X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
বিকৃত জাতীয় পতাকা প্রদর্শন

১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বেরোবি কর্তৃপক্ষ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৫৮আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৫৮

বিজয় দিবসে বিকৃত জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ ৭ মাসেও কোনও জবাব দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার ১৮ শিক্ষক ও এক কর্মকর্তাসহ ১৯ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের পরেও আসামিদের সাময়িক বরখাস্ত না করার অভিযোগ উঠেছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৩৯ (২) ধারা অনুযায়ী কোনও কর্মকর্তা কর্মচারী গ্রেফতার, আটক অথবা তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক অভিযোগ গঠনের দিন থেকে আসামিদের বরখাস্ত করতে হবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ে দিবসের সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা স্মারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষক ও এক কর্মকর্তা বিকৃত জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করেন। সেই ছবি আবার ফেসবুকে দেন তারা। এ ঘটনার পরেও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। 

এ ঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্তদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে। পরে জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে ১৯ জন শিক্ষক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আর এম হাফিজুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রহমতউল্লাহ, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েদ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুজ্জামান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম সরকার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ জামান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুর আলম সিদ্দিক এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) শুভঙ্কর। 

পরে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বাদী হয়ে নগরীর তাজহাট থানায় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯ শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে (স্মারক নম্বর ৬৩ তারিখ ৪/২/২১) উপসচিব নুর-ই আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে প্রদর্শনকারী শিক্ষক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। তবে সাবেক উপাচার্য কলিম উল্লাহ কোনও ব্যবস্থা নেননি। বরং অভিযুক্তদের বেশ কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেন বলে মামলার বাদী শিক্ষক মাহমুদুল হক অভিযোগ করেন। 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার প্রধান আসামি তাবিউর রহমানকে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে পদোন্নতী দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান সেলিমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক করা হয়েছে। একইভাবে শিক্ষক মাসুদুল হাসানকে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক, রাম প্রসাদকে শহীদ মুখতার এলাহী হলের সহকারী প্রভোস্ট, রহমত উল্লাহকে বঙ্গবন্ধু হলের সহকারী প্রভোস্ট, প্রদীপ কুমার সরকারকে সাইবার সেন্টারের পরিচালক, শাহ জামানকে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান, ড. রশিদুলকে শহীদ মুখতার এলাহী হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলায় রংপুরের মেট্রোপলিটান আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আল মেহমুদ মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২৩ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহনের দিন ধার্য করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক হাসনাইন।

তবে আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হওয়া এবং অভিযোগপত্র দাখিল এবং অভিযোগ গঠনের পরেও আসামিদের সাময়িক বরখাস্ত না করায় আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে জানান রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী রইছ উদ্দিন বাদশা। 

সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ সালের ৩৯(২) ধারা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোনও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আটক গ্রেফতার হলে অথবা তার বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক অভিযোগ গঠন করা হলে সেই দিন থেকে আসামিকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করার কথা। কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হবার পরেও আসামিদের সাসপেন্ড না করা আইনের প্রতি কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞা বলে মনে করছি।

মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, আইন অনুযায়ী আসামিদের সাসপেন্ড করার কথা। আশাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। 

সার্বিক বিষয় জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আইন কর্মকর্তা রেহেনা আখতার মনির মোবাইলফোনে একাধিকাবর কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে এসএমএস করেও কোনও জবাব মেলেনি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া