উচ্ছেদের পরপরই ফের পুরনো অবস্থায় ফিরে আসছে রাজধানীর ফুটপাত ও সড়কগুলো। দখলদার হকাররা অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ফলে যতবার উচ্ছেদ হচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর আবারও ফিরে আসছেন হকাররা। এ কারণে ফুটপাত ও সড়ক নিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ কাটছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ফুটপাত ছেড়ে প্রধান সড়ক দিয়ে চলাফেরা করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, হকারদের পুনর্বাসনে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারবেন। তবে রাস্তা বন্ধ করে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় এ অবস্থা হচ্ছে। সরকারের কাছে আমরা আনসার চেয়েছি। আনসার সদস্যদের পেলে উচ্ছেদ হওয়ার পর কেউ যেন আর বসতে না পারে,তা নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ১০ জানুয়ারি বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালায় গুলিস্তান এলাকা,ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক, ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক ও ফুটপাতে। এ সময় ফুটপাত-সড়ক থেকে ফল ও জুতার দোকানসহ সব ধরনের হকার উচ্ছেদ করা হয়।অভিযান চালানো হয় গুলিস্তান আন্ডারপাসেও। সেখানে হাঁটার পথে মালামাল রাখার দায়ে চার দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। এ সময় তাদের মালামাল জব্দ করা হয়।
এরপর গুলিস্তান থেকে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে টিঅ্যান্ডটি অফিসের দেওয়াল সংলগ্ন সবগুলো আধাপাকা দোকান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।
শাহবাগে অভিযান চালানো হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওইদিন শিশুপার্ক এবং সংলগ্ন এলাকার রাস্তা, ফুটপাত ও পার্কিং স্থান থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়।পার্কের বাইরে সরকারি দলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তোলা সব দোকান ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
অন্যদিকে, বিভিন্ন সময়ে ফার্মগেট, মিরপুর-১০, মিরপুর-১ এবং মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
সরেজমিন দেখা গেছে, একের পর এক অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও এখন তার কোনও চিহ্ন নেই। হকাররা যথাস্থানে ফিরে এসেছে। ফুটপাত ফিরে পেয়েছে যন্ত্রণাকর সেই পুরনো দৃশ্য। পথচারীদের জন্য ফুটপাত দিয়ে হাঁটা বন্ধ হয়ে গেছে। সড়কের ফুটপাত সংলগ্ন প্রথম লেইন হকারদের দখলে থাকায় যানবাহন চলে দ্বিতীয় লেইন দিয়ে। গুলিস্তান আন্ডারপাস দিয়েও স্বচ্ছন্দে চলাফেরার সুযোগ নেই। হাঁটার পথে রাখা হয় দোকানের মালামাল।
গুলিস্তান ভবনের বিপরীতে সড়ক ডিভাইডারে বসে ফল বিক্রি করেন হকার রাজু। উচ্ছেদের পরও কেন আবার সড়কে এসে বসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কই যামু। ঢাকায় থাকতে অইলে কিছু একটা কইরা তো খাইতে অইব। তিনি বলেন,উচ্ছেদ অইলে আবারও বহনের লেইগা কিছু বেশি ট্যাকা দিতে অয়। কাকে এই টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত অন্তত বিশবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। প্রতিবারই ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসার পর হকাররা ফিরে আসেন। এ অবস্থায় সোমবার আবারও সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তা শাহীনা খাতুন।
ফার্মগেট মার্কেটের সামনের সড়ক থেকে হকাররা সরে গেছে তেজগাঁও কলেজের সামনের সড়কে। মহাখালী বাজার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রবেশমুখ হকারদের দখলে। মিরপুর-১ ও ১০ নম্বর সেকশন এলাকার রাস্তা আগের মতোই হকারদের দখলে রয়েছে।
তবে উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযানের পর গত কয়েক মাস ধরে গাবতলী বাস টার্মিনাল ও তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন সড়ক দখলমুক্ত রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উচ্ছেদ একটা চলমান প্রক্রিয়া। উচ্ছেদের পর হকাররা ফিরে এলে আবারও অভিযান চালানো হয়।
জানা গেছে, প্রতিটি দখলের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাধররা। তাদের ছত্রছায়ায় ফুটপাতকে চাদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। এ কারণে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উচ্ছেদের পরপরই রাস্তা ও ফুটপাতে হকার বসিয়ে দেওয়া হয়। বার বার উচ্ছেদ করেও ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত হচ্ছে না। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুটপাতে দখলবাজীর পেছনে রাজনীতিবিদসহ পুলিশের কিছু দুর্নীতিবাজকেও দায়ী করেছেন। কিন্তু এরপরও সুফল আসেনি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/এমএনএইচ/আপ – এপিএইচ/