X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘কর্তৃত্ব’ ফলানো নেতাদের বাদ দেবে আওয়ামী লীগ

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:৩০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:০৬

যেসব জেলা-উপজেলায় দলীয় পদ পেয়ে নেতারা ‘কর্তৃত্বের রাজনীতি’ করছেন তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে শুরু হওয়া তৃণমূল সফরে কর্তৃত্ব ফলানো জেলা-উপজেলার নেতাদের তালিকাও করছে দলটি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্তৃত্ব নয়, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেতা বানানো হয়। পদ-পদবি পেয়ে যারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করছেন এবং সংগঠনকে দুর্বল করছেন—দল অবশ্যই তাদের ব্যাপারে কঠোর হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংগঠনকে গতিশীল করতে জেলা-উপজেলা সফর শুরু করেছি আমরা। খোঁজ নিচ্ছি কারা সংগঠনের জন্য, আর কারা কর্তৃত্ব ফলাতে রাজনীতি করছেন। তালিকা করা হচ্ছে সেসব নেতার।’

তিনি আরও বলেন, যেসব জেলা উপজেলায় দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না, সেখানে সম্মেলন হবে। তৃণমূল নেতাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার রাজনীতি যারা করবেন দলে তাদের প্রয়োজন নেই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, চলমান ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে কর্তৃত্ব ফলাতে চান এমন কিছু রাজনীতিকের খবর পাওয়া গেছে। জেলা-উপজেলা থেকে কেন্দ্রীয় দফতরে বেশ কিছু স্থানীয় নেতার নামে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সফর শুরু করেছেন।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যক্তিগতভাবে বসেও মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে জেলার রাজনীতিতে গতি আনার ওপর দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। এরইমধ্যে জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের বেশ কিছু জেলা-উপজেলায় সভা চলছে।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দলটির তৃণমূল রাজনীতি ভীষণ অসংগঠিত। নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কর্মীদের সঙ্গে অরাজনৈতিক আচরণ কারা করছেন, তাদের অভাব-অনুযোগ কারা আমলে নেন না, সেসব নেতাকে চিহ্নিত করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তালিকা উত্থাপন করা হবে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বিস্তর। এরমধ্যে আধিপত্য, বিরোধ জিইয়ে রাখা, সাধারণ কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়া, বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে সখ্য রাখার অভিযোগও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক জটিলতা দূর করতে কার্যক্রম চলছে। নেতারা ব্যক্তিগত পর্যায়েও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।’

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘যারা সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের ক্ষতি করছেন, তাদের তালিকা হচ্ছে। এসব নেতার বিরুদ্ধে দল সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে দলে বিভেদ রাখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা নেতৃত্বে থাকায় অনেক জেলা-উপজেলার নেতারা নিজেদের ক্ষমতাধর ভাবতে শুরু করেছেন। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী নির্মূল করতে না পারার একটি কারণই হলো কর্তৃত্ব ফলানো ওই নেতারা।’

তিনি বলেন, নানা সময় জেলায়-উপজেলায় সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলে কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফলে জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক অবস্থার দিকে নজর দিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, প্রথম দিকে ২০টি জেলায় তারা কাজ শুরু করেছেন। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী অন্যতম। আছে ফেনী, কুড়িগ্রাম, পাবনা, রাজশাহী জেলা-মহানগর, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, নাটোর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, সাতক্ষীরা। এসব জেলার উপজেলা, পৌরসভার রাজনীতির দুর্বলতাও তুলে আনা হবে বলে জানান নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সংগঠনের তৃণমূলে বেশ কিছু এলাকায় এমন কিছু নেতা রয়েছেন যারা দলের চেয়ে নিজের গুরুত্ব বেশি মনে করে রাজনীতি করেন। এই মানসিকতার জনপ্রতিনিধিরাও আছেন। যাদের কারণে রাজনৈতিক কর্মীরা তেমন গুরুত্ব পান না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলা-উপজেলার নেতাদের নিয়ে সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ওইসব জেলা-উপজেলার সমস্যা বের করার কাজ শুরু করেছেন। পরে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী সমাধান করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ফারুক খান আরও বলেন, ‘বেশ কিছু জেলা-উপজেলা বিরোধপূর্ণ। ইতোপূর্বে আপনারা দেখেছেন বিরোধপূর্ণ রাজনীতির কারণে আমরা নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অব্যাহতি দিয়েছি।’

 

 

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
সর্বাধিক পঠিত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে