X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থনীতি সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস কারখানা চালু

গোলাম মওলা
২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৯:০০আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৩১

স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় কাজ করছেন পোশাক শ্রমিকরা, ছবি: সংগৃহীত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে করোনার প্রাদুর্ভাবের মাঝেই সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশের গার্মেন্ট খাতের মালিকরা। সরকার ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রথম দিন রবিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৪০টি কারখানা খোলা ছিল। সোমবার (২৭ এপ্রিল) নতুন করে ৬০টির মতো কারখানা খুলেছে। তবে প্রস্তুতি না থাকায় বাকি কারখানা খুলতে পারেননি মালিকরা।

জানা গেছে, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ৪৮০টি কারখানা রবিবার থেকে চালু হয়েছে। এসব এলাকায় বিকেএমইএ’র ১২১টি ও বিটিএমএ’র সদস্যভুক্ত ৫৮টি বস্ত্রকল খুলেছে।

বিজিএমইএ’র তথ্য বলছে, সোমবার খুলেছে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ কারখানা। যদিও সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে প্রথম থেকেই কিছু কারখানা কাজ চালিয়ে আসছিল। তবে সরকার ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ালেও ‘অর্থনীতি সচল’ রাখতে পোশাক মালিকরা আর অপেক্ষা করেননি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যেসব কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছে, কেবল তারাই খুলছে। তারাই খুলবে।’ কোনও শ্রমিক যাতে অসুস্থ না হন, সে ব্যাপারে সব মালিক সতর্ক আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে, শ্রমিকদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার স্বার্থে, আমরা কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, এই করোনা কবে যাবে, কেউ জানেন না। শোনা যাচ্ছে, আগামী শীতেও এর প্রকপ বাড়বে। ফলে অর্ডার ধরে রাখতে আমাদের কারখানা খোলার কোনও বিকল্প নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে গার্মেন্ট কারখানার সব মালিক একমত হয়েছেন। ধাপে ধাপে তারা দেশের সব কারখানা চালু করবেন। যদিও চলতি সপ্তাহে একেবারেই সীমিত পরিসরে উৎপাদন চলবে। পরবর্তীতে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে কারখানাগুলো।

এদিকে পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকের তথ্য দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে হটলাইন। পাশাপাশি চারটি জোন ভাগ করে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে, চালু হওয়া কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা, তা দেখার জন্য তাদের একটি টিম মনিটর করছে। মনিটরিং টিমের সদস্যরা রবিবার চালু হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে শতাধিক কারখানার ওপর তদারকি করেছেন, এসব কারখানায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মনিটরিং টিমের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিজিএমইএ তালিকাভুক্ত সদস্য কারখানায় নিয়মের বাইরে চলার কোনও দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে কারখানাগুলো শুধু তাদের শ্রমিকদের কল্যাণ বিবেচনা করে কাজ চালু রাখবে। আমরা শ্রমিকদের কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং তার জন্য নিরলসভাবে কারখানাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানার নাম স্নোটেক্স। কারখানাটিতে রবিবার দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব মেনে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে শ্রমিকদের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। স্নোটেক্সের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ভেতরে বসার ব্যবস্থা বদলেছে। দূরে দূরে বসতে হচ্ছে তাদের।

মিরপুরের কালশীর ২২ তলা এলাকার একটি গার্মেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জানান, এই কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ২০০ জন। কিন্তু তাদের অর্ধেকও আসেননি। যেহেতু লোক কম, তাই কর্মীদের ৬ ফুট দূরে দূরে বসানো হচ্ছে।

এদিকে সাভার ও আশুলিয়ায় চালু হওয়া কারখানাগুলোতেও করোনা প্রতিরোধে কর্মীদের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করানো হচ্ছে। তবে দূরত্ব নিশ্চিত না করে শুধু মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেই শ্রমিকদের কাজে যোগদান করানোরও অভিযোগ আছে অনেক কারখানার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশুলিয়ার স্টারলিংসহ বেশ কিছু কারখানা সকাল থেকেই চালু করা হয়। তবে এসব কারখানায় শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে স্টারলিং কারখানার অর্ধেক শ্রমিক কাজ না করে বের হয়ে যান।’ এছাড়া কারখানার বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।

এদিকে চাকরি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে করোনার এই দুর্যোগের সময়ও শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ডিউটি করছেন বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালিকদের স্বার্থে শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। একদিকে বলছে গ্রামে থাকা শ্রমিককে আসতে হবে না, আবার অন্যদিকে শ্রমিকদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।’

নাজমা আক্তার বলেন, ‘কারখানা খোলার ব্যাপারে আমাদের মতামত চেয়েছিল। আমরা বলেছি, এই পরিস্থিতিতে কারখানা খোলার দরকার নেই। কিন্তু তারা শোনেনি।’

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যায়ক্রমে সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেকোনও মালিক ইচ্ছে করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার কারখানা চালু করতে পারবেন।’ তিনি উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একটি কারখানাও খোলা হবে না।

এর আগে শনিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রুবানা হক বলেন, ‘পোশাক শিল্পের ৮৬৫টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি আছে।’

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কারখানাগুলো চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৮ এপ্রিল থেকে পুরোপুরি খোলা হবে আশুলিয়া থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত সব কারখানা। নারায়ণগঞ্জসহ কাঁচপুর, রূপগঞ্জ এলাকার কারখানা চালু হবে ৩০ এপ্রিল থেকে। ২, ৩, ৪ মে টঙ্গী থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত কারখানাগুলো চালু করা হবে।’

তবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শুধু নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পল সেকশন, ২ মে কাটিং এবং ৩ মে থেকে সুইং (সেলাই) সেকশন চালুর পরামর্শ দিয়েছে বিজিএমইএ।

অন্যদিকে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘স্যাম্পল, নিটিং ও ডায়িং সেকশন চালু করতে আমরা সব সদস্য কারখানাকে নির্দেশনা দিয়েছি। এসব সেকশনে খুবই কমসংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ফলে খুব সহজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে। অন্যদিকে সুইংসহ (সেলাই) অন্যান্য সেকশন ১ মে’র পর পরিস্থিতি বুঝে চালু করতে পারবে কারখানাগুলো।’

প্রসঙ্গত, ব্যাপক সমালোচনার পর ৬ এপ্রিল সরকারের নির্দেশনা মেনে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সরকার ঘোষিত ছুটি বাড়লে তার সঙ্গে সমন্বয় করে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় দুই সংগঠন।

এদিকে কারখানাগুলো চালু রাখতে খসড়া প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। ১৭ পৃষ্ঠার নির্দেশনায় বিজিএমইএ প্রাথমিকভাবে কারখানার কাছাকাছি বসবাসকারী শ্রমিকদের কাজে নিয়োগের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রতি গ্রাম থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া, কারখানাগুলোর ভেতরে প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে। বিজিএমইএ পরামর্শ দিয়েছে যে কারখানাগুলোর প্রবেশমুখে হাত ধোয়া, জুতা ও যানবাহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করা এবং শরীরের তাপমাত্রা স্ক্যান করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক