আবারও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর ফলে দ্বিতীয়বারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়ালো।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের শেষে প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে পরের ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরের শেষে যা ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বরের শেষে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। যা এই অংক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট ৩২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঋণের টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোর বিশেষ কোনও উদ্যোগ না থাকায় খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা ঋণ নিয়েছে তারা ফেরত দিতে আগ্রহী নয়, আবার
সরকারেরও খেলাপি কমানোর বিষয়ে তেমন সদিচ্ছা নেই।’
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘খেলাপি হলে কোনও শাস্তি হয় না, বরং পুরস্কৃত করা হয়, যার ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’