X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্যঘরে ‘কর্মীদের’ কার্যালয়, ডাস্টবিন সড়কে

শাহেদ শফিক
১২ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০২আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০২

বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর (এসটিএস) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩৯টি এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নির্মাণের পরও মালিবাগের একটি এসটিএসে করা হয়েছে ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয়’। তার পাশেই রাস্তায় উন্মুক্তভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশপাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক আসার পথে ফ্লাইওভারের নিচে বর্জ্যঘরটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধায় কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে এর সামনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যবহার করা হয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ছবি ও নাম। সাইনবোর্ডে বড় অক্ষরে ‘শুভ উদ্বোধন’ লিখে দেওয়া হয়েছে। তার নিচে স্থানীয় কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্রের নামও লেখা রয়েছে।

সাইনবোর্ডটি দেখে যে কারও মনে হবে এটি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু কবে বা কখন এটি উদ্বোধন করা হয়েছে বা হবে সে বিষয়ে কিছুই লেখা নেই। এমন সাইনবোর্ডকে এসটিএস দখলের জন্য ‘চতুরতা’ হিসেবে দেখছে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসটিএসকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই। এটি মেয়র মহোদয় জানেনও না।’

বর্জ্যঘরে ‘কর্মীদের’ কার্যালয়, ডাস্টবিন সড়কে

এদিকে এসটিএসটি ব্যবহার না হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। মালিবাগ মোড় সংলগ্ন দৈনিক ভোরের কাগজের কার্যালয়ের সামনে ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে উন্মুক্তভাবে রাখা হয়েছে বর্জ্য। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বৃষ্টি হলে বর্জ্যের দূষিত পানি আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় দোকানদার গিয়াস উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিন থেকে চার বছর আগে এই বর্জ্যঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম অন্তত বর্জ্যের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু বর্জ্যঘরটি সিটি করপোরেশনের লোকেরাই দখলে নিয়েছে। দিনের বেলায় এসটিএসে রিকশা মেরামত করা হয়। রাতে কেউ থাকে না। কোনও পরিচ্ছন্নতাকর্মীও আসে না। তাহলে এত টাকা ব্যয় করে লাভ কী হলো?

তবে স্থানীয় ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন রশিদ শুভ্র এটিকে এসটিএস হিসেবে মানতে রাজি নন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওটা আসলে এসটিএস না। এসটিএস হিসেবে করাও (নির্মাণ) হয়নি। আগে করা ছিল, সেটি ব্যবহার হচ্ছিল না বিধায় আমরা দেয়াল ঠিক করে সেটাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা ঘর হিসেবে করে নিয়েছিলাম। 

প্রতিটা ওয়ার্ডে এসটিএস হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডে যখন একটি করে এসটিএস করা হচ্ছিল তখন আমাদের ওয়ার্ডেরটা পড়েছে মালিবাগ মোড়ে। ওটাও ভেঙে গেছে। মালিবাগ বাজারেও খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন সাহেবের সময়ে এটাকে এসটিএস হিসেবে নির্মাণের প্রক্রিয়া ছিল। কিছু কাজ করার পর আর হয়নি। কিন্তু পরে আমরা সেখানে দোয়াল তুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ঘর করে দিয়েছি। বৃষ্টি হলে যেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেখানে থাকতে পারে।

এই এসটিএস নির্মাণের সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছিল, বিষয়টি তখন গণমাধ্যমেও এসেছিল। কিন্তু কেন সেটিকে এসটিএস বলা হচ্ছে না, জানতে চাইলে মত পাল্টে কিছুটা নমনীয় হন কাউন্সিলর মামুন রশিদ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা এসটিএস হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এসটিএসে যা যা থাকা দরকার সব সুবিধা ছিল না।’ নতুন করে এই ওয়ার্ডে আরও একটি এসটিএস আসছে বলেও জানান এই ওয়ার্ড কমিশনার।

বর্জ্যঘরে ‘কর্মীদের’ কার্যালয়, ডাস্টবিন সড়কে

সম্প্রতি মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে ওই সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এসটিএসটির প্রধান ফটক বন্ধ। ভেতরে কয়েকটি রিকশা রাখা হয়েছে। তার পাশেই রাস্তার মাঝখানে উন্মুক্তভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এজন্য ওই সড়কটিতে যানজটও লেগে থাকে। এসটিএসটির অপর পাশে রিকশা মেরামতের জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কিছু উন্মুক্ত দোকান।

স্থানীয় কাউন্সিলর একে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা ঘর হিসেবে দাবি করলেও একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তারা কখনোই ওই ঘরে গিয়ে হাজিরা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, কার্যালয় হিসেবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখা হলেও এটি অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে একরকম দখল করে রাখা হয়েছে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
মুগদায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
মুগদায় রাস্তা বাড়াতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উচ্ছেদ অভিযান
সর্বশেষ খবর
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা