X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

কমেছে খেলাপি ঋণ

গোলাম মওলা
৩০ নভেম্বর ২০২০, ২৩:০৫আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০৩

টাকা

ব্যাংক খাতে অবশেষে কমে এসেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে এক হাজার ৭২৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যেটা জুন মাসের শেষে ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালের বিশেষ ছাড় ও ঋণ পুনঃতফসিল করার বিশেষ সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত  প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হচ্ছে না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো।

খেলাপি ঋণ কমে আসাটা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঋণের টাকা ফেরত আসার কারণে খেলাপি কমেনি। বিশেষ সুবিধার কারণে কমেছে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এর প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও নানা খাতে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়। এই সংকটকালে ঋণখেলাপিদের আরও সুবিধা দেয় সরকার। সরকারি সুবিধার ফলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না।

২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা  নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের কোনও কিস্তি পরিশোধ না করলেও গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এ সময়ের মধ্যে ঋণ/বিনিয়োগের ওপর কোনও দণ্ড, সুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ করা যাবে না।

২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণখেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয় সরকার। সরকারের দেওয়া ‘বিশেষ’ ওই সুবিধার আওতায় জুন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করে, যার অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যার পরিমাণ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে জুন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অবলোপন (রাইট অব) করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ গেলেও তা সহসাই ফেরত আসছে না ব্যাংকগুলোর কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে ব্যাংকগুলো বলছে, এটি খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ, করোনার কারণে এখন কাউকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না। আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর হিসাবে গত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪১৭ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ছয় মাস আগে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়ে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে,  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ ৪৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা,  যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর  খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অবশ্য বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল এবং করোনার কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়ায় পঞ্জিকা বছরের প্রথম তিন মাসেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দুই কমে যায়।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় অনেক কমে গেছে। এই সময়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করতে না পারায় তাদের আয় কমে যায়। ফলে তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারেনি। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণের টাকাও ফেরত আসেনি। স্বাভাবিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা। তবে সার্কুলার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও জানুয়ারি থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকদের নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না।

/জিএম/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
কোরবানির জন্য পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের
দুই রঙে ভিভোর নতুন স্মার্টফোন
দুই রঙে ভিভোর নতুন স্মার্টফোন
জিম্বাবুয়ের সিরিজের জন্য বাংলাদেশের তিন ম্যাচের স্কোয়াড ঘোষণা
জিম্বাবুয়ের সিরিজের জন্য বাংলাদেশের তিন ম্যাচের স্কোয়াড ঘোষণা
পটুয়াখালীর খালে ভাসছে ‘টর্পেডো’সদৃশ বস্তু, স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক 
পটুয়াখালীর খালে ভাসছে ‘টর্পেডো’সদৃশ বস্তু, স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক 
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে