করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ ৫৪৩ দিন অর্থাৎ প্রায় দেড় বছর পর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে আগামীকাল রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে। এই খবরে ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত তেমনি উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরাও। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তাদের পদচারণায় শ্রেণিকক্ষ মুখরিত না থাকলে পাঠদানের ‘মজাটা আসে না’। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপকালে তাদের এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শ্রেণিকক্ষগুলোতে জমা ধুলোময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। সুরক্ষা সামগ্রী রাখাসহ নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ।
করোনাকালেই রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক আমেনা বেগম। যোগদানের পর এখনও শ্রেণিকক্ষে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাননি তিনি। দীর্ঘদিন পরে হলেও কলেজ খোলার খবরে উচ্ছ্বসিত এই শিক্ষক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। দীর্ঘদিন পর কলেজ খুলবে, আমরা শিক্ষার্থীদের দেখবো, ক্লাস করাবো- এ এক অন্যরকম আনন্দ।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে বরণ করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা করোনা প্রতিরোধ বুথসহ নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আমরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
পুরান ঢাকার আরেক ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক মো. হারুন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আগামীকাল স্কুল খুলবে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। এতোদিন অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছি। এখন সশরীরে ক্লাস নিবো। আসলে অনলাইনেতো শ্রেণিকক্ষের সেই মজাটা আসে না।
অনেকদিন পর শিক্ষার্থীদের আগমন স্কুল প্রাঙ্গণে সজীবতা ফিরে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষকরা কতটুকু উচ্ছ্বসিত বোঝা যাবে নোয়াখালীর উত্তর চর বাগ্যা ইমান আলী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিনকে দেখলে। বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী নেই। তাই নিজের হাতেই শ্রেণিকক্ষসহ স্কুলের যাবতীয় সকল কিছু পরিষ্কার করেছেন তিনি। জানালেন, শিক্ষক ও কর্মচারী সংকটসহ স্কুলের অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট দরখাস্ত দেওয়া সত্ত্বেও তার কোনও সমাধান পাননি। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কবে স্কুলের এসব সমস্যার সমাধান হবে তা জানা নেই।
দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে শিশুশ্রমে লিপ্ত হয়ে গেছে উল্লেখ করে এজন্য আফসোস করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খুলছে, অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, স্কুল আবার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে। এটা একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। লোকজন না থাকায় নিজেই এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিছুটা কষ্ট হলেও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ভালো লাগছে।