X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার বাজারে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা উধাও

গোলাম মওলা
১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩১আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:৩৩

একদিকে সুশাসন ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অব্যাহত চেষ্টা, অপরদিকে দুষ্টুচক্রের অব্যাহত কারসাজি—এই নিয়ে চলছে শেয়ার বাজার। আবার ব্যাংকের আমানতে সুদ হার কমে যাওয়ার কারণে বেশি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে মন্দ শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন অনেকে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। একইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক এবং লেনদেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক চিঠিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। বিশেষ করে শেয়ার বাজারে  ভালো মানের শেয়ারের দাম কমছে, অপরদিকে বাড়ছে মন্দ মানের কোম্পানির শেয়ারের দাম। অর্থাৎ ছোট বিনিয়োগকারীদের অনেকে লাভের আশায় মন্দ মানের কোম্পানির শেয়ার কিনছেন। এতে সাধারণ ও ছোট বিনিয়োগকারীদের বিপদে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, একপর্যায়ে বড় বিনিয়োগকারীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বেরিয়ে যাবেন। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, এ ধরনের ২৫ কোম্পানিকে  নিয়ম পরিপালনে এক মাসের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। ওই চিঠিকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির চিঠিকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের একটি গোষ্ঠী এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এসব শেয়ারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এদিকে বড় ধরনের দরপতনের মধ্য দিয়ে গেলো সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এতে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। একইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক এবং লেনদেন।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, প্রায় তার চারগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৭টির। আর ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১১৬ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৪৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১৩ দশমিক ১৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১৬ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৪৫ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয় ১ হাজার ৬১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন ছিল ৫ হাজার ৩০৯ কোটি ১ লাখ টাকা। সিই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গত সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯১ কোটি ৬২ লাখ ২২ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮৩ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার টাকা। ১৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।

জানা যায়,  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটি ডিমিউচুয়ালাইজেশনের বিধিবিধান মেনে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা জানতে  নিরীক্ষা (কমপ্লায়েন্স অডিট) করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গত মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এ নিরীক্ষা করানো হবে। এছাড়া ডিএসইতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেবে বিএসইসি।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়। এটি করা হয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর পরিচালনা পর্ষদের, বিশেষ করে শেয়ারধারীদের প্রভাব কমাতে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে দৈনন্দিন নানা কাজেও পর্ষদের হস্তক্ষেপ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন কার্যকর করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাস্তবায়িত হয়নি। এ অবস্থায় গত আট বছরে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী সংস্থাটি (ডিএসই) পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে এই নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ
পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি
৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা
সর্বশেষ খবর
শান্ত-শরিফুলকে নিয়ে ক্লেমনের নতুন ক্যাম্পেইন
শান্ত-শরিফুলকে নিয়ে ক্লেমনের নতুন ক্যাম্পেইন
পোশাক শিল্পের হাত ধরেই দেশ উন্নত হবে: পাটমন্ত্রী
পোশাক শিল্পের হাত ধরেই দেশ উন্নত হবে: পাটমন্ত্রী
ইসরায়েল কি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হবে?
ইসরায়েল কি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হবে?
সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিভেছে: পরিবেশ মন্ত্রণালয়
সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিভেছে: পরিবেশ মন্ত্রণালয়
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল