X
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
২১ আষাঢ় ১৪৩২

কুমিল্লায় হচ্ছে ১১০০ উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:০৩আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:০৭

করোনার প্রভাবে সৃষ্ট দারিদ্র্য ও পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাথমিকের অনেক শিক্ষার্থী কর্মমুখী হয়েছে। ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ফেরাতে কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। এরই অংশ হিসেবে কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় ৭০টি ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২০টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হচ্ছে।

জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ ও লালমাই। এই তিন উপজেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের আলাদা প্রকল্প চলমান থাকায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হবে না। সদর, বুড়িচং, ব্রহ্মণপাড়া, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, বরুড়া, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ও চান্দিনা উপজেলায় ৭০টি করে এবং সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ১১০০ উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার প্রক্রিয়া চলছে।

উন্নয়নমূলক সংস্থা ব্র্যাক এবং কুমিল্লার প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, করোনায় পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জেলার প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী কর্মমুখী হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পড়ালেখা ছেড়ে তারা কাজ করছে হোটেল, চা দোকান, গ্যারেজ এবং কলকারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে। গত দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে কর্মমুখী হয় তারা। ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় ছয় হাজার। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলার। এদের বিদ্যালয়ে ফেরা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফেরাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর উদ্যোগে প্রত্যেক উপজেলায় ৭০টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে ‘আউট অব চিলড্রেন অ্যাডুকেশন প্রোগ্রাম’র মাধ্যমে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ব্র্যাক।

কুমিল্লা ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশুতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনার সংকটে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে গিয়ে দেখা গেছে, গত বছর শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে এ বছর তা দেয়নি। এতে ধারণা করা হচ্ছে যারা জমা দেয়নি তারা বিদ্যালয়ে ফিরবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮-১৪ বছরের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জরিপ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। যেসব এলাকায় বিদ্যালয়বহির্ভূত শিক্ষার্থী রয়েছে তার একটি ম্যাপিং করে শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘জরিপে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা বেশি ঝরে পড়েছে। সম্প্রতি একটি সংস্থার জরিপে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার তালিকা করা হলেও সেটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে যাচাইয়ের কাজ চলছে। খুব দ্রুত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদরে মূল তালিকা প্রকাশ হবে।’

আশুতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে প্রত্যেক উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অবহিতকরণ সভা করা হচ্ছে।’

জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হক বলেন, ‘ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ ও লালমাই ছাড়া বাকি ১৪ উপজেলায় ৭০টি করে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও ৭০ জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। উপজেলার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে আরও ১২০টি বিদ্যালয় ও ১২০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৮-১৪ বছরের ৪০ হাজার শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বারের মতো প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক এবং প্রত্যেক উপজেলায় পাঁচ জন সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২০টি বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকবো আমি। ১৪ উপজেলায় ৭০টি করে বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন স্ব স্ব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের এই প্রকল্প ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত চলবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী। বিদ্যালয় খোলার পর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সব ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি আমরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং চলছে।’ 

/এএম/
সম্পর্কিত
পাঠ্যবইয়ের ভুল চিহ্নিত করে প্রস্তাব পাঠানোর আহ্বান
নামেই শুধু সরকারি কলেজ, নানা সংকটে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম
প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি কখনও পূরণ হয় না: ডা. বিধান রঞ্জন
সর্বশেষ খবর
গিলের রেকর্ড ছোঁয়ার দিনে ভারতের দাপট
গিলের রেকর্ড ছোঁয়ার দিনে ভারতের দাপট
৯ জনের দল নিয়েও বায়ার্নকে হারিয়ে সেমিতে পিএসজি
৯ জনের দল নিয়েও বায়ার্নকে হারিয়ে সেমিতে পিএসজি
পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে সকাল ১০টায়
পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে সকাল ১০টায়
জুলাই সনদ নিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের মন্তব্য জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: শিশির
জুলাই সনদ নিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের মন্তব্য জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: শিশির
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
‘নতুন করে লিখতে আপত্তি নেই, তবে এটি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সংবিধানের একটি’
‘নতুন করে লিখতে আপত্তি নেই, তবে এটি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সংবিধানের একটি’