X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বড় হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বাজার 

গোলাম মওলা
০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১০:০০

নারীর পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড একটি জরুরি পণ্য। মেয়েরা ক্রমেই শিক্ষিত হওয়া ও তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের চেয়ে এই পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। ছোট বড় বেশ কিছু কোম্পানি বিভিন্ন নামে এই প্যাড বাজারে এনেছে। দেশের সব ফার্মেসি ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি দেশি-বিদেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করছে। সব সুপারশপেও এই প্যাড বিক্রি হচ্ছে। এমনকি শহরের কিছু কিছু মুদির দোকানেও কমবেশি স্যানিটারি ন্যাপকিন বেচাবিক্রি হচ্ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাবিকুন নাহার বলেন, ‘এখন স্কুল গোয়িং বাচ্চারা অনেক সচেতন, তাই তাদের মধ্যে প্যাড ব্যবহারের হার বাড়ছে।’

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার সরকার ফার্মেসির সাদাত হাসান বলেন, ‘আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ স্যানিটারি ন্যাপকিন নিচ্ছেন।’ মেয়েদের কেউ কেউ নিজের জন্য নিলেও পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাছেই প্রতিদিন গড়ে ১০টির মতো স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করেন এই খুচরা বিক্রেতা। তিনি সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেন স্কয়ার গ্রুপের তৈরি সেনোরা ব্র্যান্ডের প্যাড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পার্শ্ববর্তী ফার্মেসিগুলোতে দিনে ৫০টির বেশি প্যাড বিক্রি হয়। মানিকনগর এলাকার মুদি দোকান কুমিল্লা স্টোর মাসে ১০০ বেশি প্যাড বিক্রি করেন। রাজধানীর সুপারশপগুলোতে ও রাজধানীর উন্নত এলাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বেচাবিক্রি আরও বেশি হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে স্টেসেফ, মোনালিসা, জয়া, সেনোরা, কুইন, টিউলিপ, নীলা, স্টেফ্রি, ফ্রিডম, হুইসপার, স্যাভলনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়। এসব প্যাডের এক প্যাকেট দাম ৬০ থেকে ৩০০ টাকার মতো।

স্যানিটারি প্যাড নারীর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। এটি সহজলভ্য করতে এসিআই ও স্কয়ারের মতো প্রতিষ্ঠান নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্কয়ার ও এসিআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বর্তমানে দেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বাজারের আকার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা এবং প্রতিবছর এটি প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।’

ফার্মেসি দোকানে স্যানিটারি প্যাড

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮ অনুসারে, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে ২৯ শতাংশ; ২০১৪ সালে যা ছিল ১৪ শতাংশ।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮’ অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে।

তবে প্যাড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যে অনুপাতে বাড়ার কথা ছিল, তা হয়নি। দেশে যে হারে নারীশিক্ষার হার ও কর্মসংস্থান বেড়েছে, সেই হারে প্যাডের ব্যবহার বাড়েনি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ।

স্যানিটারি প্যাড উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ২০১৪ সালে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার ২১ শতাংশের মতো ছিল। তা এখন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ, এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস, সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি), প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, বসুন্ধরা, আকিজ, প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানির স্যানিটারি প্যাড বাজারে পাওয়া যায়।

স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার বাড়ার কারণ হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘সচেতনতা, প্রচার, হাতের নাগালে পাওয়াসহ সরকারি–বেসরকারি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার কারণে প্যাড ব্যবহার বেড়েছে।’

এই কর্মকর্তার মতে, মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে পারলে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারও বাড়বে। তবে তিনি দাবি করেন, এখনও মেয়েরা প্যাড কিনতে গেলে অস্বস্তি বোধ করেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অসচেতনতা, লজ্জা, সহজলভ্য না হওয়ার কারণে এখনও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের হার কম। সচেতন নারীদের বক্তব্য- শহরের একজন নারীর জন্য দোকান থেকে টাকা দিয়ে প্যাড কেনা যতটা সহজ, গ্রামের একজন নারী যার বাজারে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজগামী কিশোরীদের (১৪-১৯ বছর) মধ্যে প্যাডের ব্যবহার ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশের মতো, আর জেলা শহরে প্যাডের ব্যবহার ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে গ্রাম এবং শহর এলাকাগুলোতে সামগ্রিকভাবে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ কিশোরী নিয়মিত স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে। প্যাড ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী মাঝেমধ্যে প্যাড আবার মাঝেমধ্যে কাপড় ব্যবহার করে। এছাড়াও নিয়মিত পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, আর নিয়মিত নতুন কাপড় ব্যবহার করে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব ছাড়াও দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকে এই প্যাড ব্যবহার করেন না। নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন জরুরি পণ্য হলেও এসব কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা আছে।

অবশ্য নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও স্যানিটারি প্যাডের দাম এখনও বেশি, তাই সাধারণ নারীরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না।

স্কয়ার ট্রয়লেটিজের তথ্য অনুযায়ী, যারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না তাদের ৯৭ শতাংশ সার্ভিক্যাল ইনফেকশনে ভোগেন। এই ইনফেকশন থেকে বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগেরও সৃষ্টি করতে পারে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
‘কমলা ভাসিন অ্যাওয়ার্ডের’ জন্য আবেদকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ
দক্ষ নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানে উদ্যোগী হবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়
হাজারীবাগে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বশেষ খবর
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির