X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকাররাই ঋণখেলাপি তৈরি করেন: অর্থমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ আগস্ট ২০১৭, ২০:০২আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২০:২৪

 

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ছবি: সংগৃহীত) খেলাপি ঋণই ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ব্যাংকাররাই ডিফল্ডার তৈরি করেন।’ শনিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক যখন কোনও গ্রাহককে ঋণ দেয়, তখনই তাদের সবার চিন্তা হয় যে, এই গ্রাহককে কিভাবে ডিফল্ডার বানানো যায়। তারা চান, গ্রাহক শুরুতেই ডিফল্ডার হয়ে যাক। তাহলে তিনি তাদের কব্জার মধ্যে আসবেন। এভাবে গ্রাহকদের বার বার ঋণ দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকারদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। গ্রাহককে ডিফল্ডার বানানোর ধারণা পরিহার করতে হবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের চরিত্র বিবেচনা করে ঋণ দিতে হবে। কোনও ব্যাংকার যখনই ঋণ দেবেন, তখনই তাদের চিন্তা করা উচিত যে, এটা ফেরত আসবে কিনা। ব্যাংকিং খাতে সার্বিকভাবে ১০ থেকে ১১ শতাংশ খেলাপি। সেটা খারাপ না। তবে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২৭ শতাংশ খেলাপি, এটা খারাপ।’

ব্যাংকের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মূলধন ঘাটতি। এই ঘাটতি পূরণে সরকার অর্থায়ন করে থাকে। কারণ, ব্যাংকিং সেক্টরে একটা ব্যাংক যদি লালবাতি জ্বালায়, তাহলে সেটা সেই একটা ব্যাংকের জন্য সমস্যা নয়, সেটি একটি জাতীয় সমস্যা।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ব্যাংকগুলো একীভূত হবেই একসময়। তবে কারও মধ্যে একীভূত হওয়ার প্রচেষ্টা থাকলে, সেটা কিভাবে করা যায়, আমরা সে ব্যাপারে কাজ করব। এ জন্য আমরা একটা ফ্রেমওয়ার্ক করে দেব।’

ব্যাংকারদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক লাটে যাওয়া (দেউলিয়া হওয়া) সম্পর্কে আপনাদের ধারণা নেই। কারণ এটা সর্বশেষ হয়েছে ১৯৪৯ সালে। তারপর আর কোনও ব্যাংক এদেশে লাটে যায়নি। ব্যাংক লাটে ওঠার জিনিসটা আমাদের দেশে কোনোদিন হয়নি।’

কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার দায় আমাদের ওপরও পড়ে। ৭১ জন মালিকের কাছে বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা রয়েছে। যা দিবালোকে ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সরকার বা দুদক এদের বিরুদ্ধে আজও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এখানে দুদকেরও দুর্বলতা রয়েছে।’

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির জন্য সেই সময়ের টপ ম্যানেজমেন্ট আর বোর্ড দায়ী। তাই এসব উচ্চ পর্যায়ে জনবল নিয়োগ দেওয়ার সময়ে একটু দেখেশুনে নিয়োগ দেওয়া উচিত। বাজারে যার বদনাম আছে, তাকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দিলে দুর্নীতি তো হবেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবিলা করা কঠিন কিছু নয়। ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদয়ে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্য একটা আলাদা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করতে হবে। সব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।’

কর্মশালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ অডিট থাকা প্রয়োজন। ঋণের ঝুঁকি ও দুর্বলতার জরিপ করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে যেসব দুর্নীতি ধরা পড়ে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্মশালায় অংশ নেন রাষ্ট্র মালিকানার বাণিজ্যিক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। এতে  সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান।

 

/জিএম/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
বাংলাদেশের কৃষির পরিবর্তনে বৈশ্বিক অংশীদারত্বের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার
বাংলাদেশের কৃষির পরিবর্তনে বৈশ্বিক অংশীদারত্বের সহযোগিতা করার অঙ্গীকার
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস