(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৬ অক্টোবরের ঘটনা।)
কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কঠিন দিনগুলোকে সহজ ও মাধুর্যময় করে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।
বাণীতে তিনি বলেন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংযমের মাস রমজান প্রায় শেষ হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের দুয়ারে খুশির ঈদ হাজির হয়েছে। সব রকম অভাব, দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা সত্ত্বেও আমাদের এই উৎসব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, এদিন উপলক্ষে আমি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশবাসীকে এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের মোবারকবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, আজ আমাদের মনে রাখতে হবে জাতি পুনর্গঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার সংক্ষিপ্ত কোনও সড়ক নেই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ইপ্সিত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সমাজের প্রতি মানুষকে কঠোরতম পরিশ্রম করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য শান্তি অত্যাবশ্যক। দেশের সর্বত্র এবং সমাজের সর্বস্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেশবাসীকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা বলিষ্ঠভাবে পালন করতে হবে। নিশ্চিত সম্ভাবনাকে যারা কৃত্রিম সংকটে আবদ্ধ করতে চায় সেসব নগণ্যসংখ্যক চরিত্রগুলোকে অবিলম্বে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের কঠিন দিনগুলোকে সহজ করে ঈদের খুশি নিয়ে আনতে হবে। বাংলার ঘরে ঘরে সেই অবশ্যম্ভাবী সাফল্যের প্রতীক্ষায় আমি দেশবাসীর ওপর ভরসা করে আছি। ইনশাআল্লাহ জয় আমাদের হবেই।
ঈদ উপলক্ষে চারশ’ বন্দির মুক্তি
১৯৭৩ সালে ঈদ উপলক্ষে চারশ’ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এদিন দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে এদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ২৫৮ জন। এদের অধিকাংশই হানাদার বাহিনীর রাজাকার হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করে জেলে গিয়েছিলেন।
মুক্তিপ্রাপ্তদের পাঁচ জন হানাদার আমলে তথাকথিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এমপি ও এমএনএ হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেই বছর মে মাসে যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন, সেই কাঠামোর মধ্য দিয়ে এরা মুক্তি পান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৫৮ জন বন্দির মুক্তিদানকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বন্দিরা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিতে দিতে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
মার্কিন সতর্কতা অব্যাহত
সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান ব্রেজনেভ বলেন, ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলছে, আমেরিকান সশস্ত্রবাহিনীগুলোর প্রতি প্রদত্ত সতর্ক থাকার আদেশ এখনও বলবৎ রয়েছে।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে নিরাপত্তা পরিষদে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বৃহৎ শক্তির বাইরে কতগুলো দেশের সেনা সদস্য পাঠানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, যুদ্ধবিরতি না মানলে ইসরায়েলকে মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো। তিনি বলেন, এর আগের দিন সকালে তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের একটি চিঠি পেয়েছেন। তাতে সোভিয়েত কী করতে চায় সেটা লেখা ছিল।
মস্কোর খবরে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের অপ্রত্যাশিত অবনতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান মস্কোতে শান্তির শক্তিগুলোর বিশ্ব কংগ্রেসে পূর্ব নির্ধারিত বক্তৃতাদান থেকে বিরত থাকেন।