দাড়ি ছেঁটে গোঁফ রেখেও শেষরক্ষা হয়নি হোসেনের

আবুল হোসেন। (বামে) দাড়িসহ স্বাভাবিক চেহারা। জুয়েল হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হওয়ার পর সে দাড়ি কেটে গোঁফ রেখেছিলেন তিনি।জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে ছাই করার একদম শুরুতে ছিলেন তিনি। এ ঘটনা কিভাবে ঘটলো তার প্রথম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এবং শুরু যে তিনি করেছিলেন তা গোপন করেননি। তবে দায়ের করা হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর অথবা আসামি হতে যাচ্ছেন এমনটা আঁচ করতে পেরে বুড়িমারী থেকে পালিয়ে যান আলোচিত হোসেন ডেকোরেটরের মালিক আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলী। পালাতে গিয়ে সাধের দাড়ি কামিয়ে ফেলে রেখেছিলেন গোঁফ। তবে শেষরক্ষা হয়নি তার। অপরিচিত গাড়িতে ঢাকা শহরে এসে যখন ফেলতে যাচ্ছিলেন মুক্তির নিঃশ্বাস ঠিক সেই সময়ে ধরা পড়েন হোসেন।  কারণ, তার জন্যই বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন গোয়েন্দা পুলিশ।

সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় লালমনিরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাকিম মোছা. ফেরদৌসী বেগমের আদালতে আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলীকে সোপর্দ করা  হয়। এসময় দেখা যায় আবুল হোসেনের মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি নেই কিন্তু গোঁফ আছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কেটে গোঁফ রেখেছিলেন হোসেন। এছাড়াও বেশভুষা পাল্টাতে টুপি ও পাঞ্জাবি পরা ছেড়ে প্যান্ট শার্ট পরেন। এভাবে নিজের চেহারায় পরিবর্তন এনেও শেষরক্ষা হয়নি তার।

লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের ওসি ওমর ফারুক বলেন, গত শনিবার ভোরে রাজধানী ঢাকায় আবুল হোসেন ওরফে হোসেন আলীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে তিনি বুড়িমারী থেকে পালিয়ে লোকজনের চোখ এড়িয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারীতে এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। সেখানেই নিজের মুখের দাড়ি কেটে ফেলেন এবং গোঁফ রাখেন। লোকজন যাতে চিনতে না পারে সেজন্য টুপি, পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি বাদ দিয়ে শার্ট এবং প্যান্ট পরে রংপুর চলে যান। সেখান থেকে বাসে চেপে ঢাকায় আসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বসবাসরত আপন ছোট ভাই আব্দুর রহমানের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু, শনিবার ভোরে রাজধানী ঢাকায় বাস থেকে নামার সময়ই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।                                                                      

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো.মাহমুদুন্নবী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা সবকিছুই জানার চেষ্টা করছি। আশাকরি সময় হলে আপনারাও কিছু জানতে পারবেন।                         

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে সেখানকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ছাই করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হত্যা মামলাসহ পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়। এতে ১১৪ জনকে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাত শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এ তিন মামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত এ হত্যার ঘটনার পর বাংলা ট্রিবিউনকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হোসেন। সে সময় জুয়েলকে মসজিদ থেকে বের করার কথা স্বীকার করে তার গালে দুটো থাপ্পড় মারার কথা স্বীকার করেছিলেন হোসেন। এর পরদিন মামলা দায়ের হলে তিনি বুড়িমারী থেকে পালিয়ে যান।

 

আরও পড়ুন:

হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার মামলায় হোসেন আলীর রিমান্ড

জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা: প্রধান আসামির ৫ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ

লালমনিরহাটে জুয়েল হত্যাকাণ্ড: প্রধান আসামি আবুল গ্রেফতার

 

 

জুয়েলকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগই ‘কিশোর’! 

পালিয়ে গেছে হোসেন ডেকোরেটরের মালিক?

কোরআন অবমাননার কোনও প্রমাণ মেলেনি: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি


ফোর্স থাকলে দুই জনকেই রেসকিউ করতে পারতাম: পাটগ্রাম ইউএনও

জুয়েলের বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার প্রমাণ মেলেনি: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

বুড়িমারীতে জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তিনটি মামলা (ভিডিও)

‘জুয়েলকে মসজিদের বাইরে আনার পর পরিস্থিতি এমন হবে ভাবিনি’

হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি স্বজনদের

লালমনিরহাটে যুবককে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

 যুবককে হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় একাধিক মামলা হবে

পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার ছায়া তদন্তে র‍্যাব