিচারের আওতায় আনার জোরালো দাবি উঠেছে। সে জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও। গত বছর আগস্টে সরকারের আইনমন্ত্রী কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি।

দেশের বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকেও কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। এ বছর আগস্টেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিশন করবে সরকার।

বিশিষ্টজনদের দাবি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এর পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তি কারা ছিল তা সবাই জানে না। কিন্তু সবার জানার অধিকার আছে। এ জন্য তদন্ত কমিশন করা সময়ের দাবি। একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেও ষড়যন্ত্রকারীদের চিনিয়ে দেওয়া দরকার।

১০ প্রশ্ন
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেন, এই কমিশন অন্তত ১০টি প্রশ্নের উত্তর বের করতে পারলেই নেপথ্যের কলকাঠি নাড়ানো পক্ষগুলোর পরিচয় বেরিয়ে আসবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আমিও একমত যে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পূর্ণ হয়নি।

ফারুক খান বলেন, যে ১০ প্রশ্নের কথা বলা হচ্ছে-
১। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পেছনে মদতদাতা কারা ছিল?
২। দেশি অপশক্তির সঙ্গে বিদেশি কোন দেশ জড়িত ছিল?
৩। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, এর পরামর্শদাতা কারা?
৪। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার না করে উল্টো চাকরি দিয়ে বিদেশে কেন পাঠানো হয়েছিল?
৫। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কাদের মদতে?
৬। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দেশে কেন নিষিদ্ধ করা হয়?
৮। শোক দিবসকে কারা নাজাত দিবস পালন করেছিল?
৯। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলার বদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কারা করে?
১০। চিহ্নিত সাড়ে ১১ হাজার রাজাকারকে কেন মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল ও গোলাম আযমকে কেন নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল?

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, প্রশ্নগুলের উত্তর পেতে তদন্ত কমিশন লাগবে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যতগুলো পদক্ষেপ নেয় সেগুলো বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, জিয়া এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম চক্রান্তকারী।

হানিফ বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জিয়া। জিয়া মূলত পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বলেই আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যায় সামরিক শাসক জিয়া।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল নয়। এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ওপর চরম আঘাত। এই ষড়যন্ত্রে সরাসরি ঘাতকদের সঙ্গে সরকারি আমলা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত অনেকে জড়িত ছিল। তারা অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ পরিসরে থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা যেমন সুস্পষ্ট, তেমনি আরও অনেক হর্তাকর্তাও জড়িত ছিল।

অপরদিকে সেই সময়কার স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন পরস্পরবিরোধী একাধিক রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তে মদত জুগিয়েছে। তিনি বলেন, নিজেরা বিবাদে জড়িয়ে থাকলেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে তাদের ঐকমত্য ছিল।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর স্বীকৃতি না দিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বা তারপর দ্রুত বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি প্রদান নিঃসন্দেহে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

স্বপন বলেন, বিভিন্ন দেশের মতবাদে বিশ্বাসী বাঙালি দল, উপ-দলগুলোর এ বিষয়ে অবস্থানও বিবেচনার দাবি রাখে।

আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আমার মতে, বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন করে বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ করা এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে পারলে বাংলাদেশে দেশবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। যারা খুঁটি, তারা তো একটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের কারা দেশে ও বিদেশে ছিল সে তথ্য আমরা জানি না। আমাদের অধিকার আছে জানার। আমি বহুদিন থেকে দুটো দাবি জানিয়ে আসছি। প্রথমত, একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন এবং দ্বিতীয়ত, একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে ষড়যন্ত্রকারীদের চিনিয়ে দেওয়া। কাজটি হয়নি বলেই একুশে আগস্ট ঘটেছিল, শেখ হাসিনার ওপর প্রায় ২০ বার আঘাত হয়েছিল। এসব তথ্য আমাদের না জানানো হলে ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে।

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ গিনেস বুকে ওঠানোর উদ্যোগ
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের শ্রদ্ধা
সর্বশেষ খবর
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন