X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
সাক্ষাৎকার 

আলোর মশাল নিভবে না : হাসান আজিজুল হক 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : এম আবদুল আলীম
১১ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০০আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১৯

[খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল পাবনা গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন-স্মরণে আয়োজিত সেমিনারে। ওই দিন বিকাল ৪.৪০টায় পাবনা সার্কিট হাউসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, গবেষক-প্রাবন্ধিক ড. এম আবদুল আলীম। সঙ্গে ছিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একঝাঁক শিক্ষার্থী। হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যিক হয়ে ওঠা ও ব্যক্তিজীবনের নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তাঁর সেই সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।] 


এম আবদুল আলীম : সাহিত্যের দিকে ঝুঁকলেন কীভাবে?
হাসান আজিজুল হক : ছোট্টবেলায় আমি একটি বই পড়েছিলাম, নাম ‘পৃথিবীর বড় মানুষ’, লেখক গোপাল ভৌমিক। তাতে সক্রেটিসের জীবনী ছিল। বইটি আমাকে এতটা আকর্ষণ করেছিল যে, তা বলে বোঝাতে পারব না। ওই বইতে আমি দর্শন ও দার্শনিক শব্দ দুটি পেয়েছিলাম। আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সেটা অনেক আগের কথা। কৈশোরে। দৌলতপুর কলেজে ভর্তি হয়ে লজিক নিয়েছিলাম। অনেকে বারণ করেছিল। আমি তবুও নিলাম। জলের মতো লাগল। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ইংরেজি পড়তে চেয়েছিলাম। দৌলতপুর কলেজের শিক্ষকরা বলল, ইংরেজি কঠিন। তাই পিছু হটলাম। এখনকার মতো সব কলেজে অনার্স ছিল না। দৌলতপুর কলেজে অনার্স ছিল। আমি ইংরেজি পড়তে না পেরে দর্শন নিলাম। তখন একজন মহাপণ্ডিত, নাম অমূল্যধন সিনহা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মুখার্জীর ছাত্র ছিলেন। গত শতাব্দীর এমন কোনো বিষয় ছিল না, যাতে তাঁর আগ্রহ ছিল না। জ্ঞানের সীমা নেই। সবই এক কথা। তাঁর কাছে হাতেখড়ি। আরেকজন ছিলেন মুসলিম হুদা। আরেকজন ড. মিজানুর রহমান। এসব শিক্ষক আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে। কলেজে ভর্তি হয়ে আরেকটি ঘটনা ঘটল। ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলাম। মাওলানা ভাসানী তখন নেতা। বিরোধীদল বলতে নিজেদের মধ্যেই বিরোধ। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন ট্রিপিক্যাল বুর্জোয়া। ডালাসের থিয়োরি মানতেন। সেন্ট্রো, সিয়েটো  নিয়ে ভাবতেন। এসব নানা কিছু শেষ পর্যন্ত আমাকে সাহিত্যের দিকে টেনে নিলো।

এম আবদুল আলীম : ভর্তি তো হলেন দর্শনে। দার্শনিকই হওয়ার কথা কিন্তু সাহিত্যে এলেন কেন?
হাসান আজিজুল হক : কৈশোর থেকে বঙ্কিম, শরৎ—এঁদের রচনার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। তখন ‘দুর্গেশনন্দিনী’ সহজ করে লেখা হয়েছিল। কিশোরদের উপযোগী করে। দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের তো কথাই নেই। তাঁর কবিতা পড়তাম। কলকাতা থেকে বের হতো ভারতবর্ষ, ভারতী। আমার এক আত্মীয়-সূত্রে বাঁধাই করা সব পেতাম। সাহিত্যরস আহরণের জন্য পড়তাম এমন নয়। পৃথিবীর বিখ্যাত লেখকদের লেখা, ডিকেন্সের ‘ডেভিড কপারফিল্ড’, ‘এই টেইল আব টু সিটিজ’—স্কুল লেভেলেই পড়েছি। ওয়ার এন্ড পিস-এর অনুবাদ পাঁচ খণ্ডে করেছিল গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য, তাও পড়েছি। অশোক গুহের অনুবাদও ভালো লাগত। এখনকার স্কুলগুলোর মতো তো নয়। আমাদের মাস্টারমশাই সপ্তাহে তিনদিন বই দিতেন। ঝিলে জঙ্গলে। গোয়েন্দা কাহিনি। অনেক বড় লেখক বাচ্চাদের জন্য লিখেছেন। বিভূতিভূষণ বাচ্চাদের জন্য লিখেছেন। এসব পড়তে পড়তেই লিখতে শুরু করলাম। 

এম আবদুল আলীম : আপনার প্রথম লেখা, তার মানে বলতে চাচ্ছেন, শিক্ষকদের প্রভাবে আপনি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকেছেন?
হাসান আজিজুল হক : তিল তিল করে সঞ্চয় করতে হয়। এমন তো নয় যে, আজ থেকে সাহিত্য শুরু করব। দিন-ক্ষণ-তারিখ ধরে সাহিত্যিক হওয়া যায় না। রাজনীতি করতে করতে লেখা শুরু। কলেজ থেকে বার্ষিকী বের হতো। সেখানে লিখতাম। আমাকে খুব ভালোবাসতেন আতফুল হাই শিবলীর বাবা আব্দুল হাই। দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে রাজনীতি করার জন্য খেদিয়ে দিয়েছিল। রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলাম। ১৯৬০ সালে এমএ পাশ করি। একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতাম। ঐ বাড়িতে থেকে থেকে তক্তপোশে শুয়ে ‘‘শকুন’’ গল্পটি লেখা হলো। বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে পড়ে শোনালাম। কেউ বুঝতে পারল না। গল্পটা ‘সমকাল’ পত্রিকায় পাঠালাম। ছাপা হলো। তখন ‘‘শকুন’’ একাই বিখ্যাত হলো। নতুন ধারার গল্প—ইত্যাদি ইত্যাদি বলা শুরু হলো।  

এম আবদুল আলীম : কবি না হয়ে কথাসাহিত্যিক হলেন কেন?
হাসান আজিজুল হক : কবিতাও লিখেছি। বাঙালি মাত্রেই কবি। এনামুল একদিন বলল, “কী কবিতা লেখো তোমরা—‘‘গগনে গরজে’। এই ছাড়া কিছু লিখতে পারনি।” সালাউদ্দিন আহমদ, মযহারুল ইসলাম আমাকে খুব ভালোবাসতেন। দুটো অফার পেলাম। ... ঘোড়ার ডিম। কেবল কথা বলি। কেবল কথা বলি। ব্যাস, কথাসাহিত্যিক হয়ে গেলাম! অন্ধ না হয়ে খঞ্জ হলাম। আমি কবিতা লিখেছি, অনুবাদ করেছি। বুঝেছিলাম কবিতা হবে না আমার। অনেকেরই কবিতা হচ্ছে না এটাও বুঝি। একঘেঁয়ে। একই বিষয় নিয়ে কবিতা—এত প্রেম তো বাস্তবে দেখি না। কবিদের কলমে শুধু প্রেম। 

এম আবদুল আলীম : কবিতা যে হচ্ছে না। কী করতে হবে?
হাসান আজিজুল হক : কবিতা সাংঘাতিক জিনিস। কবিত্ব ও প্রতিভা এই দুটি জিনিস ল্যাজের মতো। একবার গজালে আর ঠেকানো যাবে না। রবীন্দ্রনাথের কথা এটা। চিতাবাঘের লম্বা লেজটা বেড়িয়ে যায়। ঐ লেজটাই ওর বিপদের কারণ। 

এম আবদুল আলীম : নতুন প্রজন্মের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?
হাসান আজিজুল হক : যা কিছু প্রত্যাশা করা সম্ভব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। আলোর মশাল নিভে যাবে না, মশাল হাত থেকে হাতে যাবে। এটাই দরকার। 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’