আগেও হামলা চালিয়েছে যুবলীগের জাহাঙ্গীর ও আসাদুল!

জাহাঙ্গীর ও আসাদুলদিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে হাতুড়িপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনায় আটক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আসাদুল হকের পরিচয় পাওয়া গেছে। ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের প্রধান অভিযুক্ত আসাদুল হক ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য। আর জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণ নিয়ে পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলনের ওপর হামলা চালায় তারা। হামলা, চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের ছাড়াও অতীতে যুবলীগে তাদের নামে একাধিক অভিযোগও করা হয়েছে। 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসাদুল ও জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত। এছাড়া চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা যুবলীগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তাদের দুজনেরই বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলায়। হিলি ও ঘোড়াঘাট থেকে গ্রেফতারের পর তাদের দুই জনকেই রংপুর র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অপরদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসার নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশকেও আটক করা হয়। তার বাড়িও ঘোড়াঘাট উপজেলায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসাদুলের বাবা একজন জুতার দোকানি। তবে আসাদুল ওসমানপুরে সিএনজি অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করতো। হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র‌্যাব রংপুরের একটি দল যৌথভাবে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর রাত  ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে হিলির কালিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুল হককে আটক করে।

এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নিরুপ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে জেলা যুবলীগের কাছে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।

আসাদুলকে গ্রেফতার করা একই টিম জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটক করে বলে নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট যুবলীগের আহ্বায়ক, এই কথা স্বীকার করেছেন দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ। তিনি জানান, যুবলীগের নির্বাচনের সময় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছত্রছায়ায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) আসনের এমপি শিবলী সাদিক। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘আসাদুল ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক বিস্তারের একাধিক মামলা রয়েছে। এ কারণে তাদের দল থেকে বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি আড়াই থেকে তিন মাস আগে যুবলীগকে জানাই। স্থানীয় নেতাদের ও সেন্ট্রালে একাধিকবার জানাই। কিন্তু আজ পর্যন্ত চিঠির কোনও রিপ্লাই আসেনি। এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, দেশবাসীসহ সেটা আমারও প্রশ্ন, আমিও জানতে চাই।’ 

প্রসঙ্গত, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

ওয়াহিদা খানম বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফল হলেও ইউএনও ওয়াহিদা আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার।

ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট নয়টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুরি ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের ওপরে একটি, নাকের ওপরে একটি এবং চোখের নিচে একটি। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও সব রিপেয়ার করা হয়েছে। আমার আশাবাদী। তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। তাকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর বলতে পারবো।

আরও পড়ুন-

ইউএনও ওয়াহিদার সর্বোচ্চ চিকিৎসার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অস্ত্রোপচার সফল হলেও আশঙ্কামুক্ত নন ইউএনও ওয়াহিদা

ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে ওয়াহিদার

ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলায় দুই জন আটক

ইউএনও’র ওপরে হামলার ঘটনায় মামলা

ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

এটা সিরিয়াস ক্রাইম: রংপুর বিভাগীয় কমিশনার

ইউএনও’র ওপর হামলাকারী ছিল পিপিই পরা

ইউএনও’র ওপর এমন হামলা বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ

ইউএনও ও তার বাবাকে কুপিয়ে ‘মৃত ভেবে’ ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা

ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও’র ওপর হামলা