‘নুরের সব তৎপরতা দলীয় গঠনতন্ত্র ও মূলনীতি পরিপন্থি'

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান অভিযোগ করেছে বলেছেন, গত ১৮ জুনের পর থেকে নুরুল হক নুরের সব তৎপরতা দলীয় গঠনতন্ত্র ও মূলনীতি পরিপন্থি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন দলের একাংশের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, আমরা রেজা কিবরিয়ার অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না এবং তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন, তারা পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের অভ্যন্তরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের চর্চা ব্যাহত হয়েছে, যা এ দলের প্রতি মানুষের অপরিসীম প্রত্যাশাকে ক্ষুণ্ন করেছে।

ফারুক হাসান আরও বলেন, গত ১৮ জুন দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের কিছু অভিযোগের পর ড. রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নুর দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে ইনসাফ কায়েম কমিটির একটি সভায় অংশ নেওয়া ও তাদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন। এর জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া ইনসাফ বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যাওয়ার ব্যাখ্যা দেন। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং প্রমাণ থাকলে তা হাজির করতে বলেন।

একই সময়ে তিনি নুরের বিরুদ্ধে কয়েকটি সুস্পষ্ট অভিযোগ আনেন। যার মধ্যে ইসরাইলি নাগরিক ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কথিত এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আলোচিত বৈঠকের সত্যতা সংক্রান্ত কিছু তথ্য, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে দলীয় তহবিল নিজে গ্রহণ ও হিসাব না দেওয়া এবং শিপন বসুসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহভাজন লোকদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগ তোলেন।

অভিযোগের মুখে নুর কাতারে ইসরাইলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে কোনও রকম আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিষয়ে অস্বীকার করেন। তবে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচি কী ছিল, তা তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অবগত করতে অস্বীকৃতি জানান।

ড. রেজা কিবরিয়ার অনুপস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান জানান, বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

এ সময় ফারুক হাসান আরও বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাবো। তারই অংশ হিসেবে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করছি।

১) অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচন হতে পারে না।

২) অবিলম্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

৩) বাংলাদেশ পাসপোর্টে আগের মতো ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল (Except Israel)’ লেখাটি পুনর্বহাল করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গোপন কোনও সম্পর্ক থাকলে তা তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান, জাকারিয়া পলাশ, মুফতি সোহাইবি, আবুল কালম আজাদ প্রমুখ।

আরও পড়ুন- 

রেজা-নুর বাহাস রাজনীতির কৌতুক

বিএনপি ভেঙে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করতে চাই না: রেজা কিবরিয়া

বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রেজা কিবরিয়া: নুর

নুরের বিরুদ্ধে মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ

নুরের বিরুদ্ধে মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের

নুরের সঙ্গে বিরোধ, সরিয়ে দেওয়া হলো রেজা কিবরিয়াকে

এবার নুরকে অব্যাহতি দিলেন রেজা কিবরিয়া