X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ এসেছে স্বল্প আয়ের মানুষের বাজারেও

আসাদ আবেদীন জয়
৩০ মার্চ ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ২২:০০

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। উচ্চবিত্তরা নগরীর নামিদামি শপিংমল থেকে কেনাকাটা করলেও স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা রাস্তার পাশের ফুটপাতের বাজারগুলো। এ সব বাজারই এই মানুষগুলোর ঈদকে রাঙিয়ে তুলবে। নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন করবেন তারা।

ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন আয়ের মানুষরা ছিলেন বেতন-বোনাসের অপেক্ষায়। এই সময়ে এসে কেউ হয়তো বেতন-বোনাস পেয়েছেন, কেউ রয়েছেন অপেক্ষায়। যারা পেয়েছেন তারা শুরু করেছেন ঈদের কেনাকাটা। যারা পাননি তাদের অনেকেই মার্কেট ঘুরে দর-দাম দেখছেন। এতে জমে উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদের বাজার।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের পাশে বাজার রয়েছে। এরমধ্যে গুলিস্তানের ফুটপাতের বাজারটি অন্যতম। এখানে শিশুদের পোশাকসহ বড়দের শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামা, সালোয়ার-কামিজ, জুতা-মোজা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্টসহ নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। এখান থেকে পছন্দমতো কেনাকাটা করে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

পছন্দের ঈদ পোশাক কিনছেন ক্রেতারা

শুক্রবার (২৯ মার্চ) গুলিস্তান এলাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি ঘুরে স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটার চিত্র দেখা যায়।

ফুটপাতের এই বাজারে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কেউ গলা ফাটিয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন, কেউবা ডাকছেন হ্যান্ডমাইকে রেকর্ডেড কণ্ঠে। কেউ পণ্য বিক্রি করছেন এক দামে, কেউবা আবার করছেন দামাদামি। এভাবেই চলছে তাদের বেচাকেনা। বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে গুলিস্তানের ফুটপাতের ঈদের বাজার।

গুলিস্তানের ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন মো. রাসেল। তিনি বলেন, ‘সাধারণত যারা পোশাককর্মী বা দিনমজুরের কাজ করেন, তারা আমাদের এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। আবার মধ্যবিত্তরাও আসেন। অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ আছেন, যারা বেতনে কুলাতে পারেন না, আর্থিক সামর্থ্য কম। তারা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন।’

শিশুদের সঙ্গে নিয়ে এসে ঈদের জামা কিনে দিচ্ছেন অভিভাবকরা

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জুতা বিক্রি করেন ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ‘আমার বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। আাজ বন্ধের দিন হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। কয়েকদিন পর আরও বাড়বে।’

গুলিস্তানের ফুটপাতে পাঞ্জাবি বিক্রেতা হাসান বলেন, ‘আমার ভ্যানে শুধু পাঞ্জাবি আছে। দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।’ বেচাকেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে।’

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শার্ট বিক্রি করছিলেন মিলন। ঈদের বাজারে বেচাকেনার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ আসছে ভালোই, বিক্রিও হচ্ছে। কেউ কেউ আবার দর-দাম করে চলে যাচ্ছেন।’

পছন্দের প্যান্টের খোঁজে ক্রেতারা

এ সময় কাছে থাকা শার্টগুলো দেখিয়ে মিলন বলেন, ‘একবারে বেশি করে কিনে আনি। ভ্যানে বিক্রি করি। মার্কেটেও এই শার্টই আছে। সেখানে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি করা হবে। আমরা বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। সবাই ওখান থেকে কিনতে পারে না। যাদের সামর্থ্য কম তারা আমাদের কাছ থেকে কেনেন।’

মেয়েদের জামা বিক্রি করেন বেলায়েত হোসেন। তার কাছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের জামা আছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে, সেটা বলা যাবে না।’

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে স্বল্প আয়ের মানুষরা কেনেন। কিন্তু পুলিশ এসে আমাদের দিনে কয়েকবার উঠিয়ে দেয়। এভাবে ব্যবসা করবো কীভাবে? এক পক্ষ টাকা নিয়ে বসিয়ে দিয়ে যায়, আরেকপক্ষ এসে উঠিয়ে দেয়।’

সড়কে সাজিয়ে রাখা হয়েছে জুতার পসরা

গুলিস্তানের রাস্তার পাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে শিশুদের ফ্রক ৩০০-৭০০ টাকা, শিশুদের টিশার্ট ৬০-২০০ টাকা, প্যান্ট ৩০০-৫০০ টাকা, মেয়েদের ওয়ান পিস ৩০০-৫০০ টাকা, টু-পিস ৩৫০-৬০০ টাকা, শার্ট ২৫০-৫০০ টাকা, বড়দের জিনসের প্যান্ট ২৫০-৬০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৪০০-৬০০ টাকা, পাজামা ২৫০-৩০০ টাকা, শিশুদের জুতা ও স্যান্ডেল ১০০-৪০০ টাকা, বড়দের স্যান্ডেল ২৫০-৪০০ টাকা, মেয়েদের হ্যান্ডব্যাগ ২০০-৩০০ টাকা, বেল্ট ১০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন। কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউবা একা; আবার কেউ এসেছেন বন্ধুর সঙ্গে।

ইলেকট্রিশিয়ান বাবার সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছে শাহাদাত হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘১০ দিনের জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় বাবার কাছে এসেছি। ঈদের কেনাকাটা করবো। আজ শুধু ছোট বোনের জন্য দুইটা ফ্রক কিনেছি। আবার এসে বাবা-মা ও আমার জন্য কিনবো। দেখলাম বড়দের থেকে শিশুদের জামা-কাপড়ের দাম বেশি।’

পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতাদের ভিড়

দুই সন্তান, আট বছরের ইয়াসির ও পাঁচ বছরের সুমাইয়াকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বাসের চালক। সে কেনাকাটার সময় পায় না। তাই আমিই সন্তানদের নিয়ে বের হয়েছি। ছেলের জন্য গেঞ্জি আর প্যান্ট কিনেছি, মেয়ের জন্য ফ্রক।’

মেয়ের জন্য জামা কিনতে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখছিলেন ছাপাখানায় কাজ করা মো. জাহাঙ্গীর। দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছিলেন না। তার ভাষ্য, ‘ছোটদের একটা জামার দাম যদি ৬০০ টাকা বলে তাহলে কিনবো কীভাবে?’

/আরকে/আরআইজে/
সম্পর্কিত
তীব্র গরমে ক্রেতা সংকট, বন্ধ ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান
ফুটপাত দখলকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
ফিতরা-জাকাতের নামেও প্রতারণা
সর্বশেষ খবর
আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার
আ.লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ির সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী