স্কুলড্রেসের জন্য ছাত্রীদের মারধরের ঘটনায় ৩ সদস্যের কমিটি

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের হাতে শিক্ষার্থী মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মালেককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

ইউএনও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের একজন এএসপির সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে- স্কুল ড্রেস না পরে আসায় শিক্ষার্থীদের শাসন করেছেন ওই শিক্ষক। পিটুনির শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মেরও ছিলেন। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল স্কুলড্রেস পরে না আসায় অপর একজন শিক্ষকও কয়েকজন ছাত্রকে শাসন করেছেন। ঘটনাটি পরে হিজাব বিতর্কের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

‘স্কুলড্রেস নিয়ে শাসন করেছি, হিজাবের বিষয়ে কিছু বলিনি’

ইউএনও মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী তিন কর্মদিবসে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এদিকে যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

এদিকে এক ভিডিওবার্তায় আমোদিনী পাল হিজাব পরা নিয়ে ছাত্রীদের মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত ৬/৪/২০২২ রাতে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় ছাত্রীদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে, শামীম আহমেদ জয় নামের ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটা পোস্ট দেওয়া হয়। পরে বিভিন্নজন ফেসবুক পোস্টটি ছড়িয়ে দেন। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ২২ বছর ধরে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিবারের মতো পরিচালনা করে আসছি। গত ৬/৪/২০২২ শিক্ষার্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বারবার বলার পরেও অনেকেই স্কুলড্রেস না পরেই বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় আমি স্কুলড্রেস নিয়ে শিক্ষার্থীদের বলি ও নামমাত্র শাসন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০ বছর ধরে স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। এসবের সুযোগে বিভ্ন্নি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। এদিকে প্রধান শিক্ষকের চাকরির বয়স শেষ। এ অবস্থায় বিভিন্ন মহল নিজ স্বার্থ উদ্ধারে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। কমিটি ও প্রতিষ্ঠানের সমস্যা আড়ালে আমাকে বিনাদোষে অপরাধী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি হিজাব বা ধর্মীয় বিষয়ে কোনও কথা বলিনি। ওই রাতে অপপ্রচারকারীর কাছে বিষয়টি প্রমাণের জন্য কয়েকজন গেলে, তারা কোনও কথা বলেনি। কিন্তু পরে রাত ১১-১২টার মধ্যে ঠিকই পোস্টটি ডিলিট করা হয়।’

বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার জন্য এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, সহকর্মীসহ সবার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
  
এদিকে আমোদিনী পালের নির্দেশে সহকারী শিক্ষক বদিউল আলমও শিক্ষার্থীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি বলেন, শিক্ষিকা আমোদিনী পাল শিক্ষার্থীদের মারধর করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি কাউকে মারধর করিনি।

স্কুলড্রেস পরে না আসায় ১৮ ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ

তবে স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, বুধবার (০৬ এপ্রিল) বিদ্যালয়ে হিজাব পরে আসায় ছাত্রীদের মারধর করা হয়েছে। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিভাবকরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ বলেন, ঘটনার দিন আমি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের মারপিটের বিষয়টি জানতে পারি। এ বিষয়ে ওই শিক্ষককে শোকজ করা হবে বলে জানান তিনি।