X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২
একান্ত সাক্ষাৎকারে হেলাল উদ্দিন

দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও অর্থের মুখ দেখবে

শফিকুল ইসলাম
০৫ মে ২০২০, ২১:৪৯আপডেট : ০৬ মে ২০২০, ১১:৫১

মোহম্মদ হেলাল উদ্দিন, ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শপিংমল ও মার্কেট আগামী ১০ মে থেকে খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এই বিশাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিভাবক। প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত দিয়ে যথার্থ অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘদিন বেকার থাকায় পুঁজি হারানো ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও অর্থের মুখ দেখবে।’

মঙ্গলবার (৫ মে) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যদিও পর্যাপ্ত কেনাকাটা হবে কিনা, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। দোকানে কর্মচারীদের বেতন এবং ঈদের বোনাস আমরা দিতে পারবো কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। সরকারের নির্দেশ মতো স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানতে পারবো কিনা তা নিয়েও আমি চিন্তিত। কেননা, ঈদের এই সময়ে ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানবেন এবং মার্কেটে বা দোকানে স্বল্প পরিসর জায়গায় আমরা কতটুকু ব্যবস্থা করতে পারবো তা চিন্তার বিষয়।’   

হেলাল উদ্দিন জানান, করোনা আমাদের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা। এ সম্পর্কে আমাদের কোনও ধরনের পুরনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের চলতে হবে। জীবন তো থেমে থাকবে না। জীবনের প্রয়োজনে, বাঁচার তাগিদেই আমাদের গুটানো হাত-পা খুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব মানার কোনও বিকল্প নেই। সরকার উপযুক্ত সময়েই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের দায়িত্ব সরকারের নির্দেশ মতো ব্যবসা পরিচালনা করা।’ 

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বা একটি দোকানের আয়তন ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। এর মধ্যে ফার্নিচারসহ একজন  মালিক ও কমপক্ষে দুই জন কর্মচারী বসেন। এরপর বাকি জায়গায় দুই জন ক্রেতার দাঁড়ানোই কষ্টকর। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব কতটা মানা সম্ভব— প্রশ্ন রাখেন তিনি। তারপরেও চেষ্টা করবো নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করার, প্রতিশ্রুতি দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘১৫ জনের কম কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত দেশে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি, যা দেশের মোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩৯ ভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মী। বাংলাদেশের জিডিপিতে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবদান ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা না বাঁচলে দেশে বড় ব্যবসায়ী তৈরি হবে না।’

হেলাল উদ্দিন জানান, দেশে করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেছেন, এদের বাঁচাতে হবে। এরা না বাঁচলে দেশের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হবে। এদের বাঁচাতে এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজির জোগান দিতে ঋণ সহায়তা প্রয়োজন। এই ঋণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এক বছরের মধ্যে ছয় কিস্তিতে পরিশোধ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ঋণ সহায়তার বিষয়টি কোথাও উপস্থাপন করেছেন কিনা জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘করোনার প্রভাবে সারাদেশে লকডাউন চলছে। অফিস আদালতে চলছে সাধারণ ছুটি, যা আপাতত চলবে ১৬ মে পর্যন্ত। এ অবস্থার মধ্যে আমরা কোথায় এ দাবির কথা জানাবো? সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দাবির বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করছি।’

তিনি জানান, আমরা অনুদান নয়, ঋণ চাই। ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ব্যবসায়িক অবলম্বন পুঁজি, যা আমাদের ছিল। কিন্তু দেড় মাস বসে থেকে পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন অনেকেই। তাই কিছুটা সময়ের জন্য সহায়তা প্রয়োজন। আর এই সহায়তাই হচ্ছে ঋণ। এই ঋণ সহায়তার পরিমাণ হতে পারে সর্বোচ্চ এক  লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বা মার্কেট সমিতিগুলো এই ঋণের গ্যারান্টার হতে চায়, যাতে সরকারের অর্থ লোপাট না হয়। তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে মালিক সমিতি বা মার্কেট সমিতির দেওয়া তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীরাই এই ঋণ সহায়তা পেতে পারেন।’  

ঋণ গ্রহণের প্রস্তাবনার বিবরণ দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘তালিকাভুক্ত একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে এই ঋণ সহায়তা পাবেন। ৯ শতাংশ সুদের অর্ধেক সাড়ে চার শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বাকি সাড়ে চার শতাংশ সরকার পরিশোধ করবে। ঋণ গ্রহণের আগেই ব্যবসায়ীকে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় আনা হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় এলেই তিনি চেক বই পাবেন। সেই চেক বই থেকে এক লাখ টাকার ঋণের জন্য সাড়ে চার শতাংশ সুদের বিনিময়ে এক  লাখ ৫ হাজার টাকার একটি চেক ব্যাংকে জমা দেবেন। এর পরই তিনি ঋণের অর্থ হাতে পাবেন। যা দিয়ে তিনি তার ব্যবসাটিকে পুনরায় দাঁড় করাবেন। শর্ত অনুযায়ী ঋণ গ্রহণের পরবর্তী বছরের শুরু থেকেই দুই মাস পর পর ছয়টি কিস্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন। পুরো ঋণ পরিশোধ করে তিনি তার জমা দেওয়া এক লাখ ৫ হাজার টাকার চেকটি ফিরিয়ে নেবেন। যদি ঋণ গ্রহীতা ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে জমা নেওয়া চেকের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা আদায় করতে পারবেন। এ ছাড়া গ্যারান্টার হিসেবে মালিক সমিতি বা মার্কেট সমিতিতো রয়েছেই।’     

করোনা রোধে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দোকান ও মার্কেট বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই দুঃসময়ে একটি মানুষও না খেয়ে থাকবেন না। দৈনিক আয় বা মাসিক আয় যাদের ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, তাদের জন্য এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী একটি তহবিল করেছেন। ওই তহবিল দিয়ে এসব মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই তথ্য দিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মার্কেটে একাধিক দারোয়ান ও নাইট গার্ড রয়েছে, এছাড়া আছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও অফিস সহকারী, যাদের বেতন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খাদ্য সহায়তাও দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এসব কর্মচারী সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নয় বলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের নাম তালিকাভুক্ত করছেন না। ফলে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতিও শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’ ব্যবসায়ী নেতা হেলাল উদ্দিন দাবি করেন, শর্ত শিথিল করে হলেও এই কর্মচারীদের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তার আওতায় আনতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হোক।   

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সরকার কখনও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনও সহায়তা দেয়নি। তারাও আবেদন করেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সময় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বায়তুল মোকাররমের ৩৩৩ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বর্তমানে পাকা ঘরে ব্যবসা করছেন। বিষয়টি বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণে রেখেছে বলেও জানান মোহম্মদ হেলাল উদ্দিন।

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাইয়ে কার কত অবদান, তা নিয়ে দ্বিধা কেন: মঞ্জু
জুলাইয়ে কার কত অবদান, তা নিয়ে দ্বিধা কেন: মঞ্জু
শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়াতে আসছে ‘কানাগলি’
শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়াতে আসছে ‘কানাগলি’
জিম্বাবুয়েকে ৩২৮ রানে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা
জিম্বাবুয়েকে ৩২৮ রানে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা
মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দি
মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ বন্দি
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট