ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে নাম কুড়িয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ধারাবাহিকতা না থাকায় এখন এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে সমালোচনাই বেশি হয়। তার অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে রীতিমতো। অথচ ২০১৫ সালের পর দারুণ কিছু জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। তারপরও তার ব্যাটের প্রতি আস্থাহীনতা দিন দিন বাড়তেই। ওয়ানডে ও টেস্ট থেকে বাদ পড়ে এখন কেবল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দলে আছেন। তাও নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না। ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে সবার প্রত্যাশা পূরণ করবেন বলে দেশ ছাড়ার আগে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়ে গেছেন সৌম্য-
বাংলা ট্রিবিউন: ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। ওটা আপনার প্রথম বিশ্বকাপ ছিল। কিন্তু ভালো কাটেনি। এবার নিশ্চয় বিশ্বমঞ্চ রাঙাতে চাইবেন?
সৌম্য সরকার: ভালো করবো নাকি খারাপ করবো— সেটা এখনই বলতে পারবো না। আমি চাই প্রসেস ঠিক রেখে ব্যাটিং করতে। আশরা করছি, বিশ্বকাপের আগে নিজেকে পারফেক্ট ভাবে প্রস্তুত করে মাঠে নামার সুযোগ পাবো। হয়তো পুরনো বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগতে পারে। তবে এটা সত্য, পুরনো ম্যাচের পরিসংখ্যান বা ইতিহাস নতুন ম্যাচে কোনও ভূমিকা রাখে না। বিশ্বকাপে যে কেউই ভালো করতে মুখিয়ে থাকে। আমিও সেই চেষ্টাই করবো। যেহেতু আমার দ্বিতীয় (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপ, আমি চাইবো এবার যেন ভালো হয়। আমি যেন আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি।
বাংলা ট্রিবিউন: এশিয়া কাপে আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এই অভিজ্ঞতা নিশ্চয় কাজে দেবে?
সৌম্য: অবশ্যই, যেকোনও অভিজ্ঞতাই কাজে দেয়। ওখানে খেলার কারণে উইকেট সম্পর্কে কিছুটা ধারণা তো পাবোই। তবে টানা আইপিএল খেলার কারণে উইকেটে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। তাছাড়া তিন বছর আগের উইকেট আর এখনকার উইকেটে কিছুটা পার্থক্য থাকতেই পারে। তারপরও আমি মনে করি যেহেতু আমি কয়েকটি ম্যাচ ওখানে খেলেছি, সেই অভিজ্ঞতা আমার জন্য বাড়তি কিছু ভূমিকা রাখবে।
বাংলা ট্রিবিউন: দল হিসেবে একসঙ্গে খুব বেশি দিন অনুশীলন করার সুযোগ পাননি। কোনও প্রভাব পড়বে বলে কি মনে হয়?
সৌম্য: ক্রিকেট মেন্টাল গেম। টানা খেলার পর এই বিরতি দরকার ছিল। সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে ইতিবাচক ফল আসবে না। আপনি যদি সারাক্ষণ নিউজ নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন, ভালো নিউজ আসবে না। আমাদের ক্ষেত্রেও তা-ই। ক্রিকেটারদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। তো বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমরা ভালো একটি বিরতি পেয়েছি। ওমানে গিয়ে অনুশীলন করে আমরা যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। আশা করি, মূল মঞ্চে নামার আগে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবো।
বাংলা ট্রিবিউন: আইপিএল ম্যাচ দেখে উইকেট সম্পর্কে কতটা ধারণা পেলেন?
সৌম্য: সুযোগ পেলেই দেখেছি। উইকেট দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে হয়তো ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন মনে হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ম্যাচেই মনে হয়েছে উইকেট স্পোর্টিং, যেখানে ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলারদেরও সমান সুযোগ রয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কি উইকেট আপনার জন্য পারফেক্ট মনে হচ্ছে?
সৌম্য: ট্রু উইকেট থাকলে সব ব্যাটসম্যানের জন্যই ভালো। আইসিসি ইভেন্টে ভালো উইকেটই থাকে। এমন উইকেট থাকলে আশা করি ভালো ব্যাটিং করতে পারবো। আসলে চেষ্টা তো সবসময়ই থাকে, কখনও সফল হই, কখনও হই না।
বাংলা ট্রিবিউন: জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভালো খেলে ঘরের মাঠে এসে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে এই ব্যর্থতা নিয়ে কী বলবেন?
সৌম্য: আসলে এটা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করছি না। আপনারা জানেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভালো উইকেট ছিল না। ওখানে শটস খেলার আসলে কোনও সুযোগই ছিল না। এই কারণে পরে আমরা মিরপুরে স্পোর্টিং উইকেটে শটস খেলেছি। ওই অনুশীলনটা আমার কাজে দেবে। গত দুই সিরিজে ব্যর্থ হয়েছি, ওটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সামনের দিকে ফোকাস করছি। বিশ্বকাপে কীভাবে ভালো করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করেছি। আমার চেষ্টা আছে। আশা করি, বিশ্বমঞ্চে সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো।
বাংলা ট্রিবিউন: আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আপনার প্রতি প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টা কি আপনার ওপর চাপ তৈরি করেছে?
সৌম্য: না। খেলতে গেলে এগুলো থাকবেই। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি ভালো করি কিংবা খারাপ করি, সবাই দেখবে এটাই স্বাভাবিক। এগুলো আমার হাতে নয়, আমার হাতে খেলা। আমি সেখানে ভালো করতে চেষ্টা করি। প্রত্যাশা সবার থাকবে। নিজেরও প্রত্যাশা থাকে। সব দিনই তো ভালো যাবে না, ভালো-খারাপ মিলিয়েই ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার। আমি এতটুকু বলতে পারি, আমার চেষ্টা সবসময় থাকে। হয়তো কখনও পারি, কখনও পারি না।
বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপ ঘিরে আপনার পরিকল্পনা কী?
সৌম্য: পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। স্বপ্নও দেখি ভালো ভালো ইনিংস খেলার। অন্তত কিছু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে চাই। ভারত কিংবা পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো একটি ইনিংস খেলতে চাই। এগুলো আসলে সবাই ভাবে। এখন আমার ফোকাস কীভাবে সফল হওয়া যায়, সেই চিন্তা করা।
বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপে আপনার ব্যাটিং কৌশল নিয়ে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা আছে?
সৌম্য: যেহেতু ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টির। আমাকে অবশ্যই দ্রুত রান তুলতে হবে। অবশ্যই বড় ইনিংস খেলতে চাই। কিন্তু আমার ফোকাস থাকবে স্ট্রাইটরেট বাড়ানো। পাওয়ার প্লে ব্যবহার করে দলের জন্য যেন শক্ত একটি ভিত গড়ে দিতে পারি। তবে সবকিছুই হবে ম্যাচের অবস্থা অনুযায়ী। যখন মনে হবে এখন দ্রুত রান তোলার দরকার তখন তুলবো, আর না হলে ধরে খেলবো। ম্যাচের অবস্থা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করে যাবো।
বাংলা ট্রিবিউন: ভারত-পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে লড়তে হবে, কতটা কঠিন মনে করছেন?
সৌম্য: নির্দিষ্ট দল নিয়ে চিন্তা না করে আমাদের ম্যাচ বাই ম্যাচ যাওয়া উচিত। ওমানে প্রথম রাউন্ড জেতার পর আমরা পরের রাউন্ড নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবো। তবে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা। সেটি আমাদের মধ্যেও থাকে। আশা করি, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রত্যেকটি ক্রিকেটারের প্রিয় প্রতিপক্ষ থাকে, যাদের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলার লক্ষ্য থাকে। তো আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ কে?
সৌম্য: প্রিয় প্রতিপক্ষ বলে কেউ নেই। সবার সঙ্গেই ভালো করতে চাই। এক-দুটি দলের সঙ্গে ভালো করার কোনও তৃপ্তি নেই। ১০ নম্বর দলের বিপক্ষে যে মনোযোগ নিয়ে খেলা উচিত, এক নম্বর দলের বিপক্ষেও একই মনোযোগ নিয়ে খেলা উচিত। সবাইকে সমান চোখে দেখলে ভালো হয়। সব দল সমান। আমি হয়তো এখনও সব দলের বিপক্ষে ভালো করতে পারিনি। কিন্তু আমি চাই সব দলের বিপক্ষেই নিজেদের সেরাটা দিতে। আগেও বলেছি, আমার সেই চেষ্টা সবসময় থাকে।
বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্বকাপ ঘিরে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী?
সৌম্য: দলে এগুলো (বিশ্বকাপ) নিয়ে আলোচনাটা হবেই। আমরা সবাই যখন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করি, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে প্রচুর আলোচনা হয়। কীভাবে আমরা ভালো করতে পারি, কার বিপক্ষে কীভাবে সফল হতে পারি— সবকিছু আলোচনা হয়। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারিনি। তবে এবার ভালো করার জন্য যেগুলো করা উচিত, সেগুলো করা হচ্ছে। আশা করি, ওমান ও আরব আমিরাতে ভালো কিছুই হবে।