দেড় বছর বন্ধ থাকার পর কুমিল্লার হোমনায় খোলেনি শিশুদের আটটি বিদ্যালয়। রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও এসব প্রতিষ্ঠানে দরজায় তালা ঝুলতে দেখে গেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, আর্থিক সংকটে সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– আয়েশা শিশু নিকেতন, মণিপুর এসএমএম মডেল স্কুল, মাতৃছায়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল, আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল, শ্রীপুর আইডিয়াল স্কুল, আমেনা মেমোরিয়াল কেজি স্কুল, জোহরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শামসুল হক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
জোহরা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. মাহমুদুল হাসান সাগর জানান, তার প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে ১৫৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ছিল। রেজাল্টও ভালো ছিল। কিন্তু করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই এমপিওভুক্ত স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়। আবার অনেকে পড়ালেখা ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে স্কুল চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেতনও দেয়নি। উপায় না পেয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তারা।
এদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ সবজি বিক্রি করছেন, কেউ বিক্রি করছেন থান কাপড়, কেউ বাড়িতে মুদি দোকান দিয়ে বসেছেন। অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়েও জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্ধ হওয়া কিন্ডারগার্টেনের এক শিক্ষিকা জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই শিক্ষকতা করতেন। স্কুল থেকে যে বেতন দেওয়া হতো, তা দিয়ে সংসার চালাতে সমস্যা হতো না। করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ার পর তার স্বামী সকালে সবজি বিক্রি করেন, বিকালে সিএনজি অটোরিকশা চালান। তিনি বেকার। এ অবস্থায় পাঁচ জনের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বেশির ভাগ কোমলমতি শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেছে। আর বেসরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, হোমনা উপজেলায় ১২০টির মতো কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টি রয়েছে ডিআরভুক্ত, অর্থাৎ সেসব প্রতিষ্ঠান পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকসহ সরকারের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছিল।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহাগ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনগুলো চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। করোনাকালে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বেতন দেয়নি। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।’