X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চান মর্জিনা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
২৫ মার্চ ২০১৬, ১০:১৫আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৬, ১০:২৪

মর্জিনা বেগম

 

ভয়াল সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন মর্জিনা বেগম (৬০)। অমানবিক নির্যাতনের পর তাকে ফেলে রেখে যায় নরপশুরা। স্বাধীনতার দু’ বছর পর তার বিয়ে হয়। ১৯৯৪ সালে স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও মাকে নিয়ে তিনি জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যান। বীরঙ্গনার শরীরে এখন শক্তি নেই। কাজ করতে পারেন না। তাই সব দিন খাবারও জোটে না। টাকার অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারেন না। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও কেউ তার খোঁজ রাখেনি। এ পর্যন্ত তিনি কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি। তাই তিনি রাষ্ট্রের কাছে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দাবি করেছেন। 

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। ভাটিয়াপাড়া আর্মি ক্যাম্পের পাশ্ববর্তী শংকরপাশা গ্রামে ছিল মর্জিনার বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মর্জিনা ছিলেন ১৭ বছরের তরুণী। দুই বোন ও বাবা-মা সহ চার জনের সংসার তাদের। একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানি আর্মিরা তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। একজন আর্মি তাকে তাদের রান্না ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। কয়েকদিন পর গ্রামের রাজ্জাক মোল্লার বাড়িতে তাকে ধরে নিয়ে ফের ধর্ষণ করে। তারপর তিনি মুকসুদপুর উপজেলার ভাট্রা গ্রামে গিয়ে ১ মাস ধরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। সেখান থেকে কাশিয়ানী উপজেলার তিলছাড়া গ্রামে খালার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানে আরও এক মাস থাকার পর তিনি শংকর পাশা গ্রামে ফিরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা শুরু করেন।

মর্জিনা বেগম  বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমি গর্বিত। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের খাবার-পানি এগিয়ে দিয়েছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের খবর দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীনের দুই বছর পর তাদের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী রিকশা চালাতেন। একুশ বছর আগে মারা গেছেন। ১৯৯৮ সালে বন্যায় মধুমতীর ভাঙনে তার বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর ১২-১৩ বছর ভাটিয়াপাড়ায় সরকারি রাস্তার পাশে ছাপড়া তুলে বাস করেছেন। পরে লোহাগড়া উপজেলার চরকালনা গ্রামে খাস জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে মাকে নিয়ে বসবাস করছেন। তার কোনও জমিজমা নেই।

বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চান মর্জিনা

দুই ছেলে ও এক মেয়ের সবাই বিয়ে করেছেন। দিনমজুর ছেলেরা আলাদা সংসার করছে। কখনও পরের বাড়িতে কাজ করে, কখনও হাট থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করে বিক্রি করেছেন মর্জিনা। কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে মেয়েকে বড় করেছেন। এখন কাজ করার সামর্থ হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘লোহাগড়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা খান মর্জিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে বলেছিলেন। কিন্তু আজও আমার নাম তালিকায় ওঠেনি। আমি রাষ্ট্রের কাছে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চাই।’  

লোহাগড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ মফিজুল হক জানান, এতদিনে তার বীরাঙ্গনা তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত ছিল। সে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে। তাই তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করবো।

 

/এসটি/

সম্পর্কিত
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস পালন করলো সিএজি কার্যালয়
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ
অ্যালবার্ট এক্কা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের এক অকুতোভয় শহীদ
সর্বশেষ খবর
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী